মুমিনের দুয়ারে হাজির হয়েছে দয়াময় আল্লাহতায়ালার রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের অশেষ ফল্গুধারায় অবগাহনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। পশ্চিমাকাশে গতকাল ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের চাঁদ উদয়ের পর তারাবি ও সাহ্রির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজার আনুষ্ঠানিকতা। আত্মশুদ্ধি, আত্ম-সংশোধন, আত্ম-উন্নয়ন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মহিমায় ভাস্বর এ মাসে মুমিন মুসলমান সবাই মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান।
ইসলামের বিধানে মাহে রমজান বছরের বাকি এগারো মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ পুরো কোরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বপ্রথম এ মাসেই অহি অবতীর্ণ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ’। –সূরা বাকারা: ১৮৫
সহিহ মুসলিম শরিফের ১০৭৯ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহতায়ালার রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।
অন্য এক হাদিসে এ মাসের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’। –সহিহ বুখারি: ৩২৭৭
রমজানুল মোবারক জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির পরওয়ানা লাভের এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা রমজানের প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’। –মুসনাদে আহমদ: ২২২০২
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি আমলের সওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ কিংবা তারও বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের ওমরাহ, হজ সমতুল্য’। –জামে তিরমিজি: ৯৩৯
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। –শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩০৫-৩০৬
অর্থাৎ এ মাসে নফল ইবাদতে অন্য মাসের ফরজের মতো সওয়াব হয়। আর এ মাসের একটি ফরজ আদায়ে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়।
এ তো হলো রোজা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের সওয়াব। আর রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দেব।’ –সহিহ মুসলিম: ১১৫১
যেহেতু রমজান রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভের মাস; তাই এ মাস পেয়েও যে ব্যক্তি নিজ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার জন্য হজরত জিবরাঈল (আ.
হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) মিম্বরে উঠে তিনবার আমিন, আমিন, আমিন বললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূল! আপনি তো এমন করতেন না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাঈল (আ.) আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার কাছে আমার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। –আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৪৬
রমজানের মতো এমন বরকতময় মাস আমরা পেয়েছি, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ রহমত। তাই এখন আমাদের কর্তব্য হলো, রমজানের হক আদায় করা ও পবিত্রতা রক্ষা করা। নবীর (সা.) সম্মতি দেওয়া বদদোয়া থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং পাপ আর কলুষতা থেকে মুক্তি পেতে পবিত্র চিত্তে দোয়া করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, পদুয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা, ফেনী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রমজ ন রমজ ন ম স অন য ম স রমজ ন র দ য় কর র জন য ইরশ দ ক রআন বলল ন সওয় ব
এছাড়াও পড়ুন:
ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের
কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।
ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।
গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।
যেভাবে শুরু
মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।