‘অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়’
Published: 8th, March 2025 GMT
রোমান পোলানস্কি। অস্কার ও পাম ডি’অর জয়ী ফ্রেঞ্চ-পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালক। ‘দ্য পিয়ানিস্ট’, ‘বিটার মুন’, ‘অলিভার টুইস্ট’ প্রভৃতি সিনেমার নির্মাতা। এই জীবন্ত কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
বিজ্ঞানে আমার আগ্রহ প্রচুর। অবশ্য ফিকশনের চেয়ে নন-ফিকশনই বেশি পড়ি। যখন নিজের কাজটা করতে যাই, তখন সেটে কোনো অভিনেতা কিংবা সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাধ্য না হলে সেটিকে বিশ্লেষণাত্মকভাবে ভাবি না একদমই। এমন পরিস্থিতিতে কোনো না কোনো জবাব আমাকে দিতে হয় ঠিকই, তবে সেই জবাবদিহি আমার ব্যক্তিজীবন ও কাজকে জটিল করে তোলে।
আশপাশ থেকেই পাই কাজের ইঙ্গিত
আমার ভাবনা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই। একেক সময় একেক ধরনের সিনেমা বানাতে ভালো লাগে আমার। মূলত চারপাশে যা দেখি, তা থেকেই চলে আসে আমার অনুপ্রেরণা। সিনেমা খুব ভালোবাসি আমি; দেখিও প্রচুর। একেক সময় একেক ধরনের সিনেমা দেখতে ভালো লাগে; তবে সেটিকে কোনো না কোনোভাবে আমার তখনকার বাসনাকে তৃপ্ত করতে হয়। যদিও জীবন এবং দর্শনের প্রতি এক ধরনের ঘোর বরাবরই রয়েছে– যেগুলোর প্রতি মানুষ হিসেবে আমি প্রচণ্ড বিশ্লেষণাত্মক; তবু কাজটা সহজাতপ্রবণতায় ভর দিয়েই করি।
ফিল্মের শক্তি
সিনেমায় সাসপেন্স, অতিপ্রাকৃত উপাদান আর এক ধরনের আয়রনি বা বিদ্রুপের সমন্বয়ে এই রসিকতা বা হিউমারকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা থাকে আমার। সেটিই দর্শকদের হাসিয়ে তোলে। তারপর সিনেমাটি বানানো হয়ে গেলে প্রযোজক, পরিবেশক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সামনে দেখানোর সময় মনে দ্বিধা থাকে, কাজটা হলো তো ঠিকমতো! কিন্তু আপনি যখন দেখবেন আমজনতা ফিল্মটি দেখছে, তখনই প্রকৃত অর্থে টের পাবেন সেটির শক্তি।
সাধারণ মানুষের কথা
ফ্রুট সালাদ এডিটিংয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমাকে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাই। কেননা, এটি সহজ এবং বড়ই আদিম। তারপর অনেক ক্লোজআপ ধরা দেয় সামনে। যে ফিল্মমেকাররা মনিটরের সামনে অনড় বসে আছেন–এ কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে যে, সিনেমা দেখতে বসা মানুষগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষও থাকবে। আমার কাছে স্টাইল একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; আরও গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি বিন্যাসের সারল্য। আমি স্রেফ একটা কাহিনি দেখাতে চাই। তা দেখাতে গিয়ে সেটির আবেগ ও স্টাইলের পরিচর্যা করি নিজের মতো। স্ক্রিপট লিখতে গিয়ে কো-স্ক্রিপট রাইটারের সঙ্গে আড্ডা ও হাসি-মশকরায় মেতে উঠি। তারপর একটা জায়গায় পৌঁছে লিখতে বসি। খানিকটা লেখা হয়ে গেলে আবারও আড্ডা। চলে স্ক্রিপট রি-রাইট। কখনও কখনও হয়তো একটা দৃশ্যই ৩০ বারের মতো রি-রাইট করি আমি। যারা সিনেমা দেখবে, তারাও আমাদের মতো হেসে উঠবে কিনা, এই ভাবনা আমাকে খুব পেয়ে বসে।
অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়
অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই আছে। ফলে খুব সহজেই অভিনেতাদের সমস্যাগুলো ধরতে পারি। খেয়াল করবেন, যেসব ফিল্মমেকার নিজেও অভিনেতা ছিলেন, তাদের সিনেমায় ভালোমানের অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে থাকে। আর ফিল্মমেকারের কাজ হলো, অভিনেতার কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানটি বের করে আনার জন্য তাঁকে নিরন্তর অনুপ্রাণিত করে যাওয়া। কেবল এই ক্ষেত্রই নয়; অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়। বাড়িয়ে দেয় কাজের মান। এ কাজটি ঠিকঠাক করতে পারি বলেই আমার সিনেমায় অভিনেতাদের কাছ থেকে দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স দেখা যায়। আপনি যখন একটি সিনেমা বানানো শুরু করবেন, তখন আপনার কাছে এক ধরনের নমুনা নিশ্চয়ই থাকবে; আর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেই নমুনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিনেতাদের নির্বাচন করে সেটিকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করার দায় আপনারই। সে ক্ষেত্রে কাজটি হয়তো কখনও কখনও একটু বেশিই ভালো, আবার কখনও কখনও খানিকটা কম ভালো হবে। u
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন।
তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।
উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে।
কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক।
জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।
জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”
জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।
জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”
ঢাকা/রুমন/এস