Samakal:
2025-11-04@03:52:15 GMT

আদালতের যুগান্তকারী রায়

Published: 28th, February 2025 GMT

আদালতের যুগান্তকারী রায়

নিরাপদ পানিকে মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা দান-সংক্রান্ত আদালতের রায়টি যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। কারণ যেই পানি জীবন রক্ষার উপকরণ, উহাই বিশুদ্ধ না হইলে জীবন হরণেরও কারণ হইতে পারে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে এই বিষয়ে সুয়োমোটো রুল জারি করিয়াছিলেন হাইকোর্ট। উক্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি হিসাবে বৃহস্পতিবার যেই রায় প্রদান করা হইয়াছে, উহার মাধ্যমে পানির অধিকার নিশ্চিত হইবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা। রায়ের পর্যবেক্ষণে যথার্থই বলা হইয়াছে, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানিপ্রাপ্তি মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র এই অধিকার নিশ্চিত করিবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে জনপরিসরে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ বিষয়েও ব্যবস্থা লইবার তাগিদ আসিয়াছে এই রায়ের মাধ্যমে। আমরা মনে করি, রায়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হইল, দেশে যত পানির উৎস বিদ্যমান, সেগুলিকে দূষণের হস্ত হইতে রক্ষা করিবার নির্দেশনা প্রদান করা হইয়াছে। বস্তুত দেশের পানির অন্যতম উৎস নদীগুলির অবস্থা দূষণ-দখলে সঙ্গিন। খালবিল ও অন্যান্য জলাধারের পরিস্থিতিও তথৈবচ। আদালতের রায়ে বিশেষত তুরাগ নদ, সোনারগাঁও ও হাতিরঝিলের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হইলেও পানির উৎস হিসেবে নদী ও সকল জলাধার সংরক্ষণ করিতে হইবে।

আদালত ১০ বৎসরের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে যেই নির্দেশ দিয়াছেন, উহাও জনগুরুত্বপূর্ণ। অযৌক্তিকভাবে বোতলজাত পানির মূল্য বৃদ্ধি করিবার বিষয়টি আমরা দেখিয়াছি। পানির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাইয়া অনেকেই আন্দোলন করিয়াছেন; রাজপথে নামিয়া মানববন্ধনের ন্য়ায় কর্মসূচিও পালন করিয়াছেন। এমনকি ইতোপূর্বে পানি উৎপাদনে জড়িত একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেও বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্য প্রতিহত করা যাইতেছে না। আমরা বিশ্বাস করি, আদালতের নির্দেশ আমলে লইয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাইবে এবং প্রত্যেকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পানি নিশ্চিত হইবে। 

ইহাতে সুফল আসিতে পারে, কারণ আদালতের এই রায়টি চলমান আদেশরূপে থাকিবে। দেশে পানির মূল্যে যেই বৈষম্য রহিয়াছে, উহাও রোধ করা জরুরি। বিশেষ করিয়া শহরের নাগরিকদের পানিবিষয়ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ-ওয়াসা এই বৈষম্য বহাল রাখিয়াছে; যথায় আবাসিক পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসার এক সহস্র লিটার পানির মূল্য ১৫ টাকার অধিক, তথায় সমপরিমাণ পানির মূল্য চট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৮ টাকা। খুলনা ওয়াসার একই পরিমাণ পানির মূল্য প্রায় ৯ টাকা। খুলনা শহর হইতে ২৫ কিলোমিটার দূরের চালনার বাসিন্দাদের কেবল এক লিটার পানির জন্যই গুনিতে হয় ৫০ পয়সা হইতে ১ টাকা। ওয়াসার পানি লইয়া আরও উদ্বেগের বিষয় হইল, এই পানি পান করিবার জন্য নিরাপদ–  নাগরিকরা এমনটা মনে করেন না। ইহাকে নিরাপদ করিতে পানি ফুটানো কিংবা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হয়। আবার দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষও সুপেয় পানির সংকটে রহিয়াছে। আদালতের রায় এই সকল ক্ষেত্রেও কার্যকর হওয়া উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। সত্য, সংবিধানে মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃত হইবার পরও সরকার সকলের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। তবে এই সকল বিষয়ে সচেতন মহল ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থাকিলে সংবিধান ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হইবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন ব যবস থ র জন য ন র পদ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি পুলিশ দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক একজন প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ওই সাবেক প্রসিকিউটরের নাম ইয়াফাত তোমের-ইয়েরুশালমি। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী।

জানা যায়, অনলাইনে ওই ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর নিখোঁজ ছিলেন।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভিডিও ফাঁসের ঘটনাকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘জনসংযোগের ওপর সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস ঘিরে ইসরায়েলের শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ০১ নভেম্বর ২০২৫

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল-জাজিরার নউর ওদেহ বলেন, ওই নারী প্রসিকিউটরের আটকের ঘটনা ইসরায়েলে ‘রাজনৈতিক ও আইনি ঝড়’ তৈরি করেছে। তবে আটক হওয়া ব্যক্তির ওপর বাড়তি মনোযোগ মূল ঘটনা থেকে নজর সরিয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ