রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব ও যারা অগ্রাধিকার পাবে
Published: 12th, March 2025 GMT
রমজান আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার মাস। মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের পথে একটি অন্তরায় হলো সম্পদের মোহ। সম্পদের মোহ থেকে মানুষের ভেতর লোভ, হিংসা, সংঘাত, বিবাদ ও অবৈধ উপার্জনের প্রবণতা তৈরি করে। এ বিষয়ে সতর্ক করে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার মোহ সকল পাপের মূল।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫২১৩)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পরীক্ষা বিশেষ; আর আল্লাহ, তাঁরই কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত : ১৫)
পবিত্র রমজান সম্পদের মোহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মোক্ষম সুযোগ। ইসলাম রমজান শেষে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছে এবং রমজানজুড়ে নফল দান, সদকা ও জনকল্যাণমূলক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছে। প্রিয়নবী (সা.
আরো পড়ুন:
কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন চর্চা
রমজানে পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
রমজান মাসে মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণে দান করতেন। এই মাসে তিনি প্রবাহমান বাতাসের মতো উদার ও দানশীল হয়ে উঠতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৪)
রমজান মাসে আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। তাই রমজানে মুমিন অন্য সব আমলের মতো দানের পরিমাণও বৃদ্ধি করবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য অনুসন্ধান করবে তাকে অন্য মাসের ফরজের সমান সাওয়াব দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সাওয়াব পাবে। এই মাস ধৈর্যের মাস এবং এই মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’ (সুনানে বায়হাকি)
দানের বহুমুখী কল্যাণ
কোরআন ও হাদিসে দানের বহু মর্যাদা ও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই রমজানে দানকারীর জন্য এই মর্যাদা ও পুরস্কার বহুগুণে বৃদ্ধি করা হবে। নিম্নে দানের কয়েকটি পুরস্কার তুলে ধরা হলো :
আল্লাহর নৈকট্য লাভ : যারা দান ও সদকার মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে থাকে আল্লাহর তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর নৈকট্য দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব ও নবীদের ওপর ঈমান আনলে এবং আল্লাহপ্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পথিক, সাহায্যপ্রার্থীদের ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
উলি্লখিত আয়াতে দান ও সহযোগিতার উপযুক্ত শ্রেণি সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যায়।
দানের পুরস্কার পৃথিবীতেই মেলে : আল্লাহ দানকারীর প্রতিদান পৃথিবীতেই দেন, মানুষের জীবন-জীবিকায় বরকত দেন। আর পরকালের সাওয়াব তো আছেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা রিজিক বাড়িয়ে দেন, (যাকে ইচ্ছা) কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা কিছুই দান করো, তিনি তার জায়গায় অন্য কিছু দিয়ে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)
দান বিপদ দূর করে : দানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ হলো আল্লাহ এর মাধ্যমে মানুষের বিপদ-আপদ দূর করেন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু প্রতিহত করে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৪)
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : প্রতিদিন সকালে ফেরেশতারা দানকারীর জন্য দোয়া করে। তাই মুমিনের জন্য দানের মাধ্যমে দিন শুরু করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দু'জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)
দানে অগ্রাধিকার পাবে যারা
যে কোনো অভাবগ্রস্ত মানুষকেই দান করা যায়। তবে মুমিন দান-সদকার ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের প্রাধান্য দেবে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা হলো, ‘লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, যে বস্তুই তোমরা ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো; এবং তোমরা যে সৎ কাজ করো আল্লাহ তা সম্যক অবগত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৫)
অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোনো মুসলিমকে খুশি করা, তার বিপদ দূর করা, তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া, তার ক্ষুধা নিবৃত করা।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ১১৬২)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দান সদকাতুল ফিতর
রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দান সদকাতুল ফিতর। এটি রমজানের শেষ দশকে আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাস, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর আল্লাহর রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতের বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)
যারা দান করলে সম্পদ হ্রাস পাবে বলে ভয় পায় তাদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর অভয় হলো, ‘কোনো দানই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
রমজানে আল্লাহ সবাইকে মুক্তহস্তে দান করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন দ য় কর র জন য দ ন কর ফ র শত আল ল হ এই ম স রমজ ন সবচ য় ইরশ দ করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।