চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে প্রশাসনকে চাপ দিতে ‘অনুগত’ ছাত্রদের বলেছিলেন দুজন সহকারী প্রক্টর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এই মেসেজের (বার্তা) চারটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে এটি নিয়ে সমালোচনা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইরাল হওয়া এসব স্ক্রিনশট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে দিয়েছিলেন দুই সহকারী প্রক্টর। ওই ছাত্র একটি ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রথম আলো ওই ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এই মেসেজগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাঁর দাবি সহকারী প্রক্টর একই ধরনের মেসেজ আরও কয়েকজনকে দিয়েছেন।

ভাইরাল হওয়া এসব স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ এক শিক্ষার্থীকে কর্তৃপক্ষের গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির তথ্য পাঠিয়েছেন। এই দুটি তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই ১১ ছাত্রীসহ ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এসব তথ্য পাঠিয়ে সহকারী প্রক্টর বলেছিলেন, ‘চাপ দাও, দাবি আদায় করো।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায় এটি ৬ ফেব্রুয়ারির কথোপকথন।

আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায় নুরুল হামিদ লিখেছেন, ‘তোমরা আগামীকাল কঠিন কর্মসূচি দাও। অন্তত যেন প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে হল থেকে বহিষ্কার করে দেয়।’ আরেকটিতে দেখা যায়, এক ছাত্রীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়ে সহকারী প্রক্টর বলছেন, ‘এদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিতে প্রশাসনকে চাপ দাও। প্রক্টর অফিস ঘেরাও করো। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।’ এই দুটিও ৬ ফেব্রুয়ারির পাঠানো বার্তা বলে প্রথম আলোকে এক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন। আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ছাত্রীদের নাম ছবি ও শিক্ষাবর্ষ পাঠিয়েছেন। এটি ১২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এসবের সমালোচনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টররা এভাবেই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মব তৈরির জন্য কতিপয় ছাত্রকে ফুঁসলেছেন। প্রক্টরিয়াল বডির নাম পরিবর্তন করে ‘‘উইচ হান্টিং ইউনিট” দিলে আরও যথোপযুক্ত হয়।’

স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ ও কোরবান আলীর মুঠোফোনে অন্তত পাঁচবার ফোন করা হয়েছে। তবে তাঁরা কেউই সাড়া দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফও ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো.

কামাল উদ্দিন (প্রশাসনিক) প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ক্রিনশটের বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি। নজরে এলে প্রশাসন এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’

উল্লেখ্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা হলের (বর্তমানে বিজয় ২৪ হল) ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রী হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয়েছিল আবাসিক ছাত্রীদের।

ছাত্রীদের অভিযোগ, মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়। এর মধ্যে কোরবান আলী ও নুরুল হামিদও ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’

ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্‌রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ