Prothomalo:
2025-05-01@08:56:52 GMT

রোজার নিয়তের বিধান কী

Published: 13th, March 2025 GMT

 ‘নিয়ত’ অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। নিয়ত করা রোজার একটি অন্যতম রোকন। সুতরাং নিয়ত করা জরুরি। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত। নিয়ত সম্পর্কে রোজা রাসুল (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল। ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা-ই সে পায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১)

 নিয়তের পদ্ধতি

রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় যেই রোজা পালনের ইচ্ছা করছে, তা তার অন্তরে উপস্থাপন করবে। যেমন: অন্তরে নির্ধারণ করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথবা কাজা রোজা আদায় করছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ পালন করছি। অথবা ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখব’ কিংবা নফল রোজা হলে দিনের বেলা ‘আজ রোজা রাখব’—এভাবে নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।

 রাসুল (স.

) ও সাহাবিদের কারও থেকে ‘নাওয়াইতু আন আসুমা’ বা ‘নাওয়াইতু আন উসল্লি’—এ-জাতীয় নিয়ত করার বর্ণনা পাওয়া যায় নি। তবে একদল আলেম মুখে নিয়ত করাকে উত্তম বলেছেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৩৪৫)

রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়া যথেষ্ট, এতে নিয়তের কাজ হয়ে যাবে। কেননা, রোজাদার রাতের খাবার রোজা রাখার ইচ্ছায় খায়। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকহ, ১/৮৮১)

নিয়ত কখন করতে হবে

 ফরজ রোজার নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।’ (দারাকুতনি. ২/১৭২; বাইহাকি, ৪/২০২)

 তবে নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে দিনে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও হয়ে যাবে। শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং ততক্ষণ রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ সংঘটিত না হওয়া। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬; আল-বাদায়েউস সানায়ে, ২/২২৯)

 রমজানে প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকহ, ৩/১৮)

আরও পড়ুনরোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য০২ মার্চ ২০২৫

নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করাও বৈধ। আয়েশা রা. বলেন, একদিন রাসুল (স.) এসে আমাকে বললেন, তোমার কাছে খাওয়ার কি কিছু আছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম। (মুসলিম: ১১৫২ )

 রাসুলের (সা.) খাবার চাওয়া থেকে অনুমিত হয় তিনি পূর্ব থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। এই হাদিস নফল রোজার জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি। এক্ষত্রেও শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনও কাজ সংঘটিত না হওয়া। কিন্তু যদি এমন হয় যে, সারা দিন পানাহার করে নি আবার রোজা রাখার ইচ্ছাও তার ছিল না, তাহলে রোজা হবে না। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬)

আরও পড়ুনযে কারণে রোজা ভেঙে যায়০৪ মার্চ ২০২৫

দুটি কথা মনে রাখতে হবে

 ১. রোজা যেহেতু সুবহে সাদিক হতে শুরু হয়, তাই ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার বা যৌনকর্মে আপত্তি নেই। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খাওয়া পর আর পানাহার করা যাবে না—এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনও দোষ নেই, অপবিত্র হলেও অসুবিধা নেই। তাতে নিয়তের কোনও ক্ষতি হবে না এবং রোজারও নয়। (বুখারি, হাদিস: ১,৮২৯ ও ১,৯২৬; মুসলিম, হাদিস: ১,১০৯; হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬)

একই বিধান হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীদের বেলায়ও। ফজর হওয়ার পূর্বেই যদি তারা পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল না করেই নিয়ত করে নেবে। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৪৩)

 দুই. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না বটে, কিন্তু রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানের মর্যাদা বিরোধী এবং তা বৈধ নয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১/১৭৩)

আরও পড়ুনইফতারের দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ, অর্থসহ০৩ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে গান, কবিতা ও কথায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গতকাল বুধবার দুপুরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

এর প্রতিবাদে আজ ‘ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও শিল্পী সমাজ’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এসে মাইকবিহীন কর্মসূচি করতে বলেন আন্দোলনকর্মীদের। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচি চলতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে ডিবি পুলিশের দল। প্রতিবাদী কথা, গান ও কবিতা পড়তে থাকেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

বীক্ষণ আসরের প্রথম আহ্বায়ক কথাশিল্পী সালিম হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানুষের কথা বলার মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া। বিগত সরকার আমলে দীর্ঘ সময় আমাদের বুকে জগদ্দল পাথর চাপিয়ে আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে গতকাল প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আশাহত করেছে এবং প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছে। দম্ভের কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দাম্ভিকতা দেখালে পরিণাম ভালো হবে না।’

প্রতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী গান। শিল্পী হিরক সিঙ্গার, মিজান বাউলা, শাহনাজ সাথী বিদ্রোহী গান পরিবেশন করেন। কবি সাঈদ ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান ও শরৎ সেলিম, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, আবুল কালাম আল আজাদ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, আন্দোলনকর্মী আরিফুল হাসান, আজিত দাস, আবদুল্লাহ আল নাকীব প্রমুখ।

আশরাফ মীর বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিনা নোটিশে আমাদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমারের অন্তরে আঘাত দিয়েছে। কেন মুক্তমঞ্চ বিনা নোটিশে ভেঙে দেওয়া হলো? যার ইঙ্গিতে এই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলো, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবেন, এই আশা করি। আমরা জীবন ও বেদনার কথা বলি কবিতায়। আমরা শান্তি চাই, কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।’

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে, যা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম পাঠচক্রের আসর। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।

পুনরায় মুক্তমঞ্চ নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চের সামনে বীক্ষণের নিয়মিত আসর পালন করা হবে। এরপর শনি ও রোববার প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না করলে সোমবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমদ দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেয়। সেই জমিতেই প্রশাসনই মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখন সেই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না। সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ