টেংরাগিরি বনাঞ্চলকে কি রক্ষা করা যাবে না
Published: 11th, March 2025 GMT
বরগুনার তালতলী উপজেলায় বিস্তৃত টেংরাগিরি বনাঞ্চল আবারও খবরের শিরোনাম হলো। বনকর্মীদের যোগসাজশে বনাঞ্চলটির গাছ উজাড় করে ফেলছে স্থানীয় গাছচোরেরা। এ বিষয়ে কয়েক দিন আগে প্রথম আলো প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এর আগেও একই ধরনের প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। এবার টেংরাগিরি নতুনভাবে আলোচনায় এল তার পাশে জাহাজভাঙা–গড়া শিল্প জোন স্থাপন শুরু হওয়া নিয়ে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরে গাববাড়িয়া চরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর দ্বিতীয় জাহাজভাঙা শিল্প স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার; কিন্তু জায়গাটি সুন্দরবনের পাশে হওয়ায় তখন এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা তুমুল আপত্তি তোলেন। এরপর সরকার এই প্রকল্প থেকে সরে এসেছিল। এরপর ২০১৮ সালে টেংরাগিরি বনের পাশে আবার এই শিল্প জোন স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে এই প্রকল্পের নাম বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে ‘পরিবেশবান্ধব জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প’।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেই বলা আছে, জাহাজভাঙা শিল্প ‘মারাত্মক দূষণকারী’ শিল্প। বন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বাংলাদেশ স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের রামসার কনভেনশন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো শিল্পকারখানা, ভারী ইমারত ও স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ; কিন্তু এই এলাকা টেংরাগিরি বনের মধ্যেই অবস্থিত। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বনের কয়েক হাজার গাছ কাটা পড়বে।
টেংরাগিরি বনাঞ্চল হচ্ছে সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ বন। এর আগে কক্সবাজার জেলায় আরেকটি ম্যানগ্রোভ বন ছিল। কয়েক দশক আগে সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন টেংরাগিরিও হুমকির মুখে পড়ল। যেখানে জাহাজভাঙা–গড়া শিল্প জোন স্থাপন করা হচ্ছে ওই স্থানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর—দেশের তিনটি বৃহত্তম নদ-নদী সাগরে মিলিত হয়েছে। এলাকাটি ইলিশের প্রজনন ও বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। একই সঙ্গে সাগর থেকে দেশের নদ-নদীতে ৫০ শতাংশের বেশি ইলিশ এই মোহনা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এটি স্পষ্ট যে পরিবেশ–প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও ইলিশ মাছের প্রজননের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ওই স্থান।
টেংরাগিরির পাশে ওই শিল্প স্থাপনের সুযোগ কোনোভাবেই নেই। এই অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমরা আশা করব, তাঁরা দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেবেন। পরিবেশের জন্য চরম আত্মঘাতী এই প্রকল্প বন্ধ করতেই হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল
১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।
১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।
১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।
মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।
বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।
আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।
কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।
ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি