সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে খালুর পরকীয়া, ক্ষিপ্ত হয়ে ২ চোখ তুলেন সাদ্দাম: পুলিশ
Published: 7th, March 2025 GMT
যশোরে নিজের খালুর দুই চোখ উপড়ে ফেলা সাদ্দামকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে শহরের পালবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন রাতে শহরের বকচর করিম তেল পাম্প এলাকায় সাদ্দাম (৩২) তার খালু শহিদুল ইসলামের ওপর হামলা করে দুই চোখ উপরে ফেলে। শহিদুলকে গুরুতর অবস্থায় রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত শহিদুল ইসলাম (৬০) বকচর করিম পাম্প কবরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা। সাদ্দাম (৩০) তার ভায়রা শাহ জামালের ছেলে।
আজ শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, দুই মাস আগে সাদ্দাম ও তার স্ত্রী পিয়ার সঙ্গে ডিভোর্স হয়। সেই স্ত্রীর সঙ্গে তার খালু শহিদুল পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাদ্দাম আঙ্গুল দিয়ে শহিদুলের দুই চোখ তুলে পালিয়ে যান।
এসপি নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম জানান, সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে খালুর পরকীয়ায় ক্ষিপ্ত হন। পরে তার দুই চোখ তুলে নেন সাদ্দাম।
এসপি জানান, আটক সাদ্দামকে হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও এ ঘটনায় অন্য কোনো ঘটনা বা কেউ জড়িত আছে কি না সেটা উদঘাটনে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার, যশোর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।