পুকুরে মাছ, পাড়ঘেঁষে সবজি ও ফলের বাগান
Published: 27th, February 2025 GMT
পুকুরে ছাড়া হয়েছে রুই, পাঙাশ, কাতলসহ নানা জাতের মাছ। পাড়ঘেঁষা জমি কেটে করা হয়েছে লম্বা ঢিবি। সেখানে আবাদ করা হয় টমেটো, লাউ, মরিচসহ মৌসুমি সবজি। একটু ওপরে আম, পেঁপে, কলা, বরইসহ হরেক রকম ফলের গাছ।
সমন্বিত ফসল আবাদের এ চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হরিহর ও নারিশ্চা বাজারে। এ গ্রামগুলো ছাড়াও কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষি অফিসের সহায়তায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্রজেক্ট। কাজ করছেন ১২৩ কৃষক। ৯ হেক্টেরজুড়ে থাকা ৯৮টি পুকুরে মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। সবজি আবাদ হযেছে ২ হাজার ৮৭৫ হেক্টরে। এসব প্রজেক্টে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে শত শত শ্রমিকের পরিবারেও। থেমে নেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষাবাদও।
রাঙ্গুনিয়া চৌমহনী মাছের আড়তের এক মালিক নেজাম উদ্দিন। তিনি জানান, সমন্বিত মাছের প্রজেক্ট থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ মণ মাছ আসে আড়তে, যার বাজারমূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মাছ চাষ করা হয়। সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার মাছের চাহিদা বাড়ছে।
বছরে ৫ লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন পদুয়া ইউনিয়নের হরিহর গ্রামের কৃষক শামসুল আলম। ১১টি পুকুর ঘিরে ৭২টি আম্রপালি গাছ আছে তাঁর। প্রতিটি গাছের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় আবাদ করা হয়েছে হাইব্রিড মরিচ, টমেটো, লাউ, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল। প্রজেক্টের কাজে তাঁকে সহায়তা করেন ১৩ শ্রমিক। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার ধনিয়া পাতা, ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ২ লাখ টাকার। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মাছ, সবজি ও ফল থেকে বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আয় হয় তাঁর। মাছ, ফল, ফসল বিক্রির পর উদ্বৃত্ত পণ্য প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দেন এই কৃষক।
শামসুল আলম জানান, কৃষিকাজ তাঁর শুধু পেশা নয়, নেশাও। কৃষি অফিস এ কাজে যথেষ্ট সহায়তা করে। তাদের সহায়তায় চাষের আওতায় বাড়ানোর ইচ্ছে আছে তাঁর।
শামসুল আলমের প্রজেক্টে কাজ করেন আমির হোসেন। দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি পান। এ আয় দিয়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যায়।
আমির হোসেন বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। প্রজেক্টে কাজ করে তা কাটিয়ে উঠেছি। দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। কিছু টাকা জমিয়েছি। আশা আছে সমন্বিত আবাদে যোগ দেব।
একই ইউনিয়নের নারিশ্চা বাজারসংলগ্ন এলাকায় চারটি পুকুর লিজ নিয়ে সমন্বিত কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন ছমির উদ্দিন। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে মালটা, লেবু, জাম্বুরা, কমলা, পেঁপে আবাদ করেছেন। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লালশাকসহ নানা সবজির ফলন এসেছে। এ বছর ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। ফল ও ফসল বিক্রি করেছেন লাখ টাকার। রমজান এলে বিক্রি আরও বাড়বে। সমন্বিত ফসল আবাদে সব মিলিয়ে ভালোই উপার্জন হচ্ছে এই কৃষকের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, মিশ্র ফসল আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। তাদের উদ্যোগে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। কৃষকসহ নতুন উদ্যোক্তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমন ব ত কর ছ ন ক জ কর অফ স র
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান
বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়
এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।
তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।
এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।
আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।
এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।
ঢাকা/আমিনুল