সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস ছিল গতকাল রোববার। তবে বদলে গিয়েছিল জীবনযাত্রার চেনা ছক। সকালবেলা মুখে কিছু না তুলেই অফিস-কাছারি পথে পা বাড়িয়েছেন লোকজন। জীবন–জীবিকার দায় মেটাতে যাঁর যা কাজ তাতে নিয়োজিত হয়েছেন। এদিকে বেলা যায় তবু ক্ষুধা–তৃষ্ণার কথা মুখে নেই। পবিত্র মাহে রমজান পাল্টে দিয়েছে ব্যক্তিজীবন থেকে ঘরসংসারের গতানুগতিক কাজের ধারা।
শনিবার সন্ধ্যায় রমজান মাসের চাঁদ দেখার ঘোষণার পর থেকেই মূলত মাহে রমজানের আবহ ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম পরিবারগুলোয়। এশার নামাজের পর সারা দেশে মসজিদগুলোয় খতম তারাবিহর প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীতে মসজিদগুলোয় এশার ওয়াক্ত থেকেই নামাজিদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। অধিকাংশ বাড়িতেই বরাবরের চেয়ে তুলনামূলক আগেই রাতের খাবার পর্ব শেষ করা হয়। গৃহিণীরা প্রস্তুতি নেন শেষরাতে সাহ্রির খাবারের আয়োজন করতে।
সকালে নাশতা তৈরি নিয়ে যে ব্যস্ততা থাকে, গতকাল তা ছিল না। বেলা গড়ানোর পর থেকে বাড়তে থাকে ইফতারের প্রস্তুতি। প্রথম রোজায় সবাই চেষ্টা করেছেন পরিবারে সবাইকে নিয়ে সাধ্যমতো উপাদেয় খাদ্য-পানীয় দিয়ে ইফতার করতে। রমজান উপলক্ষে অফিসের সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণে চাকরিজীবীরা হাতের কাজ শেষ করে দ্রুত বাসাবাড়িতে ফেরার পথ ধরেন। অনেকে ফেরার আগে কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, ইফতারির দোকানগুলোয় গেছেন কেনাকাটা করতে।
গতকাল হোটেল–রেস্তোরাঁর ঝাঁপ ছিল বন্ধ। ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোর সামনেও পর্দা ঝুলিয়ে খানাপিনার দৃশ্যে আড়াল টানা হয়। দুপুরের পর পাড়া–মহল্লার মোড়ে, হোটেল–রেস্তোরাঁর সামনে বসে যায় ঝাল-মিষ্টি, ভাজাপোড়ার হরেক রকম উপকরণ সাজিয়ে ইফতারির পসরা।
ইফতারে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, বুন্দিয়া—এগুলোই বাঙালির প্রধান ও প্রিয় খাবার। এর সঙ্গে থাকে মাংস, সবজির বিভিন্ন ধরনের পদ, পরোটা, বিরিয়ানি ও মিষ্টি। মাংসের অনেক রকমের কাবাব, ভুনা, রোস্ট এসব দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন ঢাকার বাসিন্দারা। এর পাশাপাশি হালিমও ইফতারের তালিকায় বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। সারা দিনের তৃষ্ণা নিবারণ ও শরীরে পানির ঘাটতি পূরণের জন্য ডাব বা লেবুর শরবতই অনেকের কাছে প্রিয়।
পুরান ঢাকার চকবাজারে চকশাহি মসজিদের সামনে পয়লা রমজান দুপুর থেকে বসে ইফতারির বাজার। বহু বছর ধরে চলছে এই বৈচিত্র্যময় ইফতারসামগ্রীর পসরা। বেইলি রোডের ইফতারিও বিখ্যাত। বিকেলে দেখা গেল ক্যাপিটাল কনফেকশনারির আয়োজনে বসেছে ইফতারির বাজার। এবার এখানে আছে ১০০ রকম পদ। জিলাপির কেজি ৪০০ টাকা। পাশেই নবাবি ভোজের ইফতারির পসরায় আছে ৫০ রকমের পদ। ব্যবস্থাপক ইমাম হোসেন জানালেন, তাঁদের কাচ্চি, মোরগ–পোলাও ৩০০ ও স্পেশাল গরুর তেহারি ৩৫০ টাকা। জ্যাগেরি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক জানালেন তাঁদের ইফতারির তালিকায় আছে প্রায় ৬০টি পদ। গরুর হালিম ৩৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ আর খাসির হালিম ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। বেইলি পিঠাঘর এখন সাজিয়েছে ৩০ রকমের ইফতারির পসরা।
সেগুনবাগিচায় রয়্যাল অ্যারোমা কারি অ্যান্ড কাবাব তাদের রেস্তোরাঁর সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে তার তলায় সাজিয়েছে প্রায় অর্ধশত পদের ইফতারি। ব্যবস্থাপক সবুজ মিয়া বললেন, তাঁরা দাম বাড়াননি। ইফতারিতে লাভ কম করে বেশি মানুষের হাতে উপাদেয় খাবার তুলে দেওয়ারই চেষ্টা করছেন তাঁরা।
দুপুরের পর থেকেই ইফতারির দোকানগুলোয় বেচাকেনার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। পথে যানজট ও যানবাহনেও যাত্রীদের ভিড়ও ছিল বেশি। বেলা যখন অস্তাচলে, ইফতারি সামনে নিয়ে বসেছেন রোজাদাররা। সারা দিন পানাহারে বিরত থেকে অপেক্ষা মাগরিবের আজানের ধ্বনির জন্য। ইফতারি মুখে তোলার আগে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে নিজেদের রোজা কবুল ও পাপ মার্জনার জন্য সবিনয়ে কাতর প্রার্থনা করেছেন। আরও প্রার্থনা করেছেন, তিনি যেন তৌফিক দেন রমজানের সংযমের শিক্ষায় আত্মশুদ্ধি করে নিতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত র র প র র পসর র ইফত র র স মন রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।
গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।
আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।
আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।
নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।
অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।
চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।