ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এবারও এই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে কালো সোনা বা ব্ল্যাক গোল্ড নামে পরিচিত এই পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন এবার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। 

অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।  

ফরিদপুর জেলায় এবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮০ মেট্রিক টন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হবে এবং বাকি ৬৮৫ মেট্রিক টন সারা দেশে সরবরাহ করা হবে। এক সময় দেশের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর ছিল কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুরের কৃষকরা দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করছেন।  

স্থানীয় কৃষাণী শাহেদা বেগম বলেন, “২১ বছর যাবত পেঁয়াজ বীজ চাষ ও উৎপাদন করছি। এবারের ফলন অত্যন্ত ভালো হবে বলে আশা করছি। আমি একশত একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি এবং এই বীজের মানের জন্য আমি দেশের সেরা কৃষাণী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি। এবারের পেঁয়াজের ফুলে দানা এসেছে বেশ ভালো, আবহাওয়া সহায়ক থাকলে বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাওয়া যাবে।”  

পেঁয়াজ বীজের দিগন্তজোড়া ক্ষেত

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “আমি গত ১০ বছর ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছি। এবার আমার ২০ একর জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন আশানুরূপ হবে বলে মনে করছি। সরকার যদি আমাদের বীজ সংরক্ষণের জন্য ভালো ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা আরও বেশি উৎপাদন করতে পারব।”  

সদরপুর উপজেলার কৃষাণী রহিমা খাতুন বলেন, “আমি পরিবারের সাথে মিলে ১৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। এবার ফুলে দানা খুব ভালো হয়েছে, আশা করছি বিঘা প্রতি আড়াই মণ বীজ পাবো। তবে হাতে পরাগায়ন করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের জন্য মৌমাছির ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।”  

নগরকান্দা উপজেলার কৃষক মো.

জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি এবার ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে বীজ সংরক্ষণ এবং বিপণনের জন্য সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও বেশি লাভবান হবো।” 

ফরিদপুর জেলাকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই মৌসুমে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো। আমরা কৃষকদের পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন আরও বাড়ানো এবং দেশের চাহিদা পূরণে এই জেলাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।” 

ঢাকা/তামিম/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য় জ ব জ চ ষ কর ম ট র ক টন চ ষ কর ছ জ উৎপ দ আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা

খুলনায় মাত্র আট ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মনোয়ার হোসেন টগর নামে এক যুবক এবং শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুরে আল-আমিন সিকদার নামে এক ভ্যানচালক খুন হন। 

দিঘলিয়ায় ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা
পুলিশ জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর নন্দনপ্রতাপ গ্রামে আল-আমিন সিকদার (৩৩) নামে এক ভ্যানচালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আল-আমিন ওই গ্রামের কাওসার শিকদারের ছেলে।

দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম শাহীন বলেন, “আল-আমিনের স্ত্রীর সাবেক স্বামী মো. আসাদুল ঝিনাইদহ থেকে এসে অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর আসাদুল পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।”

ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নগরীতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
অপরদিকে, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন সবুজবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হন মনোয়ার হোসেন টগর (২৫) নামে এক যুবক। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা জামাল হাওলাদারের ছেলে। 

স্থানীয়রা জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে কয়েকজন যুবক টগরের বাড়িতে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই আবদুল হাই বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হত্যাকারীরা টগরের পূর্ব পরিচিত।  তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ