গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ইতিবাচক দেখছেন ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা
Published: 12th, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। আর নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপে উত্তরদাতাদের ৬১ শতাংশ মত দিয়েছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার পর অলটারনেটিভস ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শিরোনামে শীর্ষক ওই জরিপ প্রকাশ করেছে।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জরিপটি চালায় সেন্টার ফল অলটারনেটিভস। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশের ৩২টি জেলায় ৫ হাজার ৩৫৫ জনের মধ্যে অনলাইন-অফলাইনে এ জরিপ চালানো হয়। এঁদের মধ্যে ২ হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং ২ হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে জরিপে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি নিয়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার এ ধরনের জরিপ চালানো হলো।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক বলে মত দেন। আর ভালো কিংবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ–চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে জানতে চাওয়া হয় উত্তরদাতাদের কাছে। এ বিষয়ে যথাক্রমে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছে, যা ওই সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাদের আস্থার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিতীয়ত জনগণের সঙ্গে জনগণের আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশি জনগণের মতামত এবং পরামর্শের প্রতি তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ইয়াও ওয়েন বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের যে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, জরিপের ফলাফল থেকে এই আভাস রয়েছে যে বাংলাদেশি জনগণ চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা এবং ব্যবসা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট মেটানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আদি নিবাসে ফিরতে পারে, সেই জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’
চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আমেনা মোহসিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন সহয গ ত র জন য র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
১০ হাজার বছর আগের এক নারীর প্রতিকৃতি বানালেন গবেষকেরা
বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও শিল্পের সম্মিলনে তৈরি করা হয়েছে মেসোলিথিক বা মধ্য প্রস্তরযুগের এক নারীর মুখের প্রতিকৃতি। প্রায় ১০ হাজার ৫০০ বছর আগে বাস করা মোসঅ্যান নামের ওই নারীর মুখাবয়বে বসানো উজ্জ্বল নীল চোখ ও কিছুটা শঙ্কিত দৃষ্টি আজও বিস্ময় জাগায়।
এই গবেষণামূলক প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপের শেষ শিকারি বা সংগ্রাহকদের জীবনধারা অন্বেষণ করা। প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের ভিত্তিতে গড়ে তোলা এই প্রতিকৃতি আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্পীর নিপুণ দক্ষতায় মোসঅ্যানকে নতুন প্রাণ দিয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক ইসাবেল ডে গ্রোত বলেন, ‘এই প্রকল্পের একটি অংশ হলো মানুষের জেনেটিক গঠন বোঝা, তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক নির্ধারণ এবং আমরা যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছি, তা বৃহত্তর জনগণের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা।’
বিজ্ঞানীরা যে খুলি থেকে প্রতিকৃতি পুনর্গঠন করেছেন, সেটি ছিল অসাধারণভাবে সংরক্ষিত। জনগণের ভোটে নাম রাখা হয় ‘মোসঅ্যান’। এ নাম রাখা হয়েছে বেলজিয়ামের মিউস উপত্যকার নামানুসারে। এই খুলিতে প্রচুর পরিমাণে সংরক্ষিত ডিএনএ ছিল, যার ফলে ওই নারীর মুখাবয়বকে অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর বয়স ছিল ৩৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
গবেষক ইসাবেল বলেন, মেসোলিথিক যুগে এই নারী ছিলেন পশ্চিম ইউরোপের শিকারি-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীর অংশ। জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকেরা ওই নারীর ত্বকের রং ও চোখের রং বের করতে সক্ষম হন। তিনি আরও বলেন, এই জনগোষ্ঠীকে চেনা যায় তাদের গাঢ় ত্বক ও নীল চোখের জন্য—যেমন ছিল যুক্তরাজ্যের চেডার ম্যানের। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী চেডার ম্যানের কঙ্কাল ১৯০৩ সালে আবিষ্কৃত হয়।
মোসঅ্যানের ডিএনএ তাঁর চেহারা সম্পর্কে মূল্যবান কিছু সূত্র দিয়েছে। তবে তাঁকে জীবন্ত করে তুলেছে নেদারল্যান্ডসের শিল্পী আলফন্স ও অ্যাডরি কেনিস নামের যমজ দুই ভাইয়ের অনন্য দক্ষতা।
গবেষকদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর তাঁরা কাজ শুরু করেন। খুলির ছাঁচ তৈরি থেকে শুরু করে মাটির মডেলিংয়ে শেষ পর্যায়ের সাজসজ্জা, প্রতিটি মুখের পেশি অঙ্গভঙ্গি নিখুঁতভাবে গড়ে তোলেন তাঁরা। আলফন্স কেনিস আর্নহেম শহরে তাঁদের স্টুডিওতে বলেন, পুনর্গঠনের সবচেয়ে বড় দিকটি হলো একটি চরিত্র তৈরি করা। আপনি চাইলে একটি ফরেনসিক পুনর্গঠন করতে পারেন। তথ্য ব্যবহার করতে পারেন, পেশি বসাতে পারেন, ত্বকও লাগাতে পারেন, কিন্তু এতে কোনো চরিত্র তৈরি হয় না। তবে তাঁরা পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে প্রায় ছয় মাস সময় নেন।