যে ডালপুরির টানে ছুটে আসেন দূরদূরান্তের ভোজনরসিকেরা
Published: 27th, February 2025 GMT
ডালপুরি কেটে কয়েক টুকরা করে প্লেটে সাজিয়ে রাখা। ওপরে স্থানীয় মৌসুমি সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি আর পাতলা ডালের মিশেল। কাঁটাচামচ দিয়ে সেই ডালপুরির টুকরা দেদার খাচ্ছেন ভোজনরসিকেরা। সুস্বাদু এই ডালপুরির টানে বিভাগীয় শহর সিলেটসহ দূরদূরান্তের অনেকে ছুটে আসেন।
ডালপুরির এই রেস্তোরাঁটির অবস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরবাজার এলাকায়। বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে গ্রামীণ এই হাটের দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। ‘মায়া রেস্টুরেন্ট’ নামের এ রেস্তোরাঁয় ডালপুরি ছাড়াও শিঙাড়া, পেঁয়াজু, সমুচা, পরোটা, চা আর ভাত-তরকারি বিক্রি হয়। তবে বিশেষভাবে পরিবেশিত ডালপুরিই রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয় খাবার। ডালপুরির কারণেই মূলত রেস্তোরাঁটি পরিচিতি পেয়েছে।
মায়া রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী হোসেন মিয়া (৪২)। বাড়ি কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর গ্রামে। ১৯৯৫ সাল থেকে ব্যবসা করছেন। শুরুতে বাজারে টংদোকান দিয়ে চা, বিস্কুট ও পান বিক্রি করতেন। পরে রেস্তোরাঁ চালু করেন। হোসেন জানান, টুকেরবাজার উপজেলার একটি গ্রামীণ হাট। রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন গড়ে ৬০০টি ডালপুরি বিক্রি হতো। মাঝখানে মালিকানাগত জটিলতায় রেস্তোরাঁটি মাসখানেক বন্ধ ছিল। এতে বেচাকানায় ভাটা পড়ে। এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে ডালপুরি বিক্রি। তবে ধীরে ধীরে আবার ক্রেতারা ফিরছেন।
রেস্তোরাঁ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কয়েক মাস আগে রেস্তোরাঁর নাম ছিল ‘ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট’। তখন এর একক স্বত্বাধিকারী ছিলেন হোসেন মিয়া। পরে আরেকজনকে ব্যবসায় সঙ্গী করে রেস্তোরাঁটিকে আধুনিক করে ‘মায়া রেস্টুরেন্ট’ নাম দিয়ে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেন হোসেন। তবে আগের মতো ব্যবসা জমাতে পারেননি। লাভের বদলে ব্যবসায় বরং ক্ষতি হতে থাকে। এর মধ্যে অন্য স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে মতবিরোধও দেখা দেয়। এ অবস্থায় হোসেন পুনরায় এককভাবে ব্যবসা শুরু করেন। এ কারণে মাসখানেক রেস্তোরাঁটি বন্ধও ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রেস্তোরাঁটি আবার চালু হয়।
ডালপুরি খেতে আসা ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব শাহ মো.
রেস্তোরাঁর কর্মচারী বাবুল আহমদ (সুজন) বলেন, ‘ভাত-তরকারি, নাশতা—সবকিছুই বিক্রি হয়। তবে ডালপুরির প্রতি মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।’ তিনি জানান, রেস্তোরাঁয় ছয়জন কর্মচারী আছেন। এর মধ্যে দুজন পাচক। এ ছাড়া দোকানের মালিকও প্রায়ই ডালপুরিসহ অন্য খাদ্যসামগ্রী রান্না করেন। স্বাদের কারণেই বারবার ভোজনরসিকেরা এখানে ভিড় করেন।
রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভাগীয় শহর সিলেটেরও অনেকে রেস্তোরাঁর ডালপুরির খবর জানেন। দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় অনেকে শখের বশেও সেখানে ডালপুরির স্বাদ নিতে আসেন। এ ছাড়া ভোলাগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে আসা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকেরাও এখানে ভাত-তরকারি আর নাশতার পাশাপাশি ডালপুরির স্বাদ নেন। কেউ কেউ আবার ডালপুরি, সবজি পার্সেল করে নিয়ে যান।
রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী হোসেন মিয়া জানান, স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য সন্তানেরা পড়ালেখা করছে। রেস্তোরাঁর আয়ে একসময় রমরমা সংসার চললেও এখন সেই দিন আর নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও পাল্লা দিয়ে আয় বাড়ছে না। এখন যা আয় হয়, তা দিয়ে রেস্তোরাঁ পরিচালনায় ব্যয় মিটিয়ে খুব একটা লাভ থাকে না। তাই কোনো রকমে দিন চলছে।
প্রতি মাসে রেস্তোরাঁর ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং বৈদ্যুতিক বিল বাবদ ৫ হাজার টাকা এবং ছয়জন কর্মচারীকে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানালেন হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায় আর খুব একটা পোষায় না। যাবতীয় খরচ শেষে লাভ খুব বেশি থাকে না। কোনোমতে টিকে আছি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।