কিডনির রোগে ভুগছেন দেশে এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখের বেশি। প্রতিবছর কিডনির রোগে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মারা যান। মূলত ৯ ধরনের কিডনির রোগে এই মৃত্যু হয়। কিডনির চিকিৎসায় অনেক মানুষ প্রতিবছর দেশের বাইরে যান।

বাংলাদেশে কিডনির রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও কিডনির রোগের ধরন বিষয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ওয়েবসাইটে। আইএইচএমই দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের রোগ পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করছে। তাদের তথ্যভান্ডারে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলের বিভিন্ন রোগের পরিসংখ্যান পাওয়া পায়।

কিডনির রোগ নিয়ে দেশে জাতীয়ভাবে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। কিডনির রোগবিশেষজ্ঞরা প্রায় দুই দশক ধরে বলে আসছেন, কোনো না কোনো কিডনির রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষ আছেন প্রায় ২ কোটি। গণমাধ্যমসহ নানা পর্যায়ে এই পরিসংখ্যানই ব্যবহার করা হচ্ছে।

আইএইচএমইর তথ্য অনুযায়ী, ৯ ধরনের কিডনির রোগে বাংলাদেশের মানুষ ভুগছেন। এর মধ্যে আছে: টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, টাইপ-১ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, কিডনির ক্যানসার, মূত্রতন্ত্রের কিছু সমস্যাজনিত কিডনির রোগ, কিডনির পাথর, দীর্ঘস্থায়ী কিডনির প্রদাহ, তীব্র কিডনির প্রদাহ এবং বেশ কিছু অনির্দিষ্ট কারণে কিডনির রোগ।

কিডনির রোগবিশেষজ্ঞরা প্রায় দুই দশক ধরে বলে আসছেন, কোনো না কোনো কিডনির রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষ আছেন প্রায় ২ কোটি।বোঝা কত বড়

আইএইচএমইর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো কিডনির রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিডনিতে পাথরের সমস্যা। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক কাজী রফিকুল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই সমস্যা প্রকট। একবার পাথর সরানো বা চিকিৎসার পরও এটি আবার হয়। প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ভুগছেন ২০ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে ভুগছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। আবার কিডনিতে ক্যানসার আছে এমন রোগী ৪ হাজার ৭১৬ জন।

মৃত্যুর পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় আইএইচএমইর কাছ থেকে। তারা বলছে, দেশে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৭৮ জন কিডনির রোগে মারা যান। সবচেয়ে বেশি মারা যান টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত কিডনির রোগে। এই কারণে মারা যান সাড়ে চার হাজার মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে বছরে মারা যান তিন হাজারের বেশি মানুষ। কিডনির ক্যানসারে মারা যান ৮১৩ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দুনিয়া আইএইচএমইর তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে। এটা অনুমিত হলেও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান। এখান থেকে আমরা বাংলাদেশের কিডনির রোগ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য পাচ্ছি, যা আগে আমাদের হাতে ছিল না।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ভুগছেন ২০ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে ভুগছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। আবার কিডনিতে ক্যানসার আছে এমন রোগী ৪ হাজার ৭১৬ জন।বিদেশে যেতে হয়

কিডনির রোগী দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিডনি বিকল হলে তার দুই ধরনের চিকিৎসা। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে অন্তত দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি এককালীন খরচও অনেক বেশি।

এসব কারণে সাধারণ মানুষের একটি অংশের মধ্যে দেশে কিডনির রোগ চিকিৎসা নিয়ে সংশয় কাজ করে। অনেকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে চান। যে কয়টি রোগের চিকিৎসায় দেশের মানুষ বেশি বাইরে যান, কিডনির রোগ তার মধ্যে অন্যতম।

গত মাসে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক জনমত জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপে দেখা যায়, মূলত ১১টি রোগের চিকিৎসায় মানুষ বিদেশে যান। এই তালিকায় আছে: ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, কিডনির রোগ, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস, সড়ক বা অগ্নিদুর্ঘটনা, হাড় ও মেরুদণ্ডের সমস্যা, চোখের সমস্যা, স্নায়ুরোগ, মানসিক রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ।

জরিপে দেখা যায়, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ বিদেশে যান হৃদ্‌রোগ চিকিৎসায়। এর পরের কারণটি কিডনির রোগ চিকিৎসা। কিডনির রোগ চিকিৎসায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বিদেশে যান। ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বিদেশে যান ক্যানসার চিকিৎসার জন্য।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে। বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালন করছে।

যে কয়টি রোগের চিকিৎসায় দেশের মানুষ বেশি বাইরে যান, কিডনির রোগ তার মধ্যে অন্যতম।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ব সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ