পশুপাখি নিয়ে কাজ করেন টালিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি। সম্প্রতি পশুপ্রেম এবং তাদের নিয়ে কাজ করার জন্য সম্মানিতও হয়েছেন তিনি। এর ঠিক পর শেয়ার করেন একটি ইঙ্গিত পূর্ণ পোস্ট, যা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

অভিনেত্রী লেখেন, ‘কিছু কিছু মানুষ ভয়ংকর আক্রমণাত্মক হয়েই আছে। ধর্ষণ করছে, খুন করছে। আমাদের মেয়েদের ভয় লেগেই আছে বাস, ট্রেন, অফিস-বন্দর, বাড়ি কি স্কুল-কলেজে। কি করছেন সেটার ব্যাপারে যদি একটু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন প্লিজ!’

অনেকেই এদিন অভিনেত্রীর পোস্টে মন্তব্য করেছেন। কেউ তাকে সমর্থন করেছেন। কেউ আবার সমালোচনা করেছেন।

এক ব্যক্তি অভিনেত্রীর ভাবনার বিরোধিতা করে লেখেন, ‘রাস্তার কুকুর মাঝেমধ্যেই কামড়ায়। সেই কামড় খেলে যে ইঞ্জেকশন খেতে হয় বেশিরভাগ হাসপাতালে সেই ওষুধ পাওয়া যায় না। আমিও কুকুরপ্রেমী। কুকুর থেকে ভয় পাওয়ার সাথে খুন-ধর্ষণকে জুড়ে দেওয়ার ন্যাকামিটা হাস্যকর লাগলো। রাস্তার কুকুরের ভ্যাক্সিনেশন, স্টেরিলাইজেশন, হাসপাতালে ওষুধ মজুত রাখার জন্য জনগণ যাদের পয়সা দিয়ে পোষে, সেই সরকারী মন্ত্রী সান্ত্রীদের সঙ্গে যখন পরের বার ওঠবস করবেন, তখন তাদের এই লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অনুরোধ জানানোর অনুরোধ জানিয়ে রাখলাম। আপনি সেলিব্রেটি। আপনার কথায় কাজ হতে পারে।’

তৃতীয় ব্যক্তি লেখেন, মানুষ অন্যায় করলে তো একটা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে বিচার হয়। কুকুর ভুলভাবে নিরীহ মানুষকে কামড়ালে তার বিচার কোথায় হয়? আপনি তুল্যমূল্যটায় আনলেন তাই বললাম।' চতুর্থ ব্যক্তি লেখেন, 'প্রসঙ্গ যাই হোক না কেন এই মহিলার সব সময় রেপ ভিকটিম কার্ড খেলতেই হয়।

অনেকেই আবার স্বস্তিকাকে সমর্থন করেছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, ‘একদম ঠিক কথা বলেছেন।’ দ্বিতীয় ব্যক্তি লেখেন, ‘সপাটে সত্যি কথা বলে দিলেন।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এদিন একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেই তিনি জানালেন নির্বাকদের কণ্ঠ হয়ে ওঠার জন্য এই সম্মান পেয়েছেন। স্বস্তিকা লেখেন, ‘এই পুরস্কারটা আমার জীবনের সাবিত্রী এবং ফুলকিদের জন্য।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ