নাটোরে স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হককে (৪৫) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা তাঁকে হাজতখানায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যায়।

এর আগে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বরখাস্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফজলুল হক ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ছিলেন। পরে তাঁকে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। তিনি নাটোর সদর উপজেলার জংলী গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হকের স্ত্রী মেহেনাজ আক্তার (৪২) গত বছরের ২৮ অক্টোবর আদালতে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসাইন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেন। তদন্তে স্ত্রীর করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। গতকাল সোমবার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালত পুলিশ ট্রাইব্যুনাল থেকে ফজলুর রহমানকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকেরা তাঁর ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তিন সাংবাদিক বারান্দার মেঝেতে পড়ে যান। কয়েকটি ভিডিও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ দ্রুত তাঁকে হাজতখানার ভেতরে ঢোকান।

খবর পেয়ে শহরের অন্য সাংবাদিকেরা আদালতে ছুটে আসেন। তাঁরা ঘটনার বিচারের দাবিতে হাজতখানার সামনে অবস্থান নেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সাংবাদিকেরা তাঁকে একজন সাধারণ কয়েদির মর্যাদায় হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হলে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকসহ উপস্থিত লোকজন ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ তাঁর ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন।

হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন সময় টেলিভিশনের আল মামুন, এখন টেলিভিশনের মাহবুব হোসেন ও দেশ টিভির খান মামুন। তাঁরা বলেন, অন্য আসামির মতো তাঁরা বরখাস্ত ওই পুলিশ সুপারের ছবি তুলছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন এবং কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। কেউ কেউ নিচে পড়ে যান। মুঠোফোন ও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে তাঁরা আসামি ফজলুল হককে কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তাঁরাও ধারণা করতে পারেননি, তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হবেন।

নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমরা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করতে চাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইনের সঙ্গে জেলার সাংবাদিকেরা বিষয়টি নিয়ে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত একজন বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁকে তাঁরা পুলিশ হিসেবে দেখছেন না। তিনি আদালতের নির্দেশে কয়েদি। তাঁর দ্বারা সাংবাদিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরখ স ত হ জতখ ন র ওপর এ ঘটন ফজল ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ