আমার মনে কোনো ক্ষোভ নেই: ইয়ামি গৌতম
Published: 28th, February 2025 GMT
প্রায় ১৫ বছর আগে রুপালি জগতে পা রাখেন অভিনেত্রী ইয়ামি গৌতম। কন্নড় ভাষার সিনেমার মাধ্যমে এই অঙ্গনে পা রাখেন। এর দুই বছর পর বলিউড যাত্রা শুরু করেন। তারপর কেটে গেছে এক যুগের বেশি সময়। শরীরি সৌন্দর্য ও দাপুটে অভিনয়ের জন্য মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়িয়েছেন।
ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে কাজ নিয়ে কতটা তৃপ্ত ইয়ামি গৌতম? ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সন্তুষ্টি— এমন একটি বিষয়, যা আপনি কখনো অনুভব করবেন না এটি অর্জন করেছেন। আপনি যদি একটি লক্ষ্য স্থির করেন এবং তা অর্জন করেন, তখন মনে হবে, ‘ওহ! আমি এটা চেয়েছিলাম।’ ১০ বছর আগে হয়তো লক্ষ্যটি অন্য কিছু ছিল। আমি এখন এখানে আছি; এখন লক্ষ্য ভিন্ন। আমি হয়তো আমার লক্ষ্যটাকে ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারব না। কারণ আমার মনে এমন কিছু ঠিক করা নেই।”
দর্শক যখন ইয়ামি গৌতম অভিনীত সিনেমার প্রশংসা করেন, তখন কেমন অনুভব করেন? এ প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “মানুষ আমার চলচ্চিত্রের প্রশংসা করলে ভালো লাগে। আমার মনে কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই। এটি এমন একটি জার্নি, যা একা ভ্রমণ করতে হয়; তা আপনি ইন্ডাস্ট্রির হোন বা বাইরের। চূড়ান্ত রায় দর্শকদের উপর নির্ভর করে।”
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশি তরুণ গায়কের প্রশংসায় অরিজিৎ
ইতিহাস গড়ল ভিকি-রাশমিকার সিনেমা
৩৬ বছরের ইয়ামি গৌতম সংসারীও হয়েছেন। ‘উড়ি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ইয়ামির আলোচিত সিনেমা। এটি পরিচালনা করেন আদিত্য ধর। এ সিনেমার সেটে ইয়ামি ও আদিত্য ধরের প্রেমের সম্পর্কের শুরু। তবে বিয়ের আগে একসঙ্গে জনসম্মুখে হাজির হননি তারা। ২০২১ সালের ৪ জুন গোপনে বিয়ে করেন এই দম্পতি। গত বছরের ১০ মে পুত্রসন্তানের মা হন এই অভিনেত্রী।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষার ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইয়ামি গৌতম। এর মধ্যে বেশ কিছু আলোচিত সিনেমা রয়েছে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো— ‘বাদলাপুর’, ‘কাবিল’, ‘সরকার থি’, ‘উড়ি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রভৃতি।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।