প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল ও অপরাধী ধরতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, চেহারা চিহ্নিত করা, গাড়ির নম্বর চিহ্নিত করা প্রযুক্তিসহ ১০ ধরনের সুবিধা। দিনের পাশাপাশি রাতে কোনো অপরাধ ঘটলে সহজেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে।

তাছাড়া যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে তাৎক্ষণিক শব্দ আসবে মনিটরিং রুমে। আমেরিকা ও জাপান থেকে ক্যামেরা কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৬২৪ সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েক সপ্তাহজুড়ে কর্মদিবস এলেই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে জমায়েত করে বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে। এ কারণে সচিবালয়ের চারদিকের সীমানা প্রাচীর বেষ্টনী উচু করার পাশাপাশি বসানো হচ্ছে নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া। গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল ও অপরাধী ধরতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা সংখ্যা উল্লেখ করে চলতি মার্চ মাসের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নয়নের পরিবারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা

সচিবালয়ে প্রবেশ পাসের বিশেষ সেল গঠন

পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পাঁচটি গেটে ও সীমানা প্রাচীর-সংলগ্ন সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে ৭৪টি ক্যামেরা দ্রুত কেনা প্রয়োজন। এর মধ্যে সচিবালয়ের গেট ও বিভিন্ন ভবনের প্রবেশমুখে ৪৩ ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা, সীমানা পর্যবেক্ষণের জন্য ২০টি বুলেট ক্যামেরা এবং বিভিন্ন ভবন পর্যবেক্ষণের জন্য চারটি পিটিজেড ক্যামেরা এবং সাতটি ডম ফেস রিকগনাইজেশন ক্যামেরা কেনা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালে কয়েক দফায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। লাগানো হয় ৭৪টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরা। ৫টি গেটের ক্যামেরা ছিল প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত, যা কেনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে। এসব ক্যামেরা নাইট ও ডে ভিশন। ফলে রাতের অন্ধকারেও মানুষ চেনা যায়। এছাড়া নতুন করে ৪টি ব্যাগেজ স্ক্যানার বসানো হয়েছিল। সেগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এখন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক সাইয়েদ মাহমুদ উল্লা বলেন, “ইনফ্রারেড ক্যামেরা মানুষের তাপমাত্রা থেকে ধরতে পারে। অন্ধকারের মধ্যেও মানুষকে চেনা যায়। একটা বিড়াল গেলেও দেখা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে প্রায়ই এ ক্যামেরা ব্যবহার হয়। এই ক্যামেরা ইমেজ ও ভিডিও নিতে পারে। এমন ক্যামেরা আমেরিকা, চীন থেকে আনা হলে অবশ্যই এসব কাজ করার কথা। এত অল্প সময়ে নষ্ট হতে পারে না।”

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “শুধু সচিবালয় নয়, দেশের অনেক জায়গায় নিরাপত্তা সচেতনতার অভাব রয়েছে। সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্রের নাজুক পরিস্থিতি সেটাই আবার প্রমাণ করল। এটা দুঃখজনক। শুধু সচিবালয় নয়, প্রতিটি সরকারি অফিসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।”

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পরিকল্পনায় নিরাপত্তার বিষয়টির অভাব রয়েছে। তারপরও ভালো দিক হচ্ছে, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করেছে। তবে শুধু পর্যালোচনা করলেই হবে না। যেসব দুর্বলতা উঠে এসেছে, তা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আগামী এপ্রিল মাস নাগাদ সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত হবে, তখন টাকা পাওয়া গেলে সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে।”

ঢাকা/এএএম/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ হ ন ত কর ন র পর অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স