সেবা ও শিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে, বেড়েছে কৃষি খাতে। পুরুষেরা কৃষি ছেড়ে অংশগ্রহণ করছে শিল্প ও সেবার মতো অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে নারীরা নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের বড় অংশই নিয়োজিত হচ্ছেন কৃষিতে।

আজ রোববার উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: সাম্প্রতিক ধারার পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, পুঁজিবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যে মজুরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, তাতে এখনো নারীরা পিছিয়ে। মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক প্রণোদনার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা।

বক্তারা আরও বলেন, কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সেবা ও শিল্প খাতে অংশগ্রহণ কমেছে। শিল্প ও সেবা খাতের অংশীদারত্ব জিডিপিতে ৮৯ শতাংশেরও বেশি। তাই কৃষিতে নারীদের অবদান বৃদ্ধি পেলেও সামগ্রিক অর্থনীতিতে সেই তুলনায় অংশীদারত্ব কম। ফলে জিডিপিতে নারীদের অংশীদারত্ব আনুপাতিক হারে কমেছে।

এ সময় তুলে ধরা হয়, ২০১৩-২০২৩ সাল অর্থাৎ এ সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় নারীর অংশীদারত্ব ১২ দশমকি ৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। অথচ মরক্কো, তানজানিয়া, নেপাল, ঘানাসহ পাঁচটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে মালিকানায় নারীর অংশীদারত্বের বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও তুলে ধরা হয়, ২০১৭-২২ সময়ের মধ্যে নারীদের গড় মাসিক মজুরি কমেছে ৯ শতাংশ। অথচ এ সময়ের ব্যবধানে পুরুষদের মজুরি বেড়েছে ৪ শতাংশ। বক্তারা বলেছেন, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও তাঁরা মূলত যুক্ত হয়েছেন কম মজুরির পেশায়। এ কারণেই কমেছে নারীদের গড় মাসিক মজুরি।

এ সময় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার বলেন, অর্থনীতিতে নারীর অংশীদারত্ব বাড়াতে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি বলেন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরির মাপকাঠি নির্ণয়ে কাজ করছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এ সময় রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, নারীদের মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হলে তার সম্ভাবনা, সৃষ্টিশীল ও মনস্তাত্ত্বিক সম্পদের পূর্ণ বিকাশ হয় না। তাই প্রচলিত শ্রমবাজারে অর্থনীতি কাঠামো পরিবর্তন ও সামাজিক বন্দোবস্ত না করা হলে নারীরা পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, ‘পোশাকশিল্পে মেয়েদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। কারণ, কম দক্ষতার কাজে মেয়েদের আর বেশি দক্ষতার কাজে ছেলেদের বেশি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নারীরা বেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা সুলতানা, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলোরা দেওয়ান, ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্যসচিব জাহিদ রহমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহণ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ