বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র মাস রমজান শুরু হয়েছে। ২৯ বা ৩০ দিন ধরে মুসলিমরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবেন, যা তাঁদের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, রমজান মাস হলো সেই মাস, যখন ১ হাজার ৪০০ বছরের বেশি সময় আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)–এর ওপর প্রথম কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।

রোজায় তাকওয়া বা আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য দিনের আলোতে পানাহার, ধূমপান ও যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুসারী মানুষ।

প্রতিবছর রমজান কেন ভিন্ন ভিন্ন তারিখে শুরু হয়

প্রতিবছর রমজান মাস আগের বছরের তুলনায় ১০ থেকে ১২ দিন আগে শুরু হয়। কারণ, ইসলামিক বর্ষপঞ্জি মূলত চন্দ্র হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে তৈরি। চান্দ্রবছর সৌরবছরের তুলনায় ১১ দিন ছোট। তাই ২০৩০ সালে এক বছরে দুবার রমজান হবে। প্রথমটি ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এবং দ্বিতীয়টি ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে।

বিশ্বজুড়ে রোজার সময়

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনের আলো ভিন্ন ভিন্ন সময় পর্যন্ত থাকে।

এবার চিলি ও নিউজিল্যান্ডের মতো বিশ্বের সর্ব দক্ষিণের দেশগুলোতে মুসলমানরা প্রায় ১৩ ঘণ্টা রোজা রাখছেন। আর আইসল্যান্ড বা গ্রিনল্যান্ডের মতো সর্ব উত্তরের দেশগুলোতে বসবাসকারী মুসলমানরা ১৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে রোজা রাখছেন। সে হিসাবে তাঁরা সবচেয়ে বেশি সময় রোজা রাখছেন।

এ বছর উত্তর গোলার্ধে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য রোজার সময় কিছুটা কমে আসবে এবং ২০৩১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কমবে। বিষুবরেখার দক্ষিণে বসবাসকারী মুসলিমদের ক্ষেত্রে এর বিপরীতটি ঘটবে।

কোন শহরে রোজা সবচেয়ে বেশি সময় এবং কোন শহরে কম সময়

নিচে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে গড়ে কত ঘণ্টা রোজা রাখা হয়, তা তুলে ধরা হলো। রোজার প্রকৃত সময় ও দিন এবং গণনাপদ্ধতি অনুসারে পরিবর্তিত হবে:

- নুউক, গ্রিনল্যান্ড: ১৬ ঘণ্টা
- রেইকইয়াভিক, আইসল্যান্ড: ১৬ ঘণ্টা
- হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ড: ১৫ ​​ঘণ্টা
- অসলো, নরওয়ে: ১৫ ঘণ্টা
- স্টকহোম, সুইডেন: ১৫ ঘণ্টা
- গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড: ১৫ ​​ঘণ্টা
- বার্লিন, জার্মানি: ১৪ ঘণ্টা
- ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড: ১৪ ঘণ্টা
- মস্কো, রাশিয়া: ১৪ ঘণ্টা
- আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস: ১৪ ঘণ্টা
- ওয়ারশ, পোল্যান্ড: ১৪ ঘণ্টা
- আস্তানা, কাজাখস্তান: ১৪ ঘণ্টা
- ব্রাসেলস, বেলজিয়াম: ১৪ ঘণ্টা
- লন্ডন, যুক্তরাজ্য: ১৪ ঘণ্টা
- জুরিখ, সুইজারল্যান্ড: ১৪ ঘণ্টা
- বুখারেস্ট, রোমানিয়া: ১৪ ঘণ্টা
- সারায়েভো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: ১৪ ঘণ্টা
- সোফিয়া, বুলগেরিয়া: ১৪ ঘণ্টা
- রোম, ইতালি: ১৪ ঘণ্টা
- মাদ্রিদ, স্পেন: ১৪ ঘণ্টা
- প্যারিস, ফ্রান্স: ১৪ ঘণ্টা
- আঙ্কারা, তুরস্ক: ১৪ ঘণ্টা
- নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: ১৪ ঘণ্টা
- অটোয়া, কানাডা: ১৪ ঘণ্টা
- বেইজিং, চীন: ১৪ ঘণ্টা
- অ্যাথেন্স, গ্রিস: ১৩ ঘণ্টা
- লিসবন, পর্তুগাল: ১৩ ঘণ্টা
- টোকিও, জাপান: ১৩ ঘণ্টা
- ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: ১৩ ঘণ্টা
- লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্র: ১৩ ঘণ্টা
- তিউনিস, তিউনিসিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- তেহরান, ইরান: ১৩ ঘণ্টা
- কাবুল, আফগানিস্তান: ১৩ ঘণ্টা
- নয়াদিল্লি, ভারত: ১৩ ঘণ্টা
- ঢাকা, বাংলাদেশ: ১৩ ঘণ্টা
- রাবাত, মরক্কো: ১৩ ঘণ্টা
- দামেস্ক, সিরিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- ইসলামাবাদ, পাকিস্তান: ১৩ ঘণ্টা
- বাগদাদ, ইরাক: ১৩ ঘণ্টা
- বৈরুত, লেবানন: ১৩ ঘণ্টা
- আম্মান, জর্ডান: ১৩ ঘণ্টা
- গাজা সিটি, ফিলিস্তিন: ১৩ ঘণ্টা
- কায়রো, মিসর: ১৩ ঘণ্টা
- দোহা, কাতার: ১৩ ঘণ্টা
- দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১৩ ঘণ্টা
- খার্তুম, সুদান: ১৩ ঘণ্টা
- রিয়াদ, সৌদি আরব: ১৩ ঘণ্টা
- আবুজা, নাইজেরিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- এডেন, ইয়েমেন: ১৩ ঘণ্টা
- ডাকার, সেনেগাল: ১৩ ঘণ্টা
- আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- বুয়েনস এইরেস, আর্জেন্টিনা: ১৩ ঘণ্টা
- কলম্বো, শ্রীলঙ্কা: ১৩ ঘণ্টা
- কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- মোগাদিসু, সোমালিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- সিউদাদ দেল এস্তে, প্যারাগুয়ে: ১৩ ঘণ্টা
- নাইরোবি, কেনিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- হারারে, জিম্বাবুয়ে: ১৩ ঘণ্টা
- জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- লুয়ান্ডা, অ্যাঙ্গোলা: ​​১৩ ঘণ্টা
- ব্যাংকক, থাইল্যান্ড: ১৩ ঘণ্টা
- ব্রাসিলিয়া, ব্রাজিল: ১৩ ঘণ্টা
- জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩ ঘণ্টা
- মন্টেভিডিও, উরুগুয়ে: ১৩ ঘণ্টা
- ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া: ১৩ ঘণ্টা
- পুয়ের্তো মন্ট, চিলি: ১৩ ঘণ্টা
- ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড: ১৩ ঘণ্টা

বিভিন্ন ভাষায় রমজানের শুভেচ্ছা

মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে রমজানের জন্য প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষার শুভেচ্ছা বার্তা রয়েছে। ‘রমজান মোবারক’ এবং ‘রমজান কারিম’ বলে সবচেয়ে বেশি রমজানের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য বছর র রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ