ডায়াবেটিসে রোজা রাখা কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
Published: 28th, February 2025 GMT
পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি) মুসলমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে বিশালসংখ্যক ডায়াবেটিক রোগী পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখছেন। রোজা রাখলে যেসব ডায়াবেটিক রোগীর জীবনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের রোজা না রাখাই উত্তম।
যাঁরা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যাঁরা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাঁদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।ঝুঁকির নির্দিষ্ট ক্ষেত্র
রোগীর বয়স, ডায়াবেটিসের ধরন ও সময়কাল। অন্যান্য রোগ, বিশেষ করে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, ইনসুলিনের মাত্রা, শরীরচর্চার ধরন ও সময়কাল ইত্যাদি ডায়াবেটিক রোগীদের বিপাক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া রোগীর রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা এবং তা কমে গেলে উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকা বা না থাকার ওপর জীবনের ঝুঁকি নির্ভর করে।
যাঁরা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের তুলনায় বেশি। যাঁরা ১০ বছরের বেশি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।
যাঁরা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যাঁরা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাঁদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলেও যাঁদের এ–সংক্রান্ত উপসর্গ উপলব্ধি করার ক্ষমতা কমে যায়, তাঁরাও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি।
বারবার হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত হন বা রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ায় যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে অচেতন হয়েছেন কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা রমজানে রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি।
ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যাঁদের অন্যান্য ব্যাধি, বিশেষ করে কিডনি বিকল রয়েছে, তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব বেশি ওঠানামা করে। সে কারণে তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ।
গত তিন মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কতটা রয়েছে, সেটি নির্ণয়ে রক্তের একটি পরীক্ষা রয়েছে। এটিকে বলা হয় এইচবিএ-১সি। এর মাত্রা যদি শতকরা ৯–এর বেশি থাকে, তবে তিনি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি।
সাহ্রি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।
যাঁরা কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।
আসন্ন রমজানে রোজা রাখার আগে ডায়াবেটিক রোগীদের এসব ঝুঁকি নির্ণয় করে নিতে হবে। যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা অবশ্যই রোজা রাখতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিন।
কর্নেল ডা.
নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ বরিশাল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।