মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে? এভাবে সামলান
Published: 5th, March 2025 GMT
অন্য কারও জন্য নিজের মেজাজ বিগড়ে যেতে না দেওয়াটাই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সব সময় মনে রাখবেন, আপনার জীবনের প্রশান্তির চাবিকাঠি আপনার হাতে রয়েছে। অন্যের কথা বা কাজকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। যাঁর কারণে আপনার মেজাজ বিগড়ে গেল, তিনি যদি আপনার কাছের কেউ হয়ে থাকেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তাঁর সঙ্গে পরে বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। আর তিনি যদি কাছের মানুষ না-ই হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে এত ‘পাত্তা’ দেওয়ারই–বা কী আছে!
এই জীবনবোধকে যদি অন্তরে ধারণ করতে পারেন, তাহলে হুটহাট মেজাজ গরম হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। তারপরও চোখের সামনে এমন কিছু যদি ঘটতে দেখেন, মেজাজ গরম হতে শুরু করে, তখন নিজেকে সামলানোর উপায়গুলোও জেনে রাখুন। এমনকি কখনো কখনো মেজাজ হারালেও পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিয়ে কিছু কাজ করতে পারেন। তাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অশান্তি এড়ানো আরও সহজ হবে। এ প্রসঙ্গে জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
আরও পড়ুনকর্মক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে ১৮ আগস্ট ২০২৩সময় নিন
যত খারাপ আচরণই কেউ আপনার সঙ্গে করুন না কেন, প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে সময় নিন। লম্বা করে শ্বাস নিন, গভীরভাবে। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাওয়ার মতো ঠিক কী ঘটেছে, তা ভাবুন। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করুন। হুট করে একটা ‘উচিত জবাব’ দিয়ে কিংবা চিৎকার-চেঁচামেচি করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করাটা আদতে কোনো ভালো সমাধানের দিকে আপনাকে নিয়ে যাবে না। আর ও রকম আচরণে আপনার সম্মানও বাড়বে না।
ইতিবাচক হোন
সাময়িকভাবে যেটিকে ‘উচিত জবাব’ ভাবছেন, আদতে সেটি হয়তো ইতিবাচক কিছু নয়। তাই জবাব দিতে হলে ইতিবাচকভাবেই দিন। কোন বিষয়টা আপনাকে ব্যথিত করছে, অপর পক্ষকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিংবা চুপ করে থাকতে পারেন। কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠে রাগ প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে মনে হলে থেমে যান। প্রয়োজনে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর কথা বলুন। কেউ আপনাকে বা আপনার পরিবারকে অসম্মান করলেই তো আর আপনি বা আপনার পরিবার অসম্মানিত হয়ে যাচ্ছে না! বরং নিজের পরিবারের সম্মানের জায়গাটা বুঝিয়ে দিতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখুন। অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মহত্ত্ব কিন্তু সবার থাকে না।
আরও পড়ুনরাগী মানুষের মন কি আসলেই ভালো?০১ মার্চ ২০২৪মন নিয়ন্ত্রণ করুন
মেজাজ হারাচ্ছেন বলে অনুভব করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্য কোনো বিষয়ের দিকে মন সরিয়ে নিন। বাড়িতে মেজাজ খারাপ হলে ঘরের কাজে মন দিতে পারেন। অফিসে মেজাজ বিগড়ে যেতে থাকলে ওই মুহূর্তে হয়তো টেবিল গোছালেন অথবা পাঁচ মিনিটের বিরতি নিন। ঘরে–বাইরে যেকোনো জায়গায় ওই মুহূর্তে সুযোগ পেলে নিজের পছন্দের অডিও ক্লিপ চালাতে পারেন, কানে দিতে পারেন এয়ারফোন। চোখ বুজে কল্পনা করতে পারেন প্রিয় কোনো দৃশ্য। আধ্যাত্মিক কোনো ভাবনাও ভাবতে পারেন। মেজাজ হারাতে থাকলে ওই জায়গা থেকে একটু দূরে সরে যাওয়া, হাঁটাহাঁটি বা অন্য ধরনের শরীরচর্চা, বই পড়া, টেলিভিশন দেখা, এগুলো ভালো কৌশল। একটা পিংপং বল ছোড়া আর ধরাও কিন্তু একটি চমৎকার কৌশল।
কখনো মেজাজ হারিয়ে ফেললে নিজে নিজে সেটির পর্যালোচনাও করুন। কোন পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়েছিলেন, ঠিক কী কী ঘটেছিল, সেই সময় আপনি কেমন বোধ করছিলেন এবং আপনার কী ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়েছিল, আপনি কী করেছিলেন, কী করতে পারতেন, এসব নিয়ে ভাবুন। ‘রাগের জার্নাল’ বানিয়ে সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াগুলো লিখে রাখতে পারেন। তাতে পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
আরও পড়ুনএই পাঁচ সময়ে চুপ থাকুন২৫ অক্টোবর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।