নখ আপনার স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বুঝতে পারছেন তো?
Published: 5th, March 2025 GMT
দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদভ্যাস অনেকেরই আছে। নখের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও থাকে না অনেকের মাথায়। নখ আমাদের হাত ও পায়ের আঙুলকেই শুধু রক্ষা করে না, আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু খাবার খেতে পারেন নিয়মিত। পুষ্টি–গবেষক নাফরিনা হক বলেন, ‘নখ ক্যারাটিন নামের শক্ত ধাঁচের প্রোটিন দিয়ে গঠিত। এই প্রোটিন চুল ও ত্বকের বাইরের স্তরে পাওয়া যায়। নখের বৃদ্ধি মূলত নখের নেইল ম্যাট্রিক্স কোষের ওপর নির্ভর করে। নখের গোড়ায় কিউটিকলের নিচে অবস্থিত এই বিশেষ কোষের মাধ্যমে নখ বড় হয়। নতুন ম্যাট্রিক্স কোষ তৈরি হওয়ার সময় ধীরে ধীরে পুরোনো কোষকে (নখ) বাইরে ঠেলে বড় হয়। হাতের আঙুলের নখ প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিমিটার বৃদ্ধি পায়। আর পায়ের নখ প্রতি মাসে ১.
নখের স্বাস্থ্য আদতে আমাদের শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার প্রতিফলন বলা যায়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে শক্তিশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল নখ তৈরি হয়। ভঙ্গুর নখের অর্থ হচ্ছে আপনার পুষ্টির অভাব বা হাত অতিরিক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান, নখ মজবুতকারী তেল ব্যবহার করুন। নখে হলুদ ভাব দেখা দিলে বুঝতে হবে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেইলপলিশ কম ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে টি–ট্রি অয়েল ব্যবহার করুন। নখের ওপর দাগ দেখা গেলে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে, তখন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। নখে সাদা দাগের অর্থ জিংকের ঘাটতি, তখন জিংকসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
আরও পড়ুননখের কোনা দেবে গেলে২৪ আগস্ট ২০২২যেভাবে নখ দ্রুত বাড়েনখের বৃদ্ধিতে জেনেটিকসের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বড়দের তুলনায় শিশু ও কম বয়সীদের নখ দ্রুত বাড়ে। হরমোন নখের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। রক্ত সঞ্চালন ও বিপাকীয় কার্যকলাপ বৃদ্ধির কারণে গর্ভাবস্থায় নখ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এ ছাড়া সুস্থ শরীরে ভালো রক্ত সঞ্চালনের কারণে নেইল ম্যাট্রিক্স কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ ঠিক থাকে। তখন নখের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি দেখা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা এবং নখ ম্যাসাজ করলে রক্তপ্রবাহ উন্নত হয়, তখন নখ বৃদ্ধির গতি বাড়ে। সুস্থভাবে নখের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ও খনিজের প্রয়োজন হয়। বায়োটিন, আয়রন, জিংক ও প্রোটিনের অভাবে নখের বৃদ্ধিতে ধীরগতি দেখা যায়। তখন নখ ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত সূর্যালোকের সংস্পর্শে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকলে শীতের তুলনায় গ্রীষ্মকালে নখ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ডিহাইড্রেশনের ফলে নখ ভঙ্গুর হতে পারে। তখন নখ সহজেই ভেঙে যায়, সামগ্রিক বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া ও নখ নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করলে নখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
রাসায়নিক দ্রব্যাদি নখের ক্ষতি করেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।