এক হাটের ইজারা মূল্য পৌনে পাঁচ কোটি টাকা
Published: 28th, February 2025 GMT
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালাইয়া বন্দর হাটের এক বছরের ইজারা মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সঙ্গে ২৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করলে ইজারা মূল্য দাঁড়াচ্ছে পৌনে ৫ কোটি টাকার মতো, যা গত দুই বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরের জন্য হাটের ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী ইকবাল আহম্মেদ মিয়া। তাঁর বাবা আব্দুল হালিম মিয়া স্থানীয় কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কালাইয়া হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার আগের বছর ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইজারাদার ছিলেন কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালাইয়া হাট ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। হাট দখল করে খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়ায় বিএনপির দুটি পক্ষ। একপর্যায়ে আগের ইজারাদারের কাছ থেকে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম আহম্মেদ (তুহিন) কিনে নিয়ে খাজনা উত্তোলনের দায়িত্ব নেন। এ নিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আগামী এক বছরের জন্য ইজারাদার নির্বাচিত হওয়া ইকবাল আহম্মেদ বর্তমানে খাজনা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা বিএনপির নেতা জসিম আহম্মেদের বড় ভাই।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এবার মোট পাঁচ ব্যক্তি ইজারার দরপত্রে অংশ নেন। সবাই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।
২০০ বছরের বেশি পুরোনো কালাইয়া হাটে প্রতি সোমবার গবাদিপশু ও ধানের বিশাল হাট বসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ গবাদিপশু কেনাবেচা ও ধান কিনতে হাটে আসেন। হাট হিসেবে পরিচিত হলেও প্রতিদিন বাজার বসে। তাজা মাছ ও সবজি পাওয়া যায়। কালাইয়া বন্দর নামেও চেনে মানুষ। হাট এলাকায় একাধিক ব্যাংক, নৌ পুলিশ ফাঁড়ি আছে। এ ছাড়া দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ডিগ্রি কলেজ, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কামিল মাদ্রাসা আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগের এক ইজারাদার বলেন, যে পরিমাণ ইজারা মূল্য তাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যিনি ইজারা নিয়েছেন, তাঁদের পরিবার খুবই বিত্তশালী। তাঁরা লাভের আশা না করে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করলে অন্তত লোকসান হবে না।
নতুন ইজারাদারের এক স্বজনের ভাষ্য, বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাটটির ইজারাদার অন্য কেউ হলে তাঁরা সমাজে ছোট হতেন। পরিবারের সম্মানের দিকে তাকিয়ে বেশি দামে হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোনো লাভের আশায় না।
মহাজনপট্টি মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.
ইজারাদার ইকবাল আহম্মেদ মিয়া বলেন, তাঁর ও তাঁদের পরিবারের প্রতি মানুষের যে আস্থা, তা ম্লান হয়ে যাক, এমন কোনো কাজ তিনি করবেন না। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা হলেন হাটবাজারের প্রাণ। তাঁদের সঙ্গে অবশ্যই ভালো আচরণ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই জুলুম করা হবে না।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারাদার নির্বাচিত করা হয়েছে। আশা করছেন, সরকারি নিয়ম মেনেই খাজনা উত্তোলন করা হবে। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চাহিদা অনুযায়ী হাটের উন্নয়ন করা হবে বলে তিনি জানান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ট র ইজ র র ইজ র দ র ল আহম ম দ ব এনপ র ব যবস য় র পর ব পর ব র উপজ ল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’
অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’