‘নিয়ত’ অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। নিয়ত করা রোজার একটি অন্যতম রোকন। সুতরাং নিয়ত করা জরুরি। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত। নিয়ত সম্পর্কে রোজা রাসুল (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল। ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা-ই সে পায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১)
নিয়তের পদ্ধতি
রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় যেই রোজা পালনের ইচ্ছা করছে, তা তার অন্তরে উপস্থাপন করবে। যেমন: অন্তরে নির্ধারণ করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথবা কাজা রোজা আদায় করছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ পালন করছি। অথবা ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখব’ কিংবা নফল রোজা হলে দিনের বেলা ‘আজ রোজা রাখব’—এভাবে নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।
রাসুল (স.
রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়া যথেষ্ট, এতে নিয়তের কাজ হয়ে যাবে। কেননা, রোজাদার রাতের খাবার রোজা রাখার ইচ্ছায় খায়। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকহ, ১/৮৮১)
নিয়ত কখন করতে হবে
ফরজ রোজার নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।’ (দারাকুতনি. ২/১৭২; বাইহাকি, ৪/২০২)
তবে নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে দিনে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও হয়ে যাবে। শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং ততক্ষণ রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ সংঘটিত না হওয়া। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬; আল-বাদায়েউস সানায়ে, ২/২২৯)
রমজানে প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকহ, ৩/১৮)
আরও পড়ুনরোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য০২ মার্চ ২০২৫নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করাও বৈধ। আয়েশা রা. বলেন, একদিন রাসুল (স.) এসে আমাকে বললেন, তোমার কাছে খাওয়ার কি কিছু আছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম। (মুসলিম: ১১৫২ )
রাসুলের (সা.) খাবার চাওয়া থেকে অনুমিত হয় তিনি পূর্ব থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। এই হাদিস নফল রোজার জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি। এক্ষত্রেও শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনও কাজ সংঘটিত না হওয়া। কিন্তু যদি এমন হয় যে, সারা দিন পানাহার করে নি আবার রোজা রাখার ইচ্ছাও তার ছিল না, তাহলে রোজা হবে না। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬)
আরও পড়ুনযে কারণে রোজা ভেঙে যায়০৪ মার্চ ২০২৫দুটি কথা মনে রাখতে হবে
১. রোজা যেহেতু সুবহে সাদিক হতে শুরু হয়, তাই ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার বা যৌনকর্মে আপত্তি নেই। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খাওয়া পর আর পানাহার করা যাবে না—এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনও দোষ নেই, অপবিত্র হলেও অসুবিধা নেই। তাতে নিয়তের কোনও ক্ষতি হবে না এবং রোজারও নয়। (বুখারি, হাদিস: ১,৮২৯ ও ১,৯২৬; মুসলিম, হাদিস: ১,১০৯; হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬)
একই বিধান হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীদের বেলায়ও। ফজর হওয়ার পূর্বেই যদি তারা পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল না করেই নিয়ত করে নেবে। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৪৩)
দুই. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না বটে, কিন্তু রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানের মর্যাদা বিরোধী এবং তা বৈধ নয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১/১৭৩)
আরও পড়ুনইফতারের দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ, অর্থসহ০৩ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আমনের ক্ষতির শঙ্কা, ধান কাটার পরামর্শ কৃষি বিভাগের
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিলনা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছিলেন আমন ধান। পেকে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। পরিকল্পনা ছিল, পরিবারের যোগান মিটিয়ে, কিছু ধান বিক্রি করে পুরো বছর চালাবেন ১০ জনের সংসার। তবে, তার সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দিল দমকা হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি। ধান হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা এখন নষ্ট হতে বসেছে।
এই কৃষক বলেন, “সাংসারে স্ত্রী, ছেলে, নাতীসহ ১০ জন আছে। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। জমির ধানও পেকেছিল। ভেবেছি, কয়েকদিন পর ধান কেটে ঘরে তুলব। এই ধান আর ঘরে তুলতে পারলাম না। ঝড়ো হওয়া আর বৃষ্টিতে হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে ধান এখন নষ্ট হতে বসেছে। সারা বছর কীভাবে চলব তা চিন্তাই করতে পারছি না।” শুধু সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসই নয়, এমন অবস্থা কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষকের।
আরো পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
দিনাজপুরে টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত
কৃষি বিভাগ বলেছে, ধান দ্রুত কেটে নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১২ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে আমান ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, উফশী জাতের ৮ হাজার ২০৩ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষকরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তীব্র বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলে পড়ে পাকা আমন ধান। জমিতে জমে থাকা পানিতে কেটে রাখা ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা গেছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট থাকায় হেলে পড়া ধান কাটতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। দ্রুত পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে তা মাঠেই নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
কৃষক মহানন্দ দে বলেন, “বৃষ্টি আগে ধান কাটা শেষ করতে পারলে বিঘা প্রতি ৪০ মণ পেতাম। ধান হেলে পড়ায় ও তলিয়ে যাওয়ায় ২০ মণ পাব কিনা সন্দেহ রয়েছে। ধান কাটতে আগে ৭-৮ জন শ্রমিক লাগলেও এখন লাগবে অন্তত ১৫ জন। ফলে আমরা ধান হারানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
জমি থেকে ধান কাটায় ব্যস্ত চাষিরা
সিঙ্গারকুল গ্রামের কৃষক বিশ্বম চন্দ্র সরকার বলেন, “পাকা ধান বৃষ্টির কারণে নষ্ট হতে বসেছে। এ ধান না যাবে খাওয়া, না যাবে বিক্রি করা। এমনকি খড় পচে যাচ্ছে যা গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। দেনা করে ফসল ফলিয়েছি। এখন ধার কীভাবে মেটাব, আর সারা বছর কীভাবে চলব সেই চিন্তায় দিন কাটছে।”
কৃষক মফিজুর ইসলাম বলেন, “এমন একটা দুর্যোগ গেলেও কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের খোঁজ নেননি। শুধু আজ নয়, কোনো সময়ই আমাদের খোঁজ রাখেন না তারা। আমরা কোনো পরামর্শও পাই না তাদের কাছ থেকে। এখন যদি সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, “গত শনিবারের বৃষ্টিতে জেলায় ধানসহ কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ক্ষতি কমাতে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দিতে ঊর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের জানানো হবে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ