তথ্য কমিশন কার্যকর করতে অন্তর্বর্তী সরকার উদাসীন: তথ্য অধিকার ফোরাম
Published: 6th, March 2025 GMT
দেশে ছয় মাস ধরে তথ্য কমিশন নেই। এমন উদাহরণ বাংলাদেশেই প্রথম। বিশ্বে আর কোথাও এমন নজির পাওয়া যাবে না। তথ্য কমিশন কার্যকরে অন্তর্বর্তী সরকার উদাসীন। তারা এটি কার্যকরে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অবিলম্বে তথ্য কমিশন কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে তথ্য অধিকার আইনের বেশ কিছু ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করেছে তথ্য অধিকার ফোরাম।
তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা ও তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনী শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তথ্য অধিকার ফোরাম। আইন সংস্কারে লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয় এতে। আজকের সংবাদ সম্মলেন দ্রুত তথ্য প্রাপ্তিতে জোর দেন বক্তারা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তথ্য কমিশন কার্যকর নেই। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচন করে এটি কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে। তবে এতে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। একটি দেশে ছয় মাস ধরে কমিশন নেই, এটা বিব্রতকর। এর দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। তাদের এর জবাব দিতে হবে। একটা পর্যায়ে দলীয় ক্যাডার দিয়ে কমিশনের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সরকার নিশ্চয়ই তা করবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুব জরুরি। তাই রাজনৈতিক দলকেও তথ্য অধিকার আইনের অধীনে আনা উচিত। আইনকে আরও বিস্তৃত করা দরকার।
আগের সরকারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে তথ্য চেয়ে পাওয়া যায়নি, এটা কেন হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসিতে যেসব তথ্য থাকে, তার সব দিতে তারা বাধ্য। কেউ কেউ হলফনামা দিতেও গড়িমসি করে, এটা আইনের পরিপন্থী। এ আইনের বাস্তবায়ন নির্ভর করে নাগরিকদের ওপর। এর জন্য লড়াই করতে হবে।
তথ্য অধিকার ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, তথ্য কমিশন অকার্যকর হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, এ সরকারের এটার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আইনেরও অতি জরুরি কিছু সংস্কার দরকার। কমিশনকে সাংবিধানিক কমিশন করলে জবাবদিহি জোরালো হবে। কেন তথ্য কমিশনকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। আইনের সাফল্য এর ব্যবহারের ওপর। গত ১৫ বছর এটা ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে।
তথ্য অধিকার ফোরাম বলছে, গোপনীয়তার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের জন্যই তথ্য অধিকার আইন। এটি বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রস্তাব পেশ করার মধ্য দিয়ে মূলত দুটি দাবি জানিয়েছে তথ্য অধিকার ফোরাম। এর একটি হচ্ছে অবিলম্বে তথ্য কমিশন পুনর্গঠন করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে আইন সংস্কারে সরকারে উদ্যোগ গ্রহণ। সরকারের কাছেও প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করবে তারা। কমিশন কার্যকর না থাকায় মাঠপর্যায়ে অনেকে বলছেন, আইনটি আর কার্যকর নেই।
তথ্য অধিকার আইন সংশোধনে প্রস্তাব নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। এতে বলা হয়, আপিল কর্মকর্তা চিহ্নিত করতে অসুবিধায় পড়েন আবেদনকারীরা। এটি আরও সহজতর করতে হবে। সরকারের অংশীদারত্ব রয়েছে—এমন সব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতা বাড়াতে হবে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি আছে বা সরকারি কোনো সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স, অনুমোদন নিয়ে যারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদেরও তথ্য অধিকার আইনে তথ্য দিতে হবে। ইউনিয়ন কার্যালয়কে তথ্য প্রদান ইউনিট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা হয়েছে।
তথ্য কমিশনের নাম তথ্য কমিশন বাংলাদেশ করার প্রস্তাব করেছে তথ্য অধিকার ফোরাম। যত দ্রুত সম্ভব তথ্য সরবরাহ করতে আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে তারা। এতে বলা হয়, আবেদনের ২০ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, এটি বর্তমানে আছে ২০ কার্যদিবস। একাধিক কর্তৃপক্ষ হলে ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে হবে। তথ্য প্রদানে অপারগ হলে ১০ দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে। কমিশনে সংসদের দুজন প্রতিনিধি থাকেন, সংসদ কার্যকর না থাকলে এ দুজন প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আইনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রধান তথ্য কমিশনার বা কমিশনারের পদ শূন্য হলে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ সম্পূর্ণ করতে হবে। বর্তমানে তথ্য প্রদানে আপিল কর্মকর্তার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া বিষয়টি আইনে নির্দিষ্ট করা নেই। তাই এটি সংশোধন করে উপধারা ২৪ (৩)–এর অধীন তথ্য প্রদানে নির্দেশিত হলে উপধারা (১) ও (২)–এর ক্ষেত্রে ৭ দিনের মধ্যে এবং উপধারা (৪)–এর ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া তথ্য প্রদানে প্রতিবন্ধকতার দায়ে জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র যকর ন সরক র র র জন য র বর ত আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।