Samakal:
2025-08-01@04:51:34 GMT

রহমতের মাস রমজান শুরু

Published: 1st, March 2025 GMT

রহমতের মাস রমজান শুরু

মুমিনের দুয়ারে হাজির হয়েছে দয়াময় আল্লাহতায়ালার রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের অশেষ ফল্গুধারায় অবগাহনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। পশ্চিমাকাশে গতকাল ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের চাঁদ উদয়ের পর তারাবি ও সাহ্‌রির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজার আনুষ্ঠানিকতা। আত্মশুদ্ধি, আত্ম-সংশোধন, আত্ম-উন্নয়ন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মহিমায় ভাস্বর এ মাসে মুমিন মুসলমান সবাই মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান।

ইসলামের বিধানে মাহে রমজান বছরের বাকি এগারো মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ পুরো কোরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বপ্রথম এ মাসেই অহি অবতীর্ণ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ’। –সূরা বাকারা: ১৮৫
সহিহ মুসলিম শরিফের ১০৭৯ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহতায়ালার রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।
অন্য এক হাদিসে এ মাসের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’। –সহিহ বুখারি: ৩২৭৭

রমজানুল মোবারক জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির পরওয়ানা লাভের এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা রমজানের প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’। –মুসনাদে আহমদ: ২২২০২
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি আমলের সওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ কিংবা তারও বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের ওমরাহ, হজ সমতুল্য’। –জামে তিরমিজি: ৯৩৯

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। –শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩০৫-৩০৬
অর্থাৎ এ মাসে নফল ইবাদতে অন্য মাসের ফরজের মতো সওয়াব হয়। আর এ মাসের একটি ফরজ আদায়ে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়।
এ তো হলো রোজা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের সওয়াব। আর রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দেব।’ –সহিহ মুসলিম: ১১৫১

যেহেতু রমজান রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভের মাস; তাই এ মাস পেয়েও যে ব্যক্তি নিজ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার জন্য হজরত জিবরাঈল (আ.

) বদদোয়া করেছেন এবং নবী করিম (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হওয়া সত্ত্বেও আমিন বলে সমর্থন জানিয়েছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) মিম্বরে উঠে তিনবার আমিন, আমিন, আমিন বললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূল! আপনি তো এমন করতেন না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাঈল (আ.) আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার কাছে আমার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। –আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৪৬

রমজানের মতো এমন বরকতময় মাস আমরা পেয়েছি, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ রহমত। তাই এখন আমাদের কর্তব্য হলো, রমজানের হক আদায় করা ও পবিত্রতা রক্ষা করা। নবীর (সা.) সম্মতি দেওয়া বদদোয়া থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং পাপ আর কলুষতা থেকে মুক্তি পেতে পবিত্র চিত্তে দোয়া করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, পদুয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা, ফেনী।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন রমজ ন ম স অন য ম স রমজ ন র দ য় কর র জন য ইরশ দ ক রআন বলল ন সওয় ব

এছাড়াও পড়ুন:

বাথুয়া গ্রামের যে স্কুলে পড়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর নিজ গ্রাম হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’। ৯২ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়টির এলাকায় পরিচিত ছিল ‘মহাজন ফইরের স্কুল’ নামে। চাটগাঁইয়া ভাষায় ‘ফইর’ মানে পুকুর। স্কুলের প্রবীণ শিক্ষকেরা বলছেন, এলাকার একটি পুকুরের পাশে হওয়ায় লোকমুখে স্কুলটির এমন নামকরণ।

‘মহাজন ফইরের স্কুল’ বা ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টির জন্য জমি দান করেছিলেন ‘১৯৩৭ সাবান’ কারখানার মালিক নুরালী সওদাগরের ছেলে নেয়ামত আলী। মহাজন পুকুরের পাশে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ভবন বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে নাম ছিল ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’। পরে ১৯৭৯ সালে দুই কিলোমিটার দূরে গ্রামেরই আরেকটি জমিতে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় একসঙ্গে সরকারি হওয়ার সময় ‘আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলও’ সরকারি হয়। এরপর এটির নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

অধ্যাপক ইউনূসের শৈশবের বিদ্যালয়

বাথুয়া গ্রাম ঘুরে, একাধিক বাড়িতে গিয়েও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো সহপাঠীর সন্ধান মেলেনি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁর সঙ্গে পড়ালেখা করেছেন যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই, নয়তো শয্যাশায়ী।

তবে তাঁর সমবয়সী মুহাম্মদ শফি নামের একজনকে পাওয়া যায়। যিনি অধ্যাপক ইউনূসের দেড় বছরের বয়সে ছোট এবং খেলার সঙ্গী ছিলেন। শফি পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর করেছেন জুয়েলারি দোকান। তাঁরও প্রাথমিক পাঠ আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। ৮৪ বছরের প্রবীণ মুহাম্মদ শফির সঙ্গে তাঁর বাসায় বসে কথা হয়। তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৪৫ সালে গ্রামের স্কুলটিতে ভর্তি হন অধ্যাপক ইউনূস। পড়েন তৃতীয় পর্যন্ত। শফি তাঁর এক ক্লাস নিচে পড়তেন। জুনিয়র হলেও তাঁদের সম্পর্ক ছিল একদম সহপাঠীর মতো। খেলেছেন, মেলায় ঘুরেছেন, নাটকও করেছেন একসঙ্গে।

মুহাম্মদ শফি বলেন, শৈশব থেকেই লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন ইউনূস। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। ছাত্রাবস্থায় বয়েজ স্কাউটে যোগ দিয়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এসব দেখে সবারই মনে হতো, ইউনূস একদিন অনেক বড় হবেন।

কিশোর বয়স থেকে অধ্যাপক ইউনূস ভালো ছবি আঁকতেন বলে জানালেন মুহাম্মদ শফি। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল। ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ নামে একটি পত্রিকাও বের করতেন ১৯৬১ সালের দিকে। ছোটবেলায় দুই ঈদে গ্রামে আসতেন। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং নাটক করতেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেও আসতেন। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় বেড়াতেন সারা গ্রাম। ছাত্রাবস্থায় একবার বক্তৃতা দিতে উঠে মাইক হাতে নিয়ে তিনি হ্যালো বলেননি। বলেছিলেন, ‘মনোযোগ দিন, মনোযোগ দিন’। তার মানে বাংলাচর্চায় ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল।

আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল যে জায়গায় শুরু হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাথুয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রহমত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি কথায় কথায় জানালেন, একই স্কুলে অধ্যাপক ইউনূসের শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবা আবুল হোসেন মাস্টার। বাবা তাঁকে বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। নোবেল বিজয়ী হয়ে যখন ২০০৭ সালে গ্রামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি আসেন, তখন ওই অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ছাত্রকে দেখতে এসেছিলেন তাঁর বাবা। আবুল হোসেন ২০১৩ সালে মারা যান। রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতেন, তাহলে অনেক খুশি হতেন। তাঁর ছাত্র যে আজ দেশের সরকারপ্রধান।’

বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল। ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ নামে একটি পত্রিকাও বের করতেন ১৯৬১ সালের দিকে। ছোটবেলায় দুই ঈদে গ্রামে আসতেন। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং নাটক করতেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেও আসতেন। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় বেড়াতেন সারা গ্রাম। ছাত্রাবস্থায় একবার বক্তৃতা দিতে উঠে মাইক হাতে নিয়ে তিনি হ্যালো বলেননি। বলেছিলেন, ‘মনোযোগ দিন, মনোযোগ দিন’। তার মানে বাংলাচর্চায় ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিলমুহাম্মদ শফি, পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র

নেই কোনো স্মৃতি

পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানে না, তাদের বিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পড়তেন একসময়। পঞ্চম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা অবাক হয়। একাধিক শিক্ষার্থী বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, ‘না, এটা তো জানতাম না।’  তবে তথ্যটি জানার পর তারা সবাই উচ্ছ্বসিত হয়।

বিদ্যালয়ে নেই কৃতী শিক্ষার্থীদের কোনো তালিকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজ কার্যালয়ে বসে প্রধান শিক্ষক নাসিমা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে এখানে যে অধ্যাপক ইউনূস পড়তেন, সেটা অনেকেই জানেন না। আমরা শিক্ষকেরাও জানতাম না। কোনো কারণে আগে এই তথ্য প্রচার হয়নি। আগের শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে কোনো কৃতী শিক্ষার্থীর তালিকা রাখেননি। এখন এমন একটি তালিকা করার কথা ভাবছি।’

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক লাকি পালিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খুবই গর্বের বিষয়। একজন নোবেল বিজয়ীর প্রাথমিক পাঠ নেওয়া বিদ্যালয়ে আমি শিক্ষকতা করছি, এটা ভাবতেই ভালো লাগে।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাথুয়া গ্রামের যে স্কুলে পড়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস