যুগ যুগ ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে বিভক্ত করা। তাদের ভাবনা ছিল, এ বিভক্তির কারণে ভেঙে পড়বে পশ্চিমা জোট, যারা ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক উপহার মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যার জন্য তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ বা তারও আগে থেকে অপেক্ষা করছিল। 

শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সামগ্রিক আচরণে ইউরোপ কার্যত হতভম্ব। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে। তারা মার্কিন নীতিতে বিস্মিত ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। 

ইউরোপের বিভিন্ন নেতার মুখে উঠে আসছে বিষয়টি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই স্তম্ভ, যাকে কেন্দ্র করে শান্তির ব্যবস্থাপনা হয়। কিন্তু তারাই এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন যে অপপ্রচার চালান, সেটাই এখন ট্রাম্পের মুখে। আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।’ 

ইউরোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও আচরণের আবেগি প্রভাব অনেক গভীর। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও মুক্ত মহাদেশের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘পশ্চিম’ বলতে যা বোঝায় তা ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। বহু বছর ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা উত্তেজনার মধ্যেও একটি বিষয়ে ছিল মতৈক্য, তা হলো– উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বর্তমানে এ প্রশ্নে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র– প্রত্যেকেই আলাদা। ‘পশ্চিম’ এখন কেবল এক ধারণা। কীভাবে শূন্যতা পূরণ হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার বিষয়টি নিশ্চিত। কারণ, পরাশক্তিগুলো এটা চাচ্ছে। 

প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন বলেন, ‘ট্রাম্প যেটা করছেন এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, উদার গণতন্ত্রের অবদমন।’    
    
ইউরোপের পপুলিস্টরা বিপাকে 
ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকরা (পপুলিস্ট) পড়েছেন বিপাকে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রাজনীতিকরা ইউক্রেন প্রশ্নে কতটা ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন, বা কতটা দূরত্বে– তা নির্ণয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে একেবারেই দূরে থাকার কথা ভাবছেন। যেভাবে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। নরডিক দেশসহ পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে ব্যাপক। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় রুশ সহমর্মীদের পাওয়া যায়। 

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি ইউরোপের মিত্রদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় না করে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কমন সেন্স, তাই না। যদি তারা খরচ না করে, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি সুরক্ষা দেব না।’ ট্রাম্প জানান, ন্যাটো নিয়ে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বছরের। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের প্রথম মেয়াদে তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটো মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এ জন্য ৭৫ বছর পুরোনো ট্রান্সআটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে, যদিও এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের আরও খরচ করা উচিত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর প ইউর প র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান

জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’

টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’

জাতিসংঘের বিশেষ এই র‍্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’

ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা
  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন