শ্রমিকপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত
Published: 4th, March 2025 GMT
শ্রমিকপক্ষের অনেক আপত্তি আমলে না নিয়েই শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার এ খসড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখাবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০-২০ মার্চ অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকেও উপস্থাপন করা হবে খসড়াটি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে চলতি মার্চ মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হচ্ছে না। কারণ, আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক শেষ করার পর দেশে ফিরে মার্চ মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা যাবে না। শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে অনুমোদন হওয়ার পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
বাংলাদেশ গত বছরের জুনে ১১২তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০২৪-২৭ মেয়াদের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইএলওর গভর্নিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়। পটপরিবর্তনের পর গত বছরের নভেম্বরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে যোগ দিতে নেতৃত্ব দেন ওই সময়ের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
দেশে ফিরে গত ১০ নভেম্বর আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা পাওয়া গেছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। একই ব্রিফিংয়ে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছিলেন, শ্রম আইন সংশোধন করে মার্চ মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
শ্রমসচিব গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন সংশোধনের খসড়াটি যে চূড়ান্ত করা হয়েছে, আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে তা আমরা তুলে ধরতে পারব।’ এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) কাছে এ তথ্য জানিয়ে শ্রমিকপক্ষ বলেছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত বিবেচনা করা হয়েছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা। এমনকি শ্রমিকের সংজ্ঞাটিও ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। রাখা হচ্ছে না স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারও। ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে আইএলওর বিধানও মানতে পারছে না সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাকরির নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের দায় নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের মতামত আমলে নেওয়া হয়নি।
শ্রমিকনেতা ও টিসিসিতে নিযুক্ত শ্রমিকপক্ষের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম আইনের সংশোধনীটি শ্রমিকবান্ধব হচ্ছে না। আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, এমন পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ছয় মাস, পোশাক খাতের জন্য চার মাস। আবার অনানুষ্ঠানিক খাতে ছুটির বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। আমরা চাই মাতৃত্বকালীন ছুটি সবার জন্য একই হোক। কিন্তু শ্রম আইনে তা করা হচ্ছে না।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রম উপদেষ্টা
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান স্বীকার করতে হবে। সকল সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ওএসএইচ কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা একথা বলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০৩ সাল থেকে ২৮ এপ্রিলকে পেশাগত দুর্ঘটনা ও রোগ প্রতিরোধের প্রচার এবং কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিবস পালন করে আসছে। এ বছরে দিবসটি উদযাপনের প্রতিপাদ্য- ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের রূপান্তর: বাংলাদেশে ওএসএইচ-এর ভবিষ্যৎ’।
তিনি বলেন, এই প্রতিপাদ্য আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শ্রমজীবী মানুষ- তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
পরিবহন সেক্টরে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিক ইনফরমাল সেক্টরের। কর্মক্ষেত্রে এ সকল শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, এছাড়াও নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকে। আমরা কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। যে সকল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি শ্রম আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত না তাদেরকে কোনো দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা ।
উপদেষ্টা আরো বলেন, সম্প্রতি রাজশাহীতে ডিআইআই-ই-এর অধীনে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি শ্রমিক দুর্ঘটনা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থার মাধ্যমে, কারখানার শ্রমিক, মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আগ্রহী সংস্থা ও ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এই সংস্থা বাংলাদেশের শ্রম খাতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সামগ্রিক উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়ন, পেশাগত দুর্ঘটনা, পেশাগত রোগ এবং শ্রমিকদের কল্যাণ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী ওএসএইচ সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক, সুশীল সমাজ এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি এবং গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ