Samakal:
2025-08-01@20:12:32 GMT

আদালতের যুগান্তকারী রায়

Published: 28th, February 2025 GMT

আদালতের যুগান্তকারী রায়

নিরাপদ পানিকে মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা দান-সংক্রান্ত আদালতের রায়টি যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। কারণ যেই পানি জীবন রক্ষার উপকরণ, উহাই বিশুদ্ধ না হইলে জীবন হরণেরও কারণ হইতে পারে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে এই বিষয়ে সুয়োমোটো রুল জারি করিয়াছিলেন হাইকোর্ট। উক্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি হিসাবে বৃহস্পতিবার যেই রায় প্রদান করা হইয়াছে, উহার মাধ্যমে পানির অধিকার নিশ্চিত হইবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা। রায়ের পর্যবেক্ষণে যথার্থই বলা হইয়াছে, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানিপ্রাপ্তি মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র এই অধিকার নিশ্চিত করিবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে জনপরিসরে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ বিষয়েও ব্যবস্থা লইবার তাগিদ আসিয়াছে এই রায়ের মাধ্যমে। আমরা মনে করি, রায়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হইল, দেশে যত পানির উৎস বিদ্যমান, সেগুলিকে দূষণের হস্ত হইতে রক্ষা করিবার নির্দেশনা প্রদান করা হইয়াছে। বস্তুত দেশের পানির অন্যতম উৎস নদীগুলির অবস্থা দূষণ-দখলে সঙ্গিন। খালবিল ও অন্যান্য জলাধারের পরিস্থিতিও তথৈবচ। আদালতের রায়ে বিশেষত তুরাগ নদ, সোনারগাঁও ও হাতিরঝিলের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হইলেও পানির উৎস হিসেবে নদী ও সকল জলাধার সংরক্ষণ করিতে হইবে।

আদালত ১০ বৎসরের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে যেই নির্দেশ দিয়াছেন, উহাও জনগুরুত্বপূর্ণ। অযৌক্তিকভাবে বোতলজাত পানির মূল্য বৃদ্ধি করিবার বিষয়টি আমরা দেখিয়াছি। পানির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাইয়া অনেকেই আন্দোলন করিয়াছেন; রাজপথে নামিয়া মানববন্ধনের ন্য়ায় কর্মসূচিও পালন করিয়াছেন। এমনকি ইতোপূর্বে পানি উৎপাদনে জড়িত একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেও বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্য প্রতিহত করা যাইতেছে না। আমরা বিশ্বাস করি, আদালতের নির্দেশ আমলে লইয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাইবে এবং প্রত্যেকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পানি নিশ্চিত হইবে। 

ইহাতে সুফল আসিতে পারে, কারণ আদালতের এই রায়টি চলমান আদেশরূপে থাকিবে। দেশে পানির মূল্যে যেই বৈষম্য রহিয়াছে, উহাও রোধ করা জরুরি। বিশেষ করিয়া শহরের নাগরিকদের পানিবিষয়ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ-ওয়াসা এই বৈষম্য বহাল রাখিয়াছে; যথায় আবাসিক পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসার এক সহস্র লিটার পানির মূল্য ১৫ টাকার অধিক, তথায় সমপরিমাণ পানির মূল্য চট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৮ টাকা। খুলনা ওয়াসার একই পরিমাণ পানির মূল্য প্রায় ৯ টাকা। খুলনা শহর হইতে ২৫ কিলোমিটার দূরের চালনার বাসিন্দাদের কেবল এক লিটার পানির জন্যই গুনিতে হয় ৫০ পয়সা হইতে ১ টাকা। ওয়াসার পানি লইয়া আরও উদ্বেগের বিষয় হইল, এই পানি পান করিবার জন্য নিরাপদ–  নাগরিকরা এমনটা মনে করেন না। ইহাকে নিরাপদ করিতে পানি ফুটানো কিংবা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হয়। আবার দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষও সুপেয় পানির সংকটে রহিয়াছে। আদালতের রায় এই সকল ক্ষেত্রেও কার্যকর হওয়া উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। সত্য, সংবিধানে মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃত হইবার পরও সরকার সকলের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। তবে এই সকল বিষয়ে সচেতন মহল ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থাকিলে সংবিধান ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হইবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন ব যবস থ র জন য ন র পদ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ