ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আবু জাফর সিদ্দিকের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। সেজন্য বাড়ি সংস্কার ও সজ্জার কাজ শুরু হয়েছিল। কিছু স্যানিটারি জিনিসপত্র কিনতে চাচাতো ভাই মুসা হায়দারকে নিয়ে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে গিয়েছিলেন আবু জাফর। সেখানে হঠাৎ গ্যাস বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি। ৯০ শতাংশ পোড়া দেহ নিয়ে মুসা হায়দায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবু জাফর সিদ্দিকের দাফন করা হয় গ্রামের বাড়িতে। তার দাফন শেষ হতে না হতেই আরেক দুঃসংবাদ পান স্বজনরা। মারা যান মুসা হায়দারও। 

২০২৩ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ২৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে আবু জাফর সিদ্দিক (৩২) এবং মুসা হায়দারও (৪০) ছিলেন।

আবু জাফরের খালাতো ভাই রাশেদুল হাসান জানিয়েছেন, আবু জাফর সিদ্দিক এবং মুসা হায়দার আপন চাচাতো ভাই। আবু জাফর ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেছে। মুসা হায়দার ছিলেন কোরআনের হাফেজ। তার একটা রেস্তোরাঁ ছিল। আবু জাফরকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এজন্য বাড়ি সংস্কারের কাজ করা হচ্ছিল। কিছু স্যানিটারি জিনিসপত্র কিনতে মুসা হায়দারকে নিয়ে সিদ্দিকবাজারে যান আবু জাফর। বিস্ফোরণে আবু জাফর ঘটনাস্থলেই মারা যান। এক দিন পর মুসা হায়দার মারা যান।

তিনি বলেন, “বিস্ফোরণে মুসার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়। কথা বলতে পারছিল না সে। কেমনে যেন তার বন্ধু নাইমকে ফোন দেয়। নাইম তার পরিবারকে বিষয়টা জানায়। আমি ঢাকাতে থাকি। তারা বিষয়টি আমাকে জানায়। আমি সরাসরি হাসপাতালে যাই। মর্গে গিয়ে আবু জাফরকে পাই। মুসাকে পাই না। পরে বার্ন ইউনিটে খুঁজে মুসাকে পাই। আবু জাফরের জানাজা পরিয়ে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বালুয়াকান্দি গ্রামে সকাল ৮টায় দাফন করা হয়। সেখানে যাওয়ার আগে মুসা ঘুমাচ্ছিল। এ কারণে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। জানাজা শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসি। একটার পর একটা ওষুধ লাগছিল তার। রাতে তার মাথা থেকে বালিশ সরিয়ে ফেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তখন আমার সন্দেহ হয়, মুসা আর নেই। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে না। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে জানানো হয়, মুসা মারা গেছে। পরদিন একই জায়গায় তাকেও দাফন করা হয়।”

রাশেদুল হাসান বলেন, “আমি যখন মুসাকে দেখতে যাই, সে এমনভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, সে রেগে আছে দেরিতে আসার কারণে। শেষ সময়ে তার সাথে কথা বলতে পারিনি। এই কষ্টটা সারাজীবন থেকে যাবে। আমাদের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না হলেও আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। যাদের কারণে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। সন্তান হারিয়ে দুই খালা স্বাভাবিক নেই। দোষীদের বিচার হলে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।”

২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেলে সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে ওই বছরের ৯ মার্চ মামলা দায়ের করেন বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ সাহা। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পর এখন মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

ঢাকা/মামুন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ফর স দ দ ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী