‘বিচার তো পাইছিলাম, তাইলে এমন হইল ক্যানে? যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে? সাড়ে ৮ বছর না যাইতেই ছাড়া পাইল।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৬ সালে দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা। জনন অঙ্গ কেটে ধর্ষণের কারণে শিশুটির মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিকবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনো প্রস্রাব ঝরে তার। শিশুটির বয়স এখন ১৩ বছর।

২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর এক প্রতিবেশীর একই বয়সী মেয়ের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। পরদিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটির বাবা ওই বছর ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুল ইসলামের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঘটনার ৮ বছর ৪ মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম।

দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাইফুল ইসলামের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সরকারি কৌঁসুলি নাজমা পারভীনের (জেবা) সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষ জামিন নিয়েছে হাইকোর্ট থেকে। আসামি ‘দীর্ঘদিন হাজতবাস’ করেছেন এই কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে জামিন হলেও মামলা চলমান থাকবে। এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।

এ ধরনের অপরাধ করেও এভাবে অপরাধীর কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন শিশুটির কৃষক বাবা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহে সন্ধ্যায় বাজারে গিয়ে শোনেন সাইফুলের জামিন হয়ে গেছে। এরপর রাত আটটার সময় তাঁর চোখের সামনে দিয়েই মাইক্রোবাসে করে গ্রামের বাড়িতে আসে সাইফুল। আসামি দেখলে তীব্র ক্ষোভ হয় জানিয়ে শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার বাসার কাছেই বাসা। চোখের সামনে সে ঘুরে বেড়ায়। আর আমার মেয়ে, মেয়ের মা ঘর থেকে কম বের হয়। মেয়েটা চুপ হয়ে গেছে। মনটা ভারী করে থাকে।’ সব সময় প্রস্রাব ঝরে, তাই মেয়ে স্কুলে যায় না বলে জানান বাবা।

ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বেসরকারি সংগঠন ‘আমরাই পারি’র প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটার বিচার নিশ্চিত করার জন্য ‘আমরাই পারি’সহ ছয়টি সংগঠন ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছিল। কাজটা দিনাজপুর থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা পায় মেয়েটি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর মেয়েটির বাবা–মা আর যোগাযোগ রাখছিলেন না। এর মধ্যে একদিন ফোন করার পর মেয়েটির মা জানালেন, মেয়ে সারাক্ষণ প্রস্রাব ঝরে। সারা দিন কাপড় ধুতে হয়।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘এই ঘটনা জানার পর আমরা মেয়েটিকে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। বুয়েটের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসা সহায়তায় হাত বাড়ান। একাধিকবার অস্ত্রোপচারের পরও মেয়েটির প্রস্রাব ঝরা বন্ধ হয়নি।’

দোষী সাব্যস্ত ধর্ষককে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে জিনাত আরা হক বলেন, ছয় বছরের চেষ্টায় নিম্ন আদালত (দিনাজপুরে) থেকে রায়টি পাওয়া গিয়েছিল। মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় দিনের পর দিন আদালতে বসে থাকত। শুনানি হতো না। বিচারের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। ওই সময় উচ্চ আদালত মামলাটি কেন দ্রুতগতিতে হবে না, তা জানতে চেয়ে আদেশ জারি করেন। তিনি বলেন, এভাবে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বের হয়ে যাওয়ার মানে হলো পরিবারটির জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া। এ ধরনের ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যাবে। মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। আর বিচার হবে না, এই ভেবে অপরাধীরা বিশেষ করে ধর্ষকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন

নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।

সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।

১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।

সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।

ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।

ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান

ওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।

২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।

গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।

ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।

তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।

আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন