জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন পাহাড়ের নারীরা
Published: 8th, March 2025 GMT
পাহাড়ের নারীরা আজ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন। তারা যেমন কর্মঠ তেমনি বিভিন্ন পেশা ও কর্মেও যুক্ত। ফসলের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি আফিস ও আদালতেও তাদের সরব পদচারণা রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, হস্ত ও কুটির শিল্পে অবদান রেখে তারা পরিবারের অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছেন।
মল্লিকা চাকমা থাকেন রাঙামাটির সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের নাড়াইছড়ি গ্রামে। এই গ্রামে নেই গাড়ি চলাচলের কোনো ব্যবস্থা। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মূল সড়ক থেকে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে ঘণ্টাখানেকের পায়ে হাঁটা দূরত্বে তার গ্রাম।
এই গ্রামে জমিতে মল্লিকা চাষ করেছেন বিলাতি ধনেপাতা। এই ধনেপাতা বিক্রি করে সংসারে আর্থিকভাবে কিছুটা ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন তিনি। হাটের আগের দিন ধনেপাতা তুরংয়ে (বাঁশের ঝুঁড়ি) ভরে রাখেন। হাটের দিন ভোরে পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিতে হয় মল্লিকাকে। ধনেপাতা ভর্তি একেকটা তুরংয়ের ওজন ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত হয়। এইভাবেই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা
নারীদের কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী করতে অন্তর্বর্তী সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাবিতে সেমিনার
একই গ্রামের বাসিন্দা শোভা চাকমা। তিনি চাষ করেছেন মিষ্টি কুমড়া। যখন বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়, তখন তিনিও মল্লিকার মতো একই পদ্ধতিতে কুমড়া বাজারে নিয়ে যান।
মল্লিকা ও শোভার কাছে ফসল ফলানো যত না কষ্টের, তার চাইতে বেশি কষ্ট ফসল হাটে নিয়ে যাওয়া। এরপরও তারা নিজেদের এগিয়ে নিতে কাজ করে চলেছেন।
নাড়াইছড়ি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদের ঘাম ও শ্রমের অবদান বেশি। পাহাড়ি সমাজে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কম থাকায় নারীরা শ্রমভিত্তিক বিভিন্ন কাজে একেবারেই সামনের দিক থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে, বর্তমানে তাদের পদচারণা শুধু জুম মাঠেই সীমাবদ্ধ নেই, তারা এখন অফিস-আদালত, রাজনীতিসহ সমাজের সবস্তরেই ছড়িয়ে পড়েছেন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাজারগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সেগুলো নারীদের দখলে। ভোর হলেই মাথায় তুরং নিয়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করতে চলে আসেন পাহাড়ি নারীরা। তারা পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাকসবজি বিক্রি করেন স্থানীয়দের কাছে। সারা দিন বিকিকিনি শেষে বিকেলে বাড়িতে ফেরেন। রাতভর বিশ্রাম নিয়ে পরদিন ভোরেই আবারো জীবনযুদ্ধ শুরু করেন এই সংগ্রামী নারীরা।
রাঙামাটির সবচেয়ে বড় বনরূপা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বেশিরভাগ বিক্রেতাই নারী। রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে জুমে উৎপাদিত নানা সবজি নিয়ে এই বাজারে বিক্রির জন্য এসেছিলেন কল্পনা চাকমা। তিনি বলেন, “জুমে উৎপাদিত ফসল সাপ্তাহিক হাটে নিয়ে আসি। বিক্রি শেষে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসারের বাকি দিনগুলোর জন্য খাবার কিনে নিয়ে যায়।”
বনরূপা টেক্সটাইল দোকানের বিক্রয়কর্মী সোনাবি চাকমা বলেন, “আমাদের দোকানে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিক্রি হয়। এই পোশাক নারীরাই তৈরি করেন। দোকানে গিয়ে অনেক নারী তাদের তৈরি করা পোশাক বিক্রি করেন। দোকানে বসে আমরা যারা বিক্রি করি তারাও নারী, যারা এই পোশাক কেনেন তারাও নারী। পুরো এই সিস্টেমে নারীরাই জড়িত।”
নাড়াইছড়ি গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিতা চাকমা। তিনি প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে পানি সংগ্রহ করেন। এই নারী বলেন, “আমাদের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পানযোগ্য ও নিত্য ব্যবহার্য পানির খুব অভাব। তাই আমাদের প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি পথ বেয়ে পান ও ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করতে হয়। এই কাজটি আমাদের গ্রামের নারীরাই করেন।”
শুধু সংসার কিংবা অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়; শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে অফিসের শীর্ষপদেও আসীন হয়েছেন পাহাড়ের নারীরা। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আত্মমর্যাদা অর্জনে পাহাড়ি নারীরা নানা ধরনের সংগ্রাম করে আসছেন।
রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শ্রীজ্ঞানী চাকমা বলেন, “পাহাড়ের নারীরা আগের চেয়ে অনেক অগ্রসর হয়েছেন। শিক্ষার কারণে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গেছি। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে থেকে নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই ভালো ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ে নারী হেডম্যান ও কার্বারি রয়েছে।”
সিএইচটি উইমেন্স অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য সুপ্তি দেওয়ান বলেন, “বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্পে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বুনন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত তারা প্রতিটি কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
তিনি আরো বলেন, “জুমে ফসল উৎপাদন করে সরাসরি হাটে বিক্রি করছেন পাহাড়ি নারীরা। এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে পাহাড়ি নারীদের অবদান নেই। এই নারীদের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে স্বামীদের সহায়তামূলক মনোভাব সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র উৎপ দ অবদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে প্রফেশনাল এমএস কোর্স, আবেদনের সময় বৃদ্ধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রফেশনাল এমএস কোর্সে আবদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় ব্যাচের ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র গ্রহণ ও জমাদানের সর্বশেষ তারিখ ২২ মে ২০২৫। ভর্তি পরীক্ষা ২৩ মে ২০২৫, সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজাপানে উচ্চশিক্ষা: যাত্রা শুরু করবেন কোথা থেকে, কীভাবে?২৮ এপ্রিল ২০২৫