চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অফিশিয়াল আয়োজক পাকিস্তান। সেই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে ভারত। গতকাল দুবাইয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারায় রোহিত শর্মার দল। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

তাতে নিজের বিস্ময় লুকাতে পারেননি পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার। আয়োজক দেশ হয়েও পিসিবির কোনো সদস্য কেন ফাইনালে গেলেন না, সেটা শোয়েবের কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টাকে দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড গড়া সাবেক এ ক্রিকেটার।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলেছে দুবাইয়ে। রাজনৈতিকভাবে বৈরী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে কোনো ম্যাচ খেলতে যেতে রাজি হয়নি ভারত। টুর্নামেন্টটি তাই হাইব্রিড পদ্ধতিতে আয়োজন করা হয়। ভারত ফাইনালে ওঠায় শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচটাও হয়েছে দুবাইয়ে।

আরও পড়ুনশামির মায়ের পা ছুঁয়ে পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ কোহলির১ ঘণ্টা আগে

ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি না দেখে বিস্মিত শোয়েব নিজের ফেসবুক পেজে বলেছেন, ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ভারত জিতে নিয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত একটা ব্যাপার আমি লক্ষ করলাম। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কোনো সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিল না। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক দেশ। কিন্তু তাদের একজন লোককেও সেখানে দেখলাম না।’

পুরো বিষয়টা বোধগম্য হচ্ছে না জানিয়ে শোয়েব আরও বলেছেন, ‘এ বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না। তারা কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে কিংবা ট্রফি তুলে দেওয়ার জন্য কেন এলেন না। এটা একেবারেই আমার বোধগম্য না। এটা নিয়ে ভাবুন দয়া করে। এটা একটা বিশ্বমঞ্চ, এখানে আপনাদের থাকা উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কোনো সদস্যকে সেখানে দেখলাম না। অথচ এটার আয়োজক আমরাই, কিন্তু আমাদের কেউ সেখানে থাকল না।

পরে অবশ্য বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই। সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, পিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইর আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে ডাকা হয়নি।

আরও পড়ুন‘এখনই ওয়ানডে ছাড়ছি না’—চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর রোহিত শর্মা১০ ঘণ্টা আগে

সেই সূত্র জানায়, আগে থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ভিন্ন প্রতিশ্রুতি থাকায় পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি দুবাইয়ে যাননি। পিসিবির পক্ষ থেকে সিইওকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কারণে বা ভুল–বোঝাবুঝিতে তাঁকে মঞ্চে ডাকা হয়নি।

পিসিবির সমালোচনা করলেও শিরোপা জেতা ভারতের দারুণ প্রশংসা করেছেন শোয়েব, ‘সেরা দল ভারতই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। এটা বলতে হবে যে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল হিসেবেই তারা শিরোপা জিতেছে। আমার ধারণা, গত ১০ বছরে আইসিসি টুর্নামেন্টে সেরা দল হিসেবেই যে দলটি আবির্ভূত হয়েছে, সেটি ভারত। গত বছরও তারা জিতেছে, এবারও জিতল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অসাধারণ খেলল তারা। বরুণ এসে দুর্দান্ত খেলল, বিরাট (কোহলি) দারুণভাবে ফিরে এল। বাকি সবাইও দারুণ খেলেছে। তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা। এটা তাদের প্রাপ্য ছিল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল ব ষয়ট সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ