Samakal:
2025-08-01@05:06:53 GMT

চলনবিলের খেজুরের গুড়

Published: 28th, February 2025 GMT

চলনবিলের খেজুরের গুড়

চলনবিল অঞ্চলে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগেই খেজুর গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। তাদের সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গাছিরাও চলনবিল অঞ্চলে ভালো মানের খেজুর গুড় তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছেন বছরের পর বছর। মৌসুমে ভালো আয়-রোজগারও করছেন। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মনিকগ্রাম ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জামরুল ইসলাম (৪৩)। তাঁর বাবা আকবর আলী মারা গেছেন। জীবিত অবস্থায় তিনিও ছিলেন ওই এলাকার পরিচিত গাছি। আকবর আলী চোখের পলকে উঠে যেতে পারতেন যে কোনো উঁচু খেজুর গাছে। তৈরি করতেন সুস্বাদু পাটালি, বাটি, নালি ও মসলা গুড়। বাবার কাছেই অল্প বয়সে গাছিয়া হওয়ার হাতেখড়ি নেন জামরুল। রপ্ত করেছেন বাবার মতোই ভালো মানের গুড় তৈরির কলাকৌশল। এ কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে তিনিও পার করেছেন প্রায় এক যুগ। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী। 
রাজশাহী অঞ্চলে শীতকালে তেমন কাজ থাকে না। আয়-রোজগারের আশায় পুরো সময়টাই চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সেরাজপুর, ওয়াশিন, কাস্তা, বেত্রাশিন গ্রামে গুড় তৈরির কাজ করেন তিনি। এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই কার্তিক মাসে প্রায় ২০৭টি খেজুর গাছ টাকা নয়, গুড়ের বিনিময়ে লিজ নিয়ে দিব্যি বাবার মতোই নজরুল ইসলাম ও মকবুল হোসেন নামের অভিজ্ঞ দুই গাছিকে সঙ্গী করে তৈরি করছেন সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের খেজুরের গুড়। জামরুলের গুড় কিনতে এলাকার বাইরে থেকেও লোকজন আসেন তাড়াশের সেরাজপুর গ্রামের কৃষক সাত্তারের বাড়ির উঠানে গেঁড়ে বসা অস্থায়ী আস্তানায়। মৌসুমি এ কাজে যে আয় হয় তাতেই বছরের কয়েক মাস খাওয়া-পরাসহ সাংসারিক খরচ মেটাবেন জামরুলসহ অন্য গাছিরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে এবার দুই শতাধিক গাছি চলনবিল এলাকায় এসেছেন।
তাড়াশের পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার দোবিরগঞ্জ গ্রামে প্রায় ৩০০ খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গুড় তৈরি করছেন নাটোর জেলার বাগাতীপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামের আবুল কাসেম। এ কাজের সঙ্গী স্ত্রী ও দুই কিশোর ছেলে। একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে প্রায় সাড়ে চার মাসের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে গাছিদের। যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার তৈরি খেজুরের গুড় বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব গাছি মনছের সরদার জানান, কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে ধারালো ছেনি, বাটাল কিনে ও শান দিয়ে, রসের হাঁড়ি বা ডুকি, তাওয়া বা কড়াই, হরপাট, হাদা বা দা, মাটির তৈরি বাটি, খাদা, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বিছানাপত্র ও নানা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে আসেন চলনবিলের কোনো এক গৃহস্থের বাড়িতে। সেখানে বানান থাকার মতো টংঘর। প্রথমে গাছে উঠে নিজের নিরাপত্তার জন্য মোটা রশি বা তাদের ভাষায় শক্ত করে ডোড়া বেঁধে লোহার তৈরি দা কিংবা ছেনি দিয়ে লিজ নেওয়া গাছের অপ্রয়োজনীয় ডাল-পাতা ছেঁটে ফেলেন। তারপর রস বের করতে নিখুঁতভাবে ধারালো বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের উপরিভাগে অল্প অল্প করে গাছিদের ভাষায় কপালি বা কোটর কাটতে থাকেন। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহেই রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এর আগেই মাটির বড়সড় আখা বা চুলা, জ্বালানি হিসেবে মরা ডালপালা, খড় কিংবা বর্তমান সময়ে গার্মেন্টসের ঝুট সংগ্রহ করে রাখতে হয়। রস এলেই শুরু হয় গুড় তৈরি।
কাসেম গাছি জানান, গাছিরা বেলা ১১টার দিকে খাবার খেয়েই রসের জন্য ছেনি-বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের কপালি কাটতে গাছে উঠে যান। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটে একেকটি গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলাতে পারেন তারা। এভাবে বিকেলের মধ্যেই গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলানো শেষ করে ফেরেন টংঘরে। পরে রান্না করে সন্ধ্যার পরপরই খাবার খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যান। আবার রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে একেকটি খেজুর গাছ থেকে রসভরা হাঁড়ি নামিয়ে আনার কাজ শুরু করেন; যা ভোর হওয়ার মধ্যে শেষ করতে হয়। পড়ে আখা বা চুলায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় কড়াই বা তাওয়ায় মণ পাঁচেক ওজনের রস ঢেলে শুরু হয় চুলায় জ্বাল দেওয়া। একসময় রসের জ্বাল দেওয়া পাত্রের রসে বলক উঠতে থাকে। তখন রসের ফেনা ফেলে দেওয়া, কাঠের তৈরি লম্বা হাতলের সাপরপাট দিয়ে অবিরাম নাড়ানাড়ি চলতে থাকে। এরপর গুড়ের রং এলে তা গাঢ় হওয়া পর্যন্ত রস চুলায় জ্বাল দেন। পাশাপাশি সেখান থেকে অল্প পরিমাণ গাঢ় গুড় নিয়ে গরম তাওয়ায় সারপাট দিয়ে মলে মলে তৈরি হয় গুড়ের বীজ। সে বীজ পুরো তাওয়ায় রাখা গুড়ে মিশিয়ে দিয়ে পাটালি বা বাটি আকারের পাত্রে রেখে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে তা শক্ত হয়ে গেলে হয় পরিপূর্ণ পাটালি খেজুর গুড়। তখন পাত্র থেকে তুলে কাগজ বা প্লাস্টিকের কার্টনে ভরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। নালি বা ঝোলা গুড় তৈরিতে গুড়ের বীজ মেশাতে হয় না। 
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলনবিল এলাকায় চাঁচকৈড়, মীর্জাপুর, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, সলঙ্গা, নিগাছি, কাছিকাটা, সাইকোলাসহ ১৫ থেকে ২০টি হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার গুড় বিক্রি হয়। তা থেকে যে আয় আসে তাতে গাছি বা কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।

আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
  • চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  • রাউজানে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত
  • রাউজানে বিএনপি নেতা গোলাম আকবরের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০
  • রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গুলি, উত্তর জেলা আহ্বায়কসহ আহত ২০
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার