জুলাইয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়: জাতিসংঘ
Published: 26th, February 2025 GMT
গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। এ সময় কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “.
এতে আরো বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যেই খুব কাছে থেকে তাদের গুলি করে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওএইচসিএইচআরের জেনেভা কার্যালয় থেকে ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী সামরিক রাইফেল ও স্বয়ংক্রিয় পিস্তল থেকে জনতার ওপর প্রাণঘাতী গুলি চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মাথা ও শরীর লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের শরীরের এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে শটগানের গুলি ছোড়ে। সাধারণত একাধিক বন্দুকধারী কয়েক রাউন্ড করে গুলি ছোড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “যারা হামলা চালাতেন, তারা ও তাদের কমান্ডাররা লক্ষ্যবস্তুতে থাকা জনতার কিছু সংখ্যক যেন মারা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন।”
আরো বলা হয়, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আত্মরক্ষা বা অন্যদের প্রতিরক্ষা হিসেবে দেখানোর কোনো যুক্তি নেই। কারণ, হতাহতরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। তারা সম্পত্তি ভাঙচুর করছিলেন না বা দাঙ্গাকারীও ছিলেন না। তারা কোনো হুমকিও ছিলেন না।”
ওএইচসিএইচআর জানায়, জুলাই মাসের বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক ও পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, কারারুদ্ধতা ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুযায়ী, একটি বেসামরিক জনসংখ্যার বিরুদ্ধে পরিচালিত ব্যাপক বা পদ্ধতিগত আক্রমণই মানবতাবিরোধী অপরাধ।
ওএইচসিএইচআর জানায়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনের সময় নির্দিষ্ট কিছু বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা, নির্যাতন, কারাদণ্ড ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল, যা রোম সংবিধির ধারা ৭ এর আওতায় পড়ে।
এতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকালে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা তাদের হেফাজতে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে।
ওএইচসিএইচআর দাবি করেছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও পদ্ধতিগত আক্রমণ একটি সরকারি নীতি অনুসরণ করে পরিচালিত হয়েছিল বলে তাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিক্ষোভকে সহিংস ও বেআইনিভাবে দমন এবং ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন ও নির্দেশনা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরিষেবা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বও সেই নীতি অনুসরণে সংঘটিত অপরাধ গোপন করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালায়, ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে এবং মিডিয়া, ভুক্তভোগী, ভুক্তভোগীর পরিবার ও আইনজীবীদের ভয় দেখায়।”
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওএইচস এইচআর ব হ ন র সদস য ম নবত ব র ধ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে আমরা কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে-একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ব্যবস্থার চারপাশে একটি বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। লক্ষ্যটা পরিষ্কার-এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সূচনালগ্ন থেকেই জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। আমি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও সংহতি এবং এ বছরের মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য ধন্যবাদ জানাই।আমি হাইকমিশনার ভোলকার টার্ক, ওএইচসিএইচআর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্য, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিস গুইন লুইস এবং অবশ্যই আমার বন্ধু সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা মিস হুমা খানকে তাদের অসাধারণ ও ঐতিহাসিক অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।”
আরো পড়ুন:
শুধু প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন নয়, নতুন করে গড়তে হবে দেশ
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: আহতদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, “আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সংস্কার এজেন্ডার পাশাপাশি, আমরা গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জন্য আইনি জবাবদিহি অনুসরণ করছি। কিন্তু বিচার মানে শুধু শাস্তি নয়।ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর কখনও তার নিজের জনগণকে দমন, নীরব বা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই বিগত বছরের কথা চিন্তা করলে আমরা স্মরণ করি-সেই সব মানুষকে, যারা সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের পথ প্রশস্ত করেছে।তারা একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে, যার মূলে রয়েছে আশা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক নবায়ন। আমাদের সবচেয়ে দুঃখময় সময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অব্যাহত অংশীদারত্ব প্রত্যাশা করছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই আমি মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে (ওএইচসিএইচআর) ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতাম যে, সত্যের একটি নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য হিসাব কেবল ন্যায়বিচারের জন্য নয়, প্রতিকারের জন্যও অপরিহার্য।”
তিনি বলেন,“২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে নৃশংসতার বিস্ময়কর-মাত্রা প্রকাশ করা হয়েছে।মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবেদনে সহিংসতাকে পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পদ্ধতিগত, নির্দেশিত এবং সমন্বিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।এতে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে জরুরি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনসহ আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আমরা হাইকমিশনারের কার্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা কেবল এই নির্যাতনগুলো নথিভুক্ত করেনি, বরং এ ধরনের লঙ্ঘন যাতে আর কখনো না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে একটি বিস্তৃত সুপারিশ প্রদানের জন্য।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা এই সুপারিশগুলো অন্তঃস্থল থেকে গ্রহণ করেছি-অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য নয়, বরং নিজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে। দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই আমাদের সরকার ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি এবং জোরপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সম্মত হয়েছি। এ মাসের শুরুতে আমরা ঢাকায় একটি মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই মিশন সংস্কার উদ্যোগের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।”
ঢাকা/এসবি