চ্যাম্পিয়নস লীগে বুধবার (৪ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ-অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এই ম্যাচে হয়েছে দৃষ্টি নন্দন তিন গোল। যা দেখে উপমা হিসেবে টেনে আনা যায় বাংলা চলচিত্রের দুই বিশ্ববিখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনকে।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেতিকোর বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে রিয়াল।

বাংলা চলচিত্রের তিন দিকপালকে টেনে আনা হলো একই ম্যাচের গোল গুলোর সৌন্দর্য বোঝাতে। আবার এই সৌন্দর্যের মাঝেই আছে ভীষন ‘প্রতিদ্বন্দ্বীতা’ কিংবা ‘রাইভালরি’; যার উত্তাপও টের পাওয়া যাবে এই উপমায়। সত্যজিৎ এর সিনেমা দেখে আরেক স্টিভেন স্পিলবার্গ ও মার্টিন স্কোরসিসরা অনুপ্রাণিত। বাংলা সিনেমার প্রথম বড় নাম মানিকবাবু খ্যাত সত্যজিৎ। তার কিছুদিন পরেই চলচিত্র শুরু করা ঋত্বিকও বেলাতার সহ বহু আধুনিক বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকের আদর্শ।

আরো পড়ুন:

চ্যাম্পিয়নস লিগ বলেই মাদ্রিদ ডার্বিতে এগিয়ে রিয়াল

ঘরের ছেলের ছোবলে হারল রিয়াল

সত্যজিৎ ও ঋত্বিক বাংলা সিনিমাকে অনেক উপরে নিয়ে গিয়েছেন। তবে সমসাময়িক এই দুই শিল্পী এক সাথে বহু আড্ডা দিলেও ছিল দর্শনগত আকাশ পালাত ফারাক। ‘হীরক রাজার দেশে’র মত রাজনৈতিক সিনেমা বানানোর পরও সত্যজিৎ সারাজীবনই রাজনীতির বাইরে কাহিনী বুনার চেষ্টা করেচ্ছিলেন। আর ঢাকার ছেলে ঋত্বিক ছিলেন আগাগোড়া নিপীড়িত মানুষের শিল্পী। এত কাছে থাকার পরও এই দুই পরিচালক যেমন ঠিক বিপরীত মেরুতে রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তা ভাবনায়, একই ভাবে মাদ্রিদ নগরীর ক্লাব হয়েও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল ও অ্যাটলেতিকো।

এদিকে গত রাতে ফ্রেডরিক ভালভারদের পাস থেকে রিয়ালকে ম্যাচের ৪ মিনিটেই এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রদ্রিগো। অন্যদিকে ম্যাচের ৩২ মিনিটে অ্যাাটলেতিকোকে সমতায় ফেরানো আলভারেজ হচ্ছেন আর্জেন্টিনার। দুজনে যে দুটা গোল করলেন তা এক কথায় নান্দনিক ও চোখের শান্তি। তবে দুজনই ক্লাব পর্যায়ে এবং জাতীয় দলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।

এখানেই শেষ না। আলভারেজের ক্যারিয়ারটা রিয়ালেই হওয়ার কথা ছিল। তবে রিয়ালের নিয়ম অনুসারে আলভারেজের বয়স ১৩’র কম হওয়াতে তিনি নাম লেখাতে পারেননি লস ব্ল্যাঙ্কসদের হয়ে। পরে তার রিভার প্ল্যাট ঘুরে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের গল্প সবারই জানা। খুব সূক্ষভাবে দেখলে স্পষ্ট হবে যে রিয়ালের সেই প্রত্যাখান মেনে নিতে পারেননি আলভারেজ। যখনই রিয়ালকে পেয়েছেন সামনে কিছু একটা প্রমাণের জন্য জ্বলে উঠেছেন। সিটির জার্সিতে ২০২৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে গোল পেয়েছিলেন। লস ব্ল্যাঙ্কসদের বিপক্ষে ৭ দেখায় ৩ গোল করেছেন।

আলভারেজ গতরাতের গোলটি করে ৬৬ বছরের এক বিশাল গোল খরা কাটিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৯৫৯ সালে (তখন ভিন্ন নাম ছিল) অ্যাটলেতিকোর হয়ে সবশেষ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গোল করেছিলেন চুজোর। তাছাড়া লেওনেল মেসির পর দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে রিয়ালের ঘরের মাঠে গোল করলেন আলভারেজ।

দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে ফের রিয়াল এগিয়ে যায়। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ফারলেন্দ মন্দির পাস নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাহিম ডিয়াজ। পায়ের কারুকাজে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে জায়গা বানিয়ে নেনে। তারপর অ্যাটলেতিকোর বিক্যাত ডিফেন্সের ফাঁক গলে কয়েকজনের মাঝ দিয়ে ডান পায়ের শটে বল জালে জড়িয়ে দেন।

শুরুতেই তিন জন পরিচালকের নাম নিয়েছিলাম। যার সর্বশেষ জন মৃণাল সেন। দিয়াজের গোলের সাথে মৃণালের সুদীর্ঘ চলচিত্র যাত্রার একটা বিশেষ মিল আছে। মৃণাল আগাগোড়াই এমন সিনেমা বানিয়েছেন যা বাংলা চলচিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী সারাজীবন রয়ে গিয়েছেন সত্যজিৎ ও ঋত্বিকের ছায়াতলে। অনেক ক্ষেত্রে সময় এবং পরিবেশ সিদ্ধান্ত নেয় কোন কাজটা বেশি সমাদৃত হবে। মৃণাল ফেঁসেছিলেন সেই ফাঁদে। একই ভাবে ম্যাচের সবচেয়ে দূরহ গোলটা করেও দিয়াজ চাপা পড়ে গিয়েছেন রদ্রিগো এবং আলভারেজের কৃর্তীর কাছে।

রিয়াল এই ম্যাচে জয় না পেলে, পিছিয়ে থেকেই দ্বিতীয় লেগে নামতে হতো। কারণ অ্যাটলেতিকোর মাঠ মেত্রোপলিতানোয় নক আউট ম্যাচ মানেই স্বাগতিকরা এগিয়ে থাকা। তবে ১ গোলের সুবিধা নিয়ে আগামী বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে অ্যাটলেতিকোর মুখোমুখি হবে রিয়াল।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ আতল ত ক ম দ র দ চ য ম প য়নস ল গ চলচ ত র আলভ র জ গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ জুন ২০২৫)
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • একঝলক (১৫ জুন ২০২৫)
  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স, ক্লাস শুক্র ও শনিবার