‘যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে?’—ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবার আক্ষেপ
Published: 27th, February 2025 GMT
‘বিচার তো পাইছিলাম, তাইলে এমন হইল ক্যানে? যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে? সাড়ে ৮ বছর না যাইতেই ছাড়া পাইল।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৬ সালে দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা। জনন অঙ্গ কেটে ধর্ষণের কারণে শিশুটির মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিকবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনো প্রস্রাব ঝরে তার। শিশুটির বয়স এখন ১৩ বছর।
২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর এক প্রতিবেশীর একই বয়সী মেয়ের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। পরদিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটির বাবা ওই বছর ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুল ইসলামের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঘটনার ৮ বছর ৪ মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম।
দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাইফুল ইসলামের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সরকারি কৌঁসুলি নাজমা পারভীনের (জেবা) সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষ জামিন নিয়েছে হাইকোর্ট থেকে। আসামি ‘দীর্ঘদিন হাজতবাস’ করেছেন এই কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে জামিন হলেও মামলা চলমান থাকবে। এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
এ ধরনের অপরাধ করেও এভাবে অপরাধীর কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন শিশুটির কৃষক বাবা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহে সন্ধ্যায় বাজারে গিয়ে শোনেন সাইফুলের জামিন হয়ে গেছে। এরপর রাত আটটার সময় তাঁর চোখের সামনে দিয়েই মাইক্রোবাসে করে গ্রামের বাড়িতে আসে সাইফুল। আসামি দেখলে তীব্র ক্ষোভ হয় জানিয়ে শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার বাসার কাছেই বাসা। চোখের সামনে সে ঘুরে বেড়ায়। আর আমার মেয়ে, মেয়ের মা ঘর থেকে কম বের হয়। মেয়েটা চুপ হয়ে গেছে। মনটা ভারী করে থাকে।’ সব সময় প্রস্রাব ঝরে, তাই মেয়ে স্কুলে যায় না বলে জানান বাবা।
ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বেসরকারি সংগঠন ‘আমরাই পারি’র প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটার বিচার নিশ্চিত করার জন্য ‘আমরাই পারি’সহ ছয়টি সংগঠন ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছিল। কাজটা দিনাজপুর থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা পায় মেয়েটি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর মেয়েটির বাবা–মা আর যোগাযোগ রাখছিলেন না। এর মধ্যে একদিন ফোন করার পর মেয়েটির মা জানালেন, মেয়ে সারাক্ষণ প্রস্রাব ঝরে। সারা দিন কাপড় ধুতে হয়।
জিনাত আরা হক বলেন, ‘এই ঘটনা জানার পর আমরা মেয়েটিকে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। বুয়েটের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসা সহায়তায় হাত বাড়ান। একাধিকবার অস্ত্রোপচারের পরও মেয়েটির প্রস্রাব ঝরা বন্ধ হয়নি।’
দোষী সাব্যস্ত ধর্ষককে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে জিনাত আরা হক বলেন, ছয় বছরের চেষ্টায় নিম্ন আদালত (দিনাজপুরে) থেকে রায়টি পাওয়া গিয়েছিল। মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় দিনের পর দিন আদালতে বসে থাকত। শুনানি হতো না। বিচারের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। ওই সময় উচ্চ আদালত মামলাটি কেন দ্রুতগতিতে হবে না, তা জানতে চেয়ে আদেশ জারি করেন। তিনি বলেন, এভাবে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বের হয়ে যাওয়ার মানে হলো পরিবারটির জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া। এ ধরনের ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যাবে। মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। আর বিচার হবে না, এই ভেবে অপরাধীরা বিশেষ করে ধর্ষকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এরই মধ্যে তিনবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি করেন। তাঁর দাবি, ২০২০ সালের নির্বাচনেও তিনি জিতেছিলেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি এই দাবি করেছেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলায়, ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করে আসছেন ট্রাম্প। ওই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার মিশিগানের সমাবেশে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, বাইডেনের আমলেও তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মঙ্গলবার সমাবেশে কিছু সমর্থক ট্রাম্পকে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান। তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা যদি ধরেন, আমরা আসলে এরই মধ্যে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছি। মনে রাখবেন, আমি কিন্তু জয় পছন্দ করি। আমি সেই তিনটি জয়ই পছন্দ করি, যা আমরা নিঃসন্দেহে পেয়েছিলাম। তবে, শুধু মাঝের মেয়াদের ফলাফলটা আমি পছন্দ করি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী কেউ দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন না। ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভ করেন। পরে ২০২০ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ওই নির্বাচনের বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প।ট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ মার্কিন, অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে
আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ মার্কিন, অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে১৩ ঘণ্টা আগেচলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কীভাবে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, সে বিষয়ে ট্রাম্প গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, ‘এটা করার কিছু উপায় আছে।’ মঙ্গলবারের বক্তৃতার শুরুতে ট্রাম্প ঠিকঠাকই বলেন, আমি মিশিগানে দুইবার জিতেছি। কিন্তু পরেই তিনি যুক্ত করেন, ‘আসলে আমরা তিনবার জিতেছি।’ ট্রাম্প মিশিগানে ২০১৬ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে বাইডেনের কাছে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে দেড় লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।
আরও পড়ুনট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় কতটা বাড়ল১২ ঘণ্টা আগে