রোমান পোলানস্কি। অস্কার ও পাম ডি’অর জয়ী ফ্রেঞ্চ-পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালক। ‘দ্য পিয়ানিস্ট’, ‘বিটার মুন’, ‘অলিভার টুইস্ট’ প্রভৃতি সিনেমার নির্মাতা। এই জীবন্ত কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

বিজ্ঞানে আমার আগ্রহ প্রচুর। অবশ্য ফিকশনের চেয়ে নন-ফিকশনই বেশি পড়ি। যখন নিজের কাজটা করতে যাই, তখন সেটে কোনো অভিনেতা কিংবা সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাধ্য না হলে সেটিকে বিশ্লেষণাত্মকভাবে ভাবি না একদমই। এমন পরিস্থিতিতে কোনো না কোনো জবাব আমাকে দিতে হয় ঠিকই, তবে সেই জবাবদিহি আমার ব্যক্তিজীবন ও কাজকে জটিল করে তোলে। 
আশপাশ থেকেই পাই কাজের ইঙ্গিত
আমার ভাবনা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই। একেক সময় একেক ধরনের সিনেমা বানাতে ভালো লাগে আমার। মূলত চারপাশে যা দেখি, তা থেকেই চলে আসে আমার অনুপ্রেরণা। সিনেমা খুব ভালোবাসি আমি; দেখিও প্রচুর। একেক সময় একেক ধরনের সিনেমা দেখতে ভালো লাগে; তবে সেটিকে কোনো না কোনোভাবে আমার তখনকার বাসনাকে তৃপ্ত করতে হয়। যদিও জীবন এবং দর্শনের প্রতি এক ধরনের ঘোর বরাবরই রয়েছে– যেগুলোর প্রতি মানুষ হিসেবে আমি প্রচণ্ড বিশ্লেষণাত্মক; তবু কাজটা সহজাতপ্রবণতায় ভর দিয়েই করি। 
ফিল্মের শক্তি
সিনেমায় সাসপেন্স, অতিপ্রাকৃত উপাদান আর এক ধরনের আয়রনি বা বিদ্রুপের সমন্বয়ে এই রসিকতা বা হিউমারকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা থাকে আমার। সেটিই দর্শকদের হাসিয়ে তোলে। তারপর সিনেমাটি বানানো হয়ে গেলে প্রযোজক, পরিবেশক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সামনে দেখানোর সময় মনে দ্বিধা থাকে, কাজটা হলো তো ঠিকমতো! কিন্তু আপনি যখন দেখবেন আমজনতা ফিল্মটি দেখছে, তখনই প্রকৃত অর্থে টের পাবেন সেটির শক্তি।
সাধারণ মানুষের কথা
ফ্রুট সালাদ এডিটিংয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমাকে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাই। কেননা, এটি সহজ এবং বড়ই আদিম। তারপর অনেক ক্লোজআপ ধরা দেয় সামনে। যে ফিল্মমেকাররা মনিটরের সামনে অনড় বসে আছেন–এ কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে যে, সিনেমা দেখতে বসা মানুষগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষও থাকবে। আমার কাছে স্টাইল একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; আরও গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি বিন্যাসের সারল্য। আমি স্রেফ একটা কাহিনি দেখাতে চাই। তা দেখাতে গিয়ে সেটির আবেগ ও স্টাইলের পরিচর্যা করি নিজের মতো। স্ক্রিপট লিখতে গিয়ে কো-স্ক্রিপট রাইটারের সঙ্গে আড্ডা ও হাসি-মশকরায় মেতে উঠি। তারপর একটা জায়গায় পৌঁছে লিখতে বসি। খানিকটা লেখা হয়ে গেলে আবারও আড্ডা। চলে স্ক্রিপট রি-রাইট। কখনও কখনও হয়তো একটা দৃশ্যই ৩০ বারের মতো রি-রাইট করি আমি। যারা সিনেমা দেখবে, তারাও আমাদের মতো হেসে উঠবে কিনা, এই ভাবনা আমাকে খুব পেয়ে বসে। 
অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়
অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই আছে। ফলে খুব সহজেই অভিনেতাদের সমস্যাগুলো ধরতে পারি। খেয়াল করবেন, যেসব ফিল্মমেকার নিজেও অভিনেতা ছিলেন, তাদের সিনেমায় ভালোমানের অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে থাকে। আর ফিল্মমেকারের কাজ হলো, অভিনেতার কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানটি বের করে আনার জন্য তাঁকে নিরন্তর অনুপ্রাণিত করে যাওয়া। কেবল এই ক্ষেত্রই নয়; অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়। বাড়িয়ে দেয় কাজের মান। এ কাজটি ঠিকঠাক করতে পারি বলেই আমার সিনেমায় অভিনেতাদের কাছ থেকে দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স দেখা যায়। আপনি যখন একটি সিনেমা বানানো শুরু করবেন, তখন আপনার কাছে এক ধরনের নমুনা নিশ্চয়ই থাকবে; আর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেই নমুনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিনেতাদের নির্বাচন করে সেটিকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করার দায় আপনারই। সে ক্ষেত্রে কাজটি হয়তো কখনও কখনও একটু বেশিই ভালো, আবার কখনও কখনও খানিকটা কম ভালো হবে। u
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন ক ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

গান নিয়েই আমার সব ভাবনা

কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী? 

শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। 

দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?

সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি। 

প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য? 

হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।

প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন? 

আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি। 

গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে? 

সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া
  • গান নিয়েই আমার সব ভাবনা