সাবেক আইনমন্ত্রীর সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো হচ্ছে
Published: 3rd, March 2025 GMT
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মালিকানায় থাকা সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো শুরু করেছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। ইতিমধ্যে ব্যাংকটিতে দুজন নতুন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই দুজন ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এ ছাড়া সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুমেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর স্থলে ব্যাংক এশিয়ার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেনকে এমডি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর এই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
জানা যায়, সিটিজেনস ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ এটিকে ব্যাংক এশিয়ার আদলে করপোরেট মডেলে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই কারণে শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাংক এশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের পঞ্চম প্রজন্মের ব্যাংকটি ২০২০ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পায়। তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। তিনি মারা যাওয়ার পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ তৌফিকা আফতাবকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়।
ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, সিটিজেনস ব্যাংকে আনিসুল হকের শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া পোশাক খাতের আরও সাত ব্যবসায়ীর রয়েছে ১০ শতাংশ করে শেয়ার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট এক চিঠিতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সিটিজেনস ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাবের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তৌফিকা আফতাব আনিসুল হকের আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত।
সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান সালমা গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমানকে ডিএমডি হিসেবে সিটিজেনস ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। এর বাইরে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফকেও সিটিজেনস ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ব্যাংক এশিয়ার প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।
জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মাসুমের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই নতুন এমডি হিসেবে ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি আলমগীর হোসেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায়। এখন এমডির এই নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব ওয়াহেদ ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এমডি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ২০২০ সালে অনুমোদন পেলেও ব্যাংকটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সারা দেশে ব্যাংকটির ১৫টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটির সর্বশেষ ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। আর এ সময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩৮ কোটি টাকা।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। ওই বছর ব্যাংকটি কর–পরবর্তী প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান করেছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক আইনমন ত র ড এমড
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে ইসরায়েল কি পশ্চিমা বিশ্বেও একঘরে হয়ে যাচ্ছে
ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পশ্চিমা মিত্রদেশ এখন রাজনৈতিক চাপে পড়েছে। এ চাপ আসছে দেশগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। কারণ, গাজার বাসিন্দাদের অনাহারে থাকার তথ্য-প্রমাণ তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
গাজাবাসী যে না খেয়ে আছেন, তা মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূতকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছেন। সেখানে গিয়ে তিনি গাজার বিশৃঙ্খল খাদ্য বিতরণব্যবস্থা দেখবেন।
গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করছে কি না, তা নিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবী এখন প্রশ্ন তুলছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে করা জরিপে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ইসরায়েলকে নিয়ে আরও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এ যুদ্ধ শেষ করার স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের প্রতি এ অবিশ্বাস নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, গাজায় অনাহারের তথ্য অতিরঞ্জিত, হামাসকে ধ্বংস করা দরকার, সমালোচনাকারীরা অনেকেই ইহুদিবিদ্বেষী। নেতানিয়াহুর মতে, পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা হবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য হামাসকে পুরস্কৃত করা।
ইসরায়েলি রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক নাটান স্যাকস বলেন, একে একই ধরনের আরেকটি সমস্যা হিসেবে মনে করছে ইসরায়েল। কিন্তু তারা বিশ্বের মনোভাব বুঝতে ভুল করছে। কারণ, পুরো দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এখন বদলে যাচ্ছে। আর তরুণদের মধ্যে এ বদলটা সবচেয়ে বেশি।
গাজায় ব্যাপক অনাহার নিয়ে যখন মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, তখন বিশ্বমঞ্চে ইসরায়েল আরও একা হয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালে হামাসের সে হামলা এখনো ইসরায়েলিদের মনে গেঁথে আছে। কিন্তু গাজায় যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ আর অনাহার চলছে, তা বিশ্বের অন্যদের চোখে আরও বেশি পড়ছে এবং গুরুত্ব পাচ্ছে।
এপ্রিলে করা এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের ৫৩ শতাংশ এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে এ হার ছিল ৪২ শতাংশ।হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের মুক্তির জন্য গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় সাহায্য বন্ধ করে দেয়। তারপর তারা সেখানে নিজেরা খাবার বিতরণের চেষ্টা করে। কিন্তু তা বিশৃঙ্খল ও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের ত্রাণকেন্দ্রগুলোয় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন।
এ সংঘাত কখন শেষ হবে, তা কেউ জানে না। ইসরায়েল বহুবার গাজার বিভিন্ন জায়গা দখলে নিয়েছে, আবার ছেড়েও দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। নেতানিয়াহু এখনো জানাননি, সংঘাত শেষে হামাসের বদলে কে গাজা শাসন করবে। এ কাজে যাদের সহায়তা করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—সেই সৌদি আরব, মিসর বা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি নন তিনি।
গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য ফিলিস্তিনিদের ভিড়