নেত্রকোনায় ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারকাজে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 1st, March 2025 GMT
নেত্রকোনায় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারকাজে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে শহরের ছোট বাজার এলাকায় শহীদ মিনার–সংলগ্ন সামনের সড়কে হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা কমিটির ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, হাওরে ফসল রক্ষার বিভিন্ন বাঁধ সংস্কারকাজে গঠিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠনে নানা অনিয়ম হয়েছে। সাধারণ কৃষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীনেরা লাভবান হওয়ার জন্য কৃষকদের নাম ব্যবহার করে পিআইসি গঠন করে যেনতেনভাবে কাজ করছেন। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
আয়োজক সংগঠনটির সভাপতি অহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার অলি উল্লাহ, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল আলম, স্কুলশিক্ষক শামিম তালুকদার, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম খান, জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, লেখক ফজলুল হক, আইনজীবী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁরা জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রায় ৩৫ শতাংশ বাকি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগাম বন্যা হলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৬টি উপজেলায় ১৪৬ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৯১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। বরাদ্দ চাওয়া হয় ৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রথম পর্যায়ে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গঠিত পিআইসির মধ্যে খালিয়াজুরিতে ১২১টি, মদনে ২৩টি, মোহনগঞ্জে ২৭টি, কলমাকান্দায় ১৩টি, বারহাট্টায় ৫টি ও আটপাড়ায় ২টি আছে। নীতিমালায় অনুযায়ী, বাঁধের নির্মাণকাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু নেত্রকোনায় এখনো প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। পাউবোর দাবি, ৯০ শতাংশ বাঁধে মাটি কাটার কাজ শেষ। এখন শুধু স্লোভ ও ঘাস লাগানো বাকি।
স্থানীয় গাগলাজুর এলাকার কৃষক কাজল চৌধুরী জানান, চরহাইজদা বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এবার অকালবন্যা হলে ফসল বিপর্যয় ঘটতে পারে। খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আগাম বন্যা হলে যেকোনো সময় ফসলহানি হতে পারে। আমাদের ধনুসহ বিভিন্ন নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প পানিতেই বন্যা হয়ে যায়। আমরা ফসল নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি, কথাটি ঠিক নয়। প্রায় ৯০ শতাংশ প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ শেষ। এখন স্লোভ ও ঘাস লাগানো চলছে। আর কয়েকটি প্রকল্পে দেরিতে পানি নামায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। আশা করা হচ্ছে আর এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে। একই রকম আশাবাদের কথা জানিয়েছেন মোহনগঞ্জের ইউএনও জুয়েল আহমেদও।
অন্যদিকে জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর পানি নামতে দেরি হওয়ায় কিছু বাঁধে কাজ শুরু ও শেষ করতে সময় লেগেছে। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর বাঁধ সংস্কারকাজ ও পিআইসি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষকদ র প রকল প গঠন ক ফসল র প আইস
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।