রমজানে সব কেনাকাটার সুযোগ বিকাশ পেমেন্টে
Published: 8th, March 2025 GMT
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তামজিদ আহসান বেশ কয়েক বছর ধরেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্যাশলেস লাইফস্টাইলে, হোক তা অনলাইন অর্ডারের ক্ষেত্রে বা কোথাও গিয়ে কেনাকাটার সময়। পবিত্র রমজান মাসে ক্যাশলেস লাইফস্টাইলের সুবিধা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো রমজানে অফিস ছুটির সময়টায় যানজটে স্থবির হয়ে থাকে শহর। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই যেহেতু চাকরিজীবী, অফিস থেকে বের হয়ে পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতারি কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। সংশয় থাকে ঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারব কিনা। এমন অবস্থায় সহজ সমাধান বিকাশ পেমেন্ট। কোনো একটা পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার অর্ডার দিই, আর পেমেন্ট করে দিই বিকাশে। দেখা যায় জ্যাম ঠেলে আমরা বাসায় পৌঁছানোর আগেই ইফতার পৌঁছে যাচ্ছে। এই সময়টায় বিকাশ পেমেন্টে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফারও বেশ উৎসাহজনক।’
তামজিদের মতো দেশজুড়ে এমন বহু গ্রাহক ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। নানা সুবিধার কারণে ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতারাও ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ‘রমজান মাসে ইফতারের আগে কাস্টমারের ভিড় সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে বিকাশ পেমেন্ট গ্রহণ করার কারণে ‘বিলিং প্রসেস’ অনেক দ্রুত ও সহজ হয়েছে। পাশাপাশি বিকাশ পেমেন্টের কল্যাণে অনলাইনেও অনেক অর্ডার পাচ্ছি।’
দেশজুড়ে বিকাশের রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট এবং প্রায় ১০ লাখ মার্চেন্টের এক বিশাল নেটওয়ার্ক। বর্তমানে বিকাশের প্রায় আট কোটি গ্রাহক দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছোট-বড় মার্চেন্টে কিউআর স্ক্যান করে, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং *247# ডায়াল করে দ্রুত, সহজে এবং নিরাপদে পেমেন্ট করতে পারছেন। বিকাশ গ্রাহকরা ৪৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ভিসা, অ্যামেক্স ও মাস্টারকার্ড থেকে যখন প্রয়োজন তখনই অ্যাড মানি করে প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা সারতে পারছেন। বিকাশ পেমেন্টে কেনাকাটার বড় সুবিধা হচ্ছে অ্যাপের স্টেটমেন্ট অপশন থেকে যে কোনো সময় দেখে নেওয়া যায় কোন খাতে কত খরচ হলো। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এবং ঈদকে সামনে রেখে বিকাশ পেমেন্টে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার দেখে নেওয়া যাবে বিকাশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বা ওয়েব লিঙ্কে।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘দৈনন্দিন ব্যস্ততায় মূল্যবান সময় বাঁচাতে গ্রাহকরা ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকাশও তাই উৎসব-পার্বণ সামনে রেখে সুপারস্টোর, ব্র্যান্ড শপ, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন স্থানে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্টসহ নানা অফার দিয়ে থাকে। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্টের প্রকৃত সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে বিকাশ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইউটিলিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশে একটি ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার : পাড়ার মুদি দোকানে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে শুরু করে বাস-ট্রেন-প্লেনের টিকিট কাটা যায় বিকাশ পেমেন্টে। সুপারস্টোর, অনলাইন শপ, ফেসবুক পেজ, বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপ, ফ্যাশন হাউস, জুতার দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন আউটলেটে বিকাশ পেমেন্টে রোজা ও ঈদের কেনাকাটায় মিলছে বিভিন্ন ধরনের ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার।
অ্যাপ থেকে কার্ড দিয়ে সরাসরি পেমেন্ট: বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স না থাকলেও বিকাশ অ্যাপে সংযুক্ত ভিসা কার্ড থেকে সরাসরি বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছেন বিকাশ গ্রাহকরা। অনেক দোকানে বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ব্যয়বহুল পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক গ্রাহক ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট দিতে পারেন না। তবে এই ধরনের ছোট দোকান থেকে শুরু করে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে বিকাশের কিউআর স্ক্যান করে গ্রাহকরা তাদের বিকাশ অ্যাপে সংযুক্ত ভিসা কার্ড থেকে সরাসরি বিকাশ পেমেন্ট করে দিতে পারেন।
পে-লেটার দিয়ে কেনাকাটা: জরুরি প্রয়োজনে কেনাকাটাকে আরও সহজ করতে প্রথমবারের মতো ‘পে-লেটার’ নামে বিশেষ জামানতবিহীন ঋণসেবা চালু করেছে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক। এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও গ্রাহক প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বিকাশ অ্যাপ থেকেই তাৎক্ষণিক সিটি ব্যাংকের বিশেষ ঋণ নিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সাত দিনের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা যায় কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়াই। আবার গ্রাহক চাইলে তিন বা ছয় মাসের কিস্তিতেও পরিশোধ করতে পারবেন ঋণ। পে-লেটারের জন্য বিবেচ্য গ্রাহক ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণসীমা পেতে পারেন। বিকাশ অ্যাপের পেমেন্ট অপশন অথবা লোন অপশন থেকেও পে-লেটার ফিচার ব্যবহার করতে পারছেন গ্রাহকরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র হকর গ র হক ইফত র সরক র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট
তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র। এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র।
সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।
চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে, বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।
গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা শ্রুতিমধুর ছিল।
অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।
সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।
আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।
নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে।
সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।
লেখক: লেখক ও নাট্যকার