পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি) মুসলমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে বিশালসংখ্যক ডায়াবেটিক রোগী পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখছেন। রোজা রাখলে যেসব ডায়াবেটিক রোগীর জীবনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের রোজা না রাখাই উত্তম।

যাঁরা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যাঁরা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাঁদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।

ঝুঁকির নির্দিষ্ট ক্ষেত্র

রোগীর বয়স, ডায়াবেটিসের ধরন ও সময়কাল। অন্যান্য রোগ, বিশেষ করে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, ইনসুলিনের মাত্রা, শরীরচর্চার ধরন ও সময়কাল ইত্যাদি ডায়াবেটিক রোগীদের বিপাক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া রোগীর রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা এবং তা কমে গেলে উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকা বা না থাকার ওপর জীবনের ঝুঁকি নির্ভর করে।

যাঁরা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের তুলনায় বেশি। যাঁরা ১০ বছরের বেশি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।

যাঁরা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যাঁরা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাঁদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলেও যাঁদের এ–সংক্রান্ত উপসর্গ উপলব্ধি করার ক্ষমতা কমে যায়, তাঁরাও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি।

বারবার হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত হন বা রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ায় যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে অচেতন হয়েছেন কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা রমজানে রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি।

ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যাঁদের অন্যান্য ব্যাধি, বিশেষ করে কিডনি বিকল রয়েছে, তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব বেশি ওঠানামা করে। সে কারণে তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ।

গত তিন মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কতটা রয়েছে, সেটি নির্ণয়ে রক্তের একটি পরীক্ষা রয়েছে। এটিকে বলা হয় এইচবিএ-১সি। এর মাত্রা যদি শতকরা ৯–এর বেশি থাকে, তবে তিনি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি।

সাহ্‌রি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।

যাঁরা কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।

আসন্ন রমজানে রোজা রাখার আগে ডায়াবেটিক রোগীদের এসব ঝুঁকি নির্ণয় করে নিতে হবে। যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা অবশ্যই রোজা রাখতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিন। 

কর্নেল ডা.

নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ বরিশাল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইনস ল ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে জার্মানির একটি স্টেট, কেন

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফটের টিমসসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী তিন মাস পর পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য সংরক্ষণে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্টের ডিজিটাল রূপান্তরবিষয়ক মন্ত্রী ডির্ক শ্রোয়েডটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাই। এ জন্যই মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি।’ নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রাথমিকভাবে শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেটের ৬০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এই পরিবর্তনের আওতায় আসবেন। পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষককে একই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্ট ২০২৪ সাল থেকেই ধাপে ধাপে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অফিস ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও এক্সেলের পরিবর্তে ‘লিব্রে অফিস’ এবং ই–মেইল ও ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনায় ‘মাইক্রোসফট আউটলুক’–এর জায়গায় ‘ওপেন-এক্সচেঞ্জ’ ব্যবহার শুরু হয়েছে।

পরবর্তী ধাপে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাদ দিয়ে একটি লিনাক্সভিত্তিক বিকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ডির্ক শ্রোয়েডটার জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা শুধু জ্বালানিতেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও কতটা নির্ভরশীল। এখন সময় এসেছে এসব নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার।’ স্টেট গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ক্লাউড সেবার বদলে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মেই তারা সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষত মাইক্রোসফটের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিযোগিতাবিষয়ক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমস সফটওয়্যার বান্ডিল করে বিক্রি করে, যা বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেয়। ডির্ক শ্রোয়েডটার বলেন, ‘শেলসভিগ-হোলস্টেইনের নেওয়া এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ