প্রায় ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে পৃথিবীতে সর্বশেষ বরফযুগ বিদ্যমান ছিল। তারপরই এখনকার হলোসিন যুগ শুরু হয়। বরফযুগের আমলে পৃথিবীর পরিবেশ অনেক শীতল ছিল। তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তে থাকে। ভবিষ্যতে আবারও বরফযুগ তৈরি হবে। ধারণা করা হয়, পরের বরফযুগ আসতে আরও ১০ হাজার বছর লেগে যাবে। নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানবসৃষ্ট দূষণ নির্গমনের কারণে পৃথিবীর পরবর্তী বরফ যুগ কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। গবেষকেরা পৃথিবীর কক্ষপথ, হেলানো অবস্থা ও আবর্তনের তথ্য বিশ্লেষণের সময় নতুন তথ্য পেয়েছেন। একটি নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, পৃথিবীর পরবর্তী বরফ যুগ আগামী ১১ হাজার বছরের মধ্যে শুরু হওয়া উচিত। যদি তা শুরু না হয়, তাহলে আমাদের গ্রহের ওপর নতুন প্রভাব তৈরি হবে। মানুষের নানা রকম কার্যক্রমের কারণে এই যুগ আরও কয়েক হাজার পরে শুরু হতে পারে। বরফযুগ, উষ্ণতা ও হিমবাহযুগ নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। কয়েক লাখ বছর ধরে পৃথিবীর প্রাকৃতিক জলবায়ু চক্র নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন তাঁরা। সূর্যের চারপাশে আমাদের গ্রহের কক্ষপথে আবর্তনের বিভিন্ন বিষয়কে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে হিমবাহ চক্রকে প্রভাবিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। মানুষের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানী স্টিফেন বার্কার বলেন, ‘আমরা বিগত সময়ের লাখ লাখ বছর ধরে চলা বিভিন্ন হিমবাহ যুগ নিয়ে গবেষণা করছি। আগামীর হিমবাহ যুগ কত দিন স্থায়ী হবে, তার একটি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’ লাখ লাখ বছর ধরে পৃথিবীতে বরফ যুগ ও উষ্ণ যুগের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ বরফ যুগ বা হিমবাহ যুগ প্রায় ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে শেষ হয়েছিল। এরপরই এখনকার হলোসিন যুগের সূচনা হয়। আপেক্ষিকভাবে জলবায়ু স্থিতিশীলতার কারণে এই যুগে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটতে থাকে দ্রুত।
১৯৭০ সাল থেকে বিজ্ঞানীরা পরবর্তী হিমবাহ যুগের সূচনা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। এত দিন সঠিক সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পৃথিবীর পরবর্তী বরফ যুগ আগামী ১১ হাজার বছরের মধ্যে ঘটবে আর তা ৬৬ হাজার বছরের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা এখন ৮ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়ায় পরবর্তী বরফযুগের সময়রেখায় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন আসবে। কিছুটা পরে শুরু হবে নতুন বরফযুগ।
সূত্র: ইউরো নিউজ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ মব হ য গ প থ ব র পর হ জ র বছর ১১ হ জ র বরফ য গ ল খ বছর পরবর ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।