বরুণকে আটকানোর কৌশল খুঁজছে নিউজিল্যান্ড
Published: 8th, March 2025 GMT
বিষয়টি কিছুটা অবাক করার মতোই। মাত্র তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা কোনো বোলারকে ফাইনালে ভয় পাচ্ছে প্রতিপক্ষ! গতকাল দুবাইয়ের ‘মেয়দান’ হোটেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ভারতীয় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে নিয়ে উদ্বেগটা লুকাননি নিউজিল্যান্ড কোচ গ্যারি স্টিড। দুবাইয়ের মন্থর পিচে ভারতীয় চার স্পিনারের মধ্যে তাঁকেই হুমকি মনে করছেন তিনি।
বরুণকে হুমকি মনে করলেও খুব বেশি চিন্তিত নয় কিউই শিবির। ৩৩ বছর বয়সী এ রহস্য স্পিনারকে সামলাতে বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন কিউই কোচ। মোদ্দাকথা, রোববারের ফাইনালের প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁকফোকর রাখছেন না তারা। বরুণকে নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। গ্রুপ পর্বে কর্নাটকের এ স্পিনার ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিয়েছিলেন তাদের। অথচ আসরে সেটাই ছিল বরুণের প্রথম ম্যাচ এবং পুরো ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ওয়ানডে। তাঁকে একাদশে নেওয়ায় ভারতের পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আসে। তারা চার স্পিনারে বোলিং আক্রমণ সাজায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিতে ৪৯ রানে ২ উইকেট নেন তিনি।
ফাইনালেও ভারতীয় শিবিরের অন্যতম ভরসা এই বরুণ। কিউই শিবিরও জানে যে তাদের সমস্যায় ফেলতে পারেন এ লেগি। যে কারণে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ও কেন উইলিয়ামসন তাঁকে নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এবার কোচ গ্যারি স্টিডও গুরুত্ব দিলেন বরুণকে, ‘আমাদের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিল বরুণ। আশা করছি, ফাইনালেও সে খেলবে। বরুণ খুব ভালো বোলার। আমাদের বিপক্ষে সে এরই মধ্যে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। নিশ্চিতভাবেই তাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তার বল সামলানোর উপায় বের করতে হবে। তার বিপক্ষে রান করার কৌশল ঠিক করতে হবে।’ বরুণের বোলিংয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ যে কিউইরা করছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মূলত তাঁর বোলিংয়ের বৈচিত্র্যের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছে তারা।
এই টুর্নামেন্টের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট গ্যারি স্টিড, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) পুরো দিন ভ্রমণ করে লাহোর থেকে এখানে এসেছি আমরা। এতে আমরা যে ক্লান্ত, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’
এই ক্লান্তির কারণেই ফাইনালের মাত্র দু’দিন আগে গতকাল শুক্রবার অনুশীলন করেনি কিউইরা। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি, ‘আমাদের হাতে এখনও কয়েক দিন রয়েছে। ছেলেরা কিছুটা তরতাজা হয়ে উঠুক, কিছু পরিকল্পনা করতে হবে এবং ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনও করব। আমরা এখন আসরের শেষ দিকে আছি। টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে এসে খুব বেশি অনুশীলন দরকার হয় না। শরীর ও মনকে ফাইনালের জন্য প্রস্তুত করাই এখন মূল বিষয়। আগামী দুই দিন এটাই আমাদের মূল ফোকাস।’
একই সঙ্গে দুবাইয়ে ভারতের সব ম্যাচ খেলা নিয়েও অভিযোগ নেই তাঁর। তবে এত বাধাবিপত্তির পরও ভারতকে হারাতে চান তিনি, ‘আট দলের টুর্নামেন্টে এখন আমরা দুটি দল টিকে আছি। আসরের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সময় এখন। রোববার ভারতকে হারানোর চেয়ে খুশির কিছু আর হতে পারে না আমাদের জন্য। তবে জিততে হলে আমাদের দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতে হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।