যে বয়সে মানুষ জীবনের পাওয়া না–পাওয়ার হিসাব কষতে বসেন, সেই বয়সে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন ৮৭ বছর বয়সী কিম গ্যাপ-নিও। দক্ষিণ কোরিয়ার এই নারী আগামী মাসে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুরু করতে চলেছেন।

জীবন সব সময়ই কিমের সামনে কঠিন রূপ নিয়ে এসেছে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের চাপে ছাড়তে হয় লেখাপড়া। কিশোর বয়সে বিয়ে করবেন না বলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন, শুরু হয়েছিল নতুন এক সংগ্রাম।

জীবনভর সাহসের সঙ্গে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গেছেন কিম। তবে সব সময় মনের কোণে লালন করেছেন ছোটবেলার অপূর্ণ এক ইচ্ছা।

কিমের জন্ম ১৯৩৮ সালে। কোরিয়া জাপানের দখলমুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেন কিম। কিন্তু ছোট ভাইবোনদের লালন-পালনের জন্য মায়ের আদেশে লেখাপড়ার ইতি টানতে হয় তাঁকে। কিমের ১৭ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের সংকট আরও গভীর হয়। মা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেন।

তবে বিয়েতে মোটেই রাজি ছিলেন না কিশোরী কিম। বাড়ি থেকে পালিয়ে বুসানে চলে যান, একটি জুতার দোকানে কাজ নেন। এক বছর পর সেখান থেকে চলে যান সিউলে। সেখানে করেছেন নানা কাজ। বিয়ে করেন, জন্ম হয় পাঁচ মেয়ের। স্বামী অসুস্থ থাকায় পাঁচ মেয়েকে বড় করার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই বর্তায়।

১৫ বছর রোগে ভুগে স্বামী যখন মারা যান, তখন কিমের বয়স ৪৭। তখনো তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এভাবে দায়িত্ব পালন করতে করতে ৮০ বছর বয়স হয়ে যায় তাঁর।

তত দিনে অবশ্য দায়িত্ব থেকে খানিকটা ফুরসত মিলেছে। কিম সিদ্ধান্ত নেন, বিদ্যালয়ে ফিরবেন। এক বন্ধুর সহযোগিতায় ভর্তি হন ইয়াংওন এলিমেন্টারি স্কুলে। যাঁরা শৈশবে লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, তাঁদের ওই স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়। এরপর ইলসাং উইমেন্স হাইস্কুলে।

বিদ্যালয়ের দিনগুলো দারুণ কেটেছে জানিয়ে এই বৃদ্ধা বলেন, স্কুলব্যাগ কাঁধে ঝোলালেই নিজেকে কিশোরী মনে হতো।

সহপাঠীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন কিম, ইতিহাস পড়তে ভালোবাসতেন। অংক আর ইংরেজি শিখতে বেশ কষ্ট হয়েছে বলে জানান। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সাফল্যের সঙ্গে হাইস্কুল পাস করেন কিম।

আগামী মাসে সুকমইয়াং উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন এই নারী, পড়বেন সমাজ কল্যাণ নিয়ে। কিম বলেন, ‘আমার কোনো লক্ষ্য নেই। আমি শুধু পড়তে ভালোবাসি, আর মানুষের সঙ্গে থাকতে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা

খুলনায় মাত্র আট ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মনোয়ার হোসেন টগর নামে এক যুবক এবং শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুরে আল-আমিন সিকদার নামে এক ভ্যানচালক খুন হন। 

দিঘলিয়ায় ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা
পুলিশ জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর নন্দনপ্রতাপ গ্রামে আল-আমিন সিকদার (৩৩) নামে এক ভ্যানচালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আল-আমিন ওই গ্রামের কাওসার শিকদারের ছেলে।

দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম শাহীন বলেন, “আল-আমিনের স্ত্রীর সাবেক স্বামী মো. আসাদুল ঝিনাইদহ থেকে এসে অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর আসাদুল পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।”

ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নগরীতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
অপরদিকে, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন সবুজবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হন মনোয়ার হোসেন টগর (২৫) নামে এক যুবক। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা জামাল হাওলাদারের ছেলে। 

স্থানীয়রা জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে কয়েকজন যুবক টগরের বাড়িতে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই আবদুল হাই বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হত্যাকারীরা টগরের পূর্ব পরিচিত।  তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ