কাঠামোর বাইরে ‘চলমান শিক্ষায়’ উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশিকা চীনে
Published: 4th, March 2025 GMT
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছরের চলমান শিক্ষা কর্মসূচি এবং ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে প্রতিভা বিকাশকে জাতীয় কৌশল ও বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অব্যাহত বা কাঠামোর বাইরে শিক্ষাকে তাদের প্রতিভা বিকাশ ও সামাজিক সেবা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
এতে আরো বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের শিক্ষাগত অবস্থান, একাডেমিক সামর্থ্য, বাজারের চাহিদা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি বিবেচনা করা। সেইসঙ্গে নতুন কর্মসূচি চালুর আগে যৌক্তিকতা যাচাই এবং এসব কর্মসূচির কাঠামো নিয়মিত উন্নত করাও দরকার বলে জানানো হয় এতে।
অব্যাহত বা চলমান শিক্ষা চীনের নিয়মিত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার একটি সমান্তরাল ধারা। সাধারণত নিয়মিত উচ্চশিক্ষা বলতে বোঝায় চীনের কাওখাও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসভিত্তিক পূর্ণকালীন শিক্ষা। অন্যদিকে, অব্যাহত শিক্ষা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, যারা দক্ষতা উন্নয়ন বা নতুন যোগ্যতা অর্জন করতে চান। এটি অনলাইন শিক্ষা, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষার স্বশিক্ষা পরীক্ষা এবং উন্মুক্ত শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোর সমন্বয়ে তৈরি।
অব্যাহত শিক্ষা কর্মসূচির কাঠামো উন্নত করতে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদের শর্ত পূরণের সক্ষমতা আছে, তারা উন্নত উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জীবনবিজ্ঞান, জ্বালানি, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আর্থিক প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচি চালু করতে পারে। পাশাপাশি, গৃহস্থালি সেবা ও অন্যান্য জনসেবামূলক খাতেও এ ধরনের শিক্ষাক্রম চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার, দুর্লভ ভাষা, বৈদেশিক আইনি ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মতো জরুরি চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্রেও নতুন কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।
২০২২ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অব্যাহত শিক্ষা সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল অস্পষ্ট অবস্থান, অপর্যাপ্ত মানদণ্ড, দুর্বল কাঠামো এবং নিম্নমানের প্রতিভা বিকাশের সমস্যা সমাধান করা, পাশাপাশি উচ্চমানের শিক্ষা উন্নয়নকে উৎসাহিত করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ১,৭২৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাঠামোর বাইরে শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে, যেখানে মোট ১ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল—যা দেশের মোট উচ্চশিক্ষা ভর্তির প্রায় ২৫ শতাংশ।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অব্যাহত শিক্ষা কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে প্রাপ্তবয়স্কদের কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। এ ছাড়া, পেশাদার শিক্ষার মৌলিক মানদণ্ড বজায় রাখা, ন্যূনতম অধ্যয়নকাল নির্ধারণ এবং স্নাতক সনদ প্রক্রিয়াকেও এর মধ্যে অন্তুর্ভুক্ত করা হবে।
তথ্য ও ছবি: চায়না ডেইলি
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।