করণ মালহোত্রা নির্মিত সিনেমা ‘অগ্নিপথ’। সঞ্জয় দত্ত, হৃতিক রোশান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত সিনেমাটি ২০১২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এ সিনেমায় ব্যবহার করা হয় ‘চিকনি চামেলি’ গানটি। এটি মূলত, আইটেম গান।

‘চিকনি চামেলি’ গানে আইটেম কন্যা হিসেবে পারফর্ম করেন ক্যাটরিনা কাইফ। গানটিতে কণ্ঠ দেন শ্রেয়া ঘোষাল। ক্যাটরিনার নাচের হিল্লোল আর শ্রেয়ার কণ্ঠে পাগল করা সুর এখনো দর্শক হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিন্তু প্রায় ১৩ বছর পর শ্রেয়া জানালেন, এ গান নিয়ে বিব্রত তিনি। ইউটিউবার লিলি সিংকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন শ্রোতাপ্রিয় এই শিল্পী।    

শ্রেয়া ঘোষাল বলেন, “আমার হাতে গোনা কয়েকটি গান আছে, যেগুলো চিকনি চামেলির মতো রাঞ্চি হতে পারে। যৌন আবেদন এবং সেক্সি হওয়া বা নিজেকে অবজেক্টিফাইড করার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম রেখা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি এখন এই বিষয়ে কিছুটা সচেতন হয়েছি। কারণ গানের কথা না বুঝেই আমি অল্প বয়েসি মেয়েদের এটি গাইতে দেখেছি।”

বাচ্চারা যখন গানটি কণ্ঠে তুলেন কিংবা গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন, তখন বিব্রত বোধ করেন শ্রেয়া। এ তথ্য উল্লেখ করে এই সংগীতশিল্পী বলেন, “এটি একটি মজার গান, তাই তারা এটিতে নাচছে। তারা আমার কাছে এসে বলে, ‘আমি আপনার গান ভালোবাসি। আমি কি আপনার সামনে এই গানটি গাইতে পারি?’ এসব কথা শুনে আমি খুব বিব্রত বোধ করি। ছোট্ট একটা মেয়ে, যার বয়স ৫-৬ বছর, সে এই গান গাইছে এবং সেটা ভালো শোনাচ্ছে না। আমি এটা চাই না, তাই এ বিষয়ে সচেতন হয়েছি।”

শ্রেয়া ঘোষাল মনে করেন, নিজের আবেদনময়ী শরীরি সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলা ভুল নয়। তার ভাষায়, “আমি কতটা আবেদনময়ী তা নিয়ে আনন্দের সঙ্গে কথা বলা ভুল নয়। কিন্তু এটি (গান) এভাবে লেখবেন না। সম্ভবত, যদি কোনো নারী এটি লিখতেন, তবে আরো অমায়িকভাবে লিখতেন। এটা শুধু দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আমাদের সমাজে, বিশেষ করে ভারতে, কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি জানেন আমাদের চারপাশে কী ঘটছে।”

মানুষের মনে ভীষণ প্রভাব ফেলতে পারে গান ও চলচ্চিত্র। তা জানিয়ে এই গায়িকা বলেন, “চলচ্চিত্র এবং গান আমাদের সংস্কৃতির বড় একটি অংশ। বহু মানুষের জীবন এতে প্রভাবিত হয়। কখনো কখনো কিছু গান ইতিহাসেও ঢুকে যায়। আমি এই ধরনের ইতিহাসের অংশ হতে চাই না।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ