বাগ্বিতণ্ডার পর ট্রাম্প কি আর সহায়তা দেবেন, কী করবেন জেলেনস্কি
Published: 1st, March 2025 GMT
হোয়াইট হাউসে গতকাল শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কোটি ডলারের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ট্রাম্প। তিনি এ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় লেগে দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যদিও কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন তা নিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। এসব থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছিল ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে চলেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপের দেশগুলো হতবাক হয়।
তারপর থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রতি যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার অনুরোধ করতে থাকেন। এমনটাও বলা হয়, উভয় পক্ষের কেউ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি কি হতে পারে তাও যেন চুক্তিতে নিশ্চিত করা থাকে।
ট্রাম্প তাদের এই অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন এবং বলেছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। ট্রাম্প বরং জোর দিয়ে বলেছেন, পুতিন তাঁকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না।
শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প এবং তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’ করেননি।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার পর জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের প্রেসসচিব।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ‘যখন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।’
শুক্রবারের বৈঠক নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন বলেন, শুক্রবারের বৈঠকের পুরোটা সময়ই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।
ফিনুকেন আরও বলেন, ‘ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের আচরণ ছিল অপ্রত্যাশিত। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা করা নিয়ে যা ভাবেন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়ে তিনি যে বর্ণনা প্রচার করেন তা সবারই জানা। তাই তাদের ওই আচরণ অতটাও অবাক করা ছিল না।’
ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনকে যখনই জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তারা বারবার ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দায় মস্কোর ওপর চাপাতে অস্বীকার করেছেন। শুক্রবারও ট্রাম্প এই ইঙ্গিতই দিয়েছেন যে, যেহেতু আলোচনা চলছে তাই তিনি পুতিনের সমালোচনা করছেন না।
এমনটা হওয়ারই ছিলইউক্রেনের রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো এএফপিকে বলেন, ‘এ সবই, এই বাগ্বিতণ্ডা, এই বিস্ফোরণ, আজ হোক বা কাল, ঘটতই।’
এরপর কী হতে চলেছে তা অস্পষ্ট, তবে এটা ইউক্রেনের জন্য খারাপ কিছু হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আইসিজির উপদেষ্টা ফিনুকেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন থেকে শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে অস্ত্রের যে চালান যাওয়ার কথা রয়েছে সেটা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বলে বাতিল করা হতে পারে।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার আগে দিয়ে ইউক্রেনকে ওই অস্ত্র পাঠানোর অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাইডেন ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করতে ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বাগ্বিতণ্ডার পর ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের শেষে জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আক্রমণকারী রুশ বাহিনীকে আটকে রাখা ইউক্রেনের জন্য ‘কঠিন’ হয়ে যাবে।জেলেনস্কি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে কিয়েভের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি চাই ট্রাম্প সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকুন।’
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের ওই বৈঠকের যে পরিণতি হয়েছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ দ্রুত ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।
ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা কেন ন্যাটোর জন্য বড় সংকটের ইঙ্গিতট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র বল ছ ন র জন য ইউর প ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বিরোধপূর্ণ বালুচর স্যান্ডি কে ‘দখলে নিল’ চীন
দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত বিরোধপূর্ণ বালুচর স্যান্ডি কে চীনের কোস্টগার্ড দখলে নিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এ ঘটনা ফিলিপাইনের সঙ্গে দেশটির আঞ্চলিক বিরোধ আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
চীনা গণমাধ্যম সিসিটিভির প্রকাশিত ছবিতে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের বিরোধপূর্ণ প্রবালপ্রাচীর স্যান্ডি কে-তে কালো পোশাক পরা কোস্টগার্ডের চার কর্মকর্তাকে চীনের জাতীয় পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এপ্রিলের শুরুর দিকে চীন ওই প্রবালপ্রাচীরে ‘সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগ করেছে’, সিসিটিভি এমনটাই জানিয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের বেশ কিছু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীন ও ফিলিপাইনের পাল্টাপাল্টি দাবি আছে।
এ ঘটনার পর রোববার ফিলিপাইন তিনটি বালুচরে নামার কথা জানায় এবং চীনের ছবির অনুকরণে তাদের কর্মকর্তারাও একটি প্রবালপ্রাচীরে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে এমন একটি ছবি প্রকাশ করে। অবশ্য ফিলিপাইনের নিরাপত্তা বাহিনী যেসব বালুচরে নেমেছে, তার মধ্যে কোনোটি স্যান্ডি কে কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিবিসি।
এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল টাস্কফোর্স ওয়েস্ট ফিলিপাইন সি জানায়, তারা একটি বালুচর থেকে এক হাজার গজ দূরে চীনা কোস্টগার্ডের একটি নৌযান এবং আরও সাতটি চীনা মিলিশিয়া নৌযানের ‘অবৈধ উপস্থিতি’ দেখতে পেয়েছিল।
পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে দেশের সার্বভৌমত্ব, সার্বভৌম অধিকার ও কর্তৃত্ব রক্ষায় ফিলিপাইন সরকারের অবিচল নিষ্ঠা ও দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এই অভিযান,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
রোববারই পরে এক বিবৃতিতে চীনা কোস্টগার্ড জানায়, তারা তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীরে ৬ ফিলিপিনোর ‘অবৈধভাবে নামার ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছে’। স্যান্ডি কে চীনে তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীর নামে পরিচিত।
চীনের দিক থেকে সতর্কবার্তা ও নিরুৎসাহিত করার পরও ফিলিপাইনের ছয়জন অবৈধভাবে তিয়েশিয়ান প্রবালপ্রাচীরে নামে। চীনের কোস্টগার্ড সদস্যরা এরপর ওই প্রবালপ্রাচীরে নামে এবং তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া বিবৃতিতে চীনা কোস্টগার্ডের মুখপাত্র লিউ দেজুন এমনটাই বলেছেন।