পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গড়ে ওঠা প্রায় অর্ধশত অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব দোকান উচ্ছেদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ও এস্টেট দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো.

রজব আলী উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচন কবে? যা বলছে ঢাবি প্রশাসন

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট জায়গায় শৃঙ্খলিত দোকান স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর, ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনের সামনে, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন, শহীদুল্লাহ্ কলা ভবন, মেয়েদের হলগুলোর সামনে, পুরাতন ফোকলোর চত্বরের পাশে, ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে, কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম, আমতলা, স্টেডিয়াম মার্কেট, বিজ্ঞান ভবনগুলোর আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. রজব আলী বলেন, “ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষার্থে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। এর আগে আমরা দুইবার এসব দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান ও অভিযান পরিচালনা করেছি। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমরা মাইকিং ও চিঠি দিয়ে তাদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলি।”

তিনি বলেন, “নির্ধারিত সময় শেষে অনেকেই সরিয়ে নিয়েছে। তবে যেসব দোকান এখনও রয়ে গেছে, সেগুলো আজ আমরা উচ্ছেদ করেছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “ক্যাম্পাসে যারা অবৈধ দোকান পরিচালনা করছেন, তাদের একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তারা সরে না যাওয়ায় এস্টেট দপ্তরের সঙ্গে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রতিদিন চলে যাবে— এমন শর্তে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা কিছু জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দোকান স্থাপন করব, যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বজায় রাখবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অব ধ দ ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ