Samakal:
2025-05-01@05:43:22 GMT

রহমতের মাস রমজান শুরু

Published: 1st, March 2025 GMT

রহমতের মাস রমজান শুরু

মুমিনের দুয়ারে হাজির হয়েছে দয়াময় আল্লাহতায়ালার রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের অশেষ ফল্গুধারায় অবগাহনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। পশ্চিমাকাশে গতকাল ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের চাঁদ উদয়ের পর তারাবি ও সাহ্‌রির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজার আনুষ্ঠানিকতা। আত্মশুদ্ধি, আত্ম-সংশোধন, আত্ম-উন্নয়ন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মহিমায় ভাস্বর এ মাসে মুমিন মুসলমান সবাই মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান।

ইসলামের বিধানে মাহে রমজান বছরের বাকি এগারো মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ পুরো কোরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বপ্রথম এ মাসেই অহি অবতীর্ণ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ’। –সূরা বাকারা: ১৮৫
সহিহ মুসলিম শরিফের ১০৭৯ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহতায়ালার রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।
অন্য এক হাদিসে এ মাসের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’। –সহিহ বুখারি: ৩২৭৭

রমজানুল মোবারক জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির পরওয়ানা লাভের এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা রমজানের প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’। –মুসনাদে আহমদ: ২২২০২
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি আমলের সওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ কিংবা তারও বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের ওমরাহ, হজ সমতুল্য’। –জামে তিরমিজি: ৯৩৯

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। –শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩০৫-৩০৬
অর্থাৎ এ মাসে নফল ইবাদতে অন্য মাসের ফরজের মতো সওয়াব হয়। আর এ মাসের একটি ফরজ আদায়ে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়।
এ তো হলো রোজা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের সওয়াব। আর রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দেব।’ –সহিহ মুসলিম: ১১৫১

যেহেতু রমজান রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভের মাস; তাই এ মাস পেয়েও যে ব্যক্তি নিজ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার জন্য হজরত জিবরাঈল (আ.

) বদদোয়া করেছেন এবং নবী করিম (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হওয়া সত্ত্বেও আমিন বলে সমর্থন জানিয়েছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) মিম্বরে উঠে তিনবার আমিন, আমিন, আমিন বললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূল! আপনি তো এমন করতেন না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাঈল (আ.) আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার কাছে আমার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। –আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৪৬

রমজানের মতো এমন বরকতময় মাস আমরা পেয়েছি, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ রহমত। তাই এখন আমাদের কর্তব্য হলো, রমজানের হক আদায় করা ও পবিত্রতা রক্ষা করা। নবীর (সা.) সম্মতি দেওয়া বদদোয়া থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং পাপ আর কলুষতা থেকে মুক্তি পেতে পবিত্র চিত্তে দোয়া করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, পদুয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা, ফেনী।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন রমজ ন ম স অন য ম স রমজ ন র দ য় কর র জন য ইরশ দ ক রআন বলল ন সওয় ব

এছাড়াও পড়ুন:

দরুদ কেন পড়ব

নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের উপকারিতা অনেক। সাধারণত প্রতিদান হিসাবে একবার দরুদ পাঠ করলে দশটি রহমত, দশটি পাপ মাফ এবং বেহেশতে দশ স্তরের মর্যাদার কথা জানা যায়। এ ছাড়াও দরুদ পাঠের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা সাধারণত খুব একটা আলোচনা করা হয় না।

প্রথমত, দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পালন করলে তিনি খুশি হন এবং তার নৈকট্য অর্জন হয়। দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত’ পড়েন। ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

দ্বিতীয়ত, দরুদ পড়া আমাদের ওপর নবীজির (সা.) একটি হক। দরুদ পড়লে তাঁর হক আদায় হয়। ইবনে আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে যথাযথ প্রতিদান দিতে, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যদি আমরা তাতে অপারগ হই, তবে যেন অন্তত দোয়া করি। আল্লাহ জানেন, আমরা রাসুলের (সা.) অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে অপারগ। তাই তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি দরুদ পাঠের। (ইমাম কাসতালানি, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩/৩২২)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫

তৃতীয়ত, নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তাঁর ওপর রহমত করেন। আর দোয়া একটি ইবাদত। নু’মান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি কবুল করব’ (সুরা গাফির: ৬০)।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৬৯)

সুতরাং যখন আমরা বারবার দরুদ পড়ব, তখন প্রকারান্তরে আমরা ইবাদতের মধ্যে থাকব।

চতুর্থত, দরুদ পাঠের সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। যেমন, আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত করবেন।’ এই ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কেবল পার্থিব নয়, বরং পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমতের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।

পঞ্চমত, দরুদ পাঠ করা আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্যে একটি সম্মান। সাইয়েদ কুতুব (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের দুরুদকে তার দুরুদের সঙ্গে এবং তাদের সালামকে তার সালামের সঙ্গে মিলিয়ে নেন।’ (সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ফি জিলালিল কুরআন)

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দরুদ কেন পড়ব