ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের রেকর্ড উৎপাদন
Published: 6th, March 2025 GMT
ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এবারও এই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে কালো সোনা বা ব্ল্যাক গোল্ড নামে পরিচিত এই পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন এবার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
ফরিদপুর জেলায় এবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮০ মেট্রিক টন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হবে এবং বাকি ৬৮৫ মেট্রিক টন সারা দেশে সরবরাহ করা হবে। এক সময় দেশের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর ছিল কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুরের কৃষকরা দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করছেন।
স্থানীয় কৃষাণী শাহেদা বেগম বলেন, “২১ বছর যাবত পেঁয়াজ বীজ চাষ ও উৎপাদন করছি। এবারের ফলন অত্যন্ত ভালো হবে বলে আশা করছি। আমি একশত একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি এবং এই বীজের মানের জন্য আমি দেশের সেরা কৃষাণী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি। এবারের পেঁয়াজের ফুলে দানা এসেছে বেশ ভালো, আবহাওয়া সহায়ক থাকলে বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাওয়া যাবে।”
পেঁয়াজ বীজের দিগন্তজোড়া ক্ষেত
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “আমি গত ১০ বছর ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছি। এবার আমার ২০ একর জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন আশানুরূপ হবে বলে মনে করছি। সরকার যদি আমাদের বীজ সংরক্ষণের জন্য ভালো ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা আরও বেশি উৎপাদন করতে পারব।”
সদরপুর উপজেলার কৃষাণী রহিমা খাতুন বলেন, “আমি পরিবারের সাথে মিলে ১৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। এবার ফুলে দানা খুব ভালো হয়েছে, আশা করছি বিঘা প্রতি আড়াই মণ বীজ পাবো। তবে হাতে পরাগায়ন করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের জন্য মৌমাছির ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।”
নগরকান্দা উপজেলার কৃষক মো.
ফরিদপুর জেলাকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই মৌসুমে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো। আমরা কৃষকদের পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন আরও বাড়ানো এবং দেশের চাহিদা পূরণে এই জেলাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।”
ঢাকা/তামিম/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য় জ ব জ চ ষ কর ম ট র ক টন চ ষ কর ছ জ উৎপ দ আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ইসি সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে। তখন নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে—যখনই হোক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আগে বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়সীমা মাথায় রেখে ইসি প্রস্তুতি শুরু করেছিল। সেভাবে এগিয়েছিল। এখন আবার নতুন ‘ডাইমেনশন’ এসেছে। যৌথ বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যে ঘোষণাটা লন্ডনে বসে হয়েছে, এটা আপনারা যেটুকু জানেন, আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না। আপনারা যেটুকু দেখেছেন মিডিয়াতে, আমিও সেটুকু দেখেছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে যে ওনারা কী আলোচনা করেছেন, আমরা তো নিশ্চয় ওনাদের ভাব বুঝতে পারব, বুঝে তখন একটা তারিখ, তখন সেটা করব। এখন আমাদের চিন্তা–ভাবনা, ধ্যান–ধারণা, শয়নে–স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন—এটা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ছয় মাস–আট মাস আগে ভোটের তারিখ বলার বিধান আইনে নেই।
সিইসি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে তিনি যেটা দেখেছেন যে রমজানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সেখানে ‘যদি’ আছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অনেকটা শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার নিবন্ধন, এটি মোটামুটি শেষ।
চলতি বছরের হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত থাকতে হয়। সাধারণত ভোটের তারিখের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার আগে যাঁদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইসি চেষ্টা করবে। এ জন্য আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে ইসি। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে—এই ওয়াদা তিনি দিতে পারবেন না। তাঁরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের আস্থায় আনতে ইসি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও দেশের ভালো চায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। এগুলো তিনি রাজনৈতিকভাবে দেখেন।
সিইসি আরও বলেন, কেউ বিপক্ষে না থাকলে বুঝতে হবে কোনো ‘কোয়ালিটি’ নেই। বিপক্ষে কেউ বললে তখন শোধরানোর সুযোগ থাকে। এ জন্য কেউ বিরুদ্ধে বললে তিনি আহত হন না। তিনি এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান।