বছরে ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু কিডনির রোগে
Published: 13th, March 2025 GMT
কিডনির রোগে ভুগছেন দেশে এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখের বেশি। প্রতিবছর কিডনির রোগে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মারা যান। মূলত ৯ ধরনের কিডনির রোগে এই মৃত্যু হয়। কিডনির চিকিৎসায় অনেক মানুষ প্রতিবছর দেশের বাইরে যান।
বাংলাদেশে কিডনির রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও কিডনির রোগের ধরন বিষয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ওয়েবসাইটে। আইএইচএমই দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের রোগ পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করছে। তাদের তথ্যভান্ডারে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলের বিভিন্ন রোগের পরিসংখ্যান পাওয়া পায়।
কিডনির রোগ নিয়ে দেশে জাতীয়ভাবে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। কিডনির রোগবিশেষজ্ঞরা প্রায় দুই দশক ধরে বলে আসছেন, কোনো না কোনো কিডনির রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষ আছেন প্রায় ২ কোটি। গণমাধ্যমসহ নানা পর্যায়ে এই পরিসংখ্যানই ব্যবহার করা হচ্ছে।
আইএইচএমইর তথ্য অনুযায়ী, ৯ ধরনের কিডনির রোগে বাংলাদেশের মানুষ ভুগছেন। এর মধ্যে আছে: টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, টাইপ-১ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, কিডনির ক্যানসার, মূত্রতন্ত্রের কিছু সমস্যাজনিত কিডনির রোগ, কিডনির পাথর, দীর্ঘস্থায়ী কিডনির প্রদাহ, তীব্র কিডনির প্রদাহ এবং বেশ কিছু অনির্দিষ্ট কারণে কিডনির রোগ।
কিডনির রোগবিশেষজ্ঞরা প্রায় দুই দশক ধরে বলে আসছেন, কোনো না কোনো কিডনির রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষ আছেন প্রায় ২ কোটি।বোঝা কত বড়আইএইচএমইর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো কিডনির রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিডনিতে পাথরের সমস্যা। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক কাজী রফিকুল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই সমস্যা প্রকট। একবার পাথর সরানো বা চিকিৎসার পরও এটি আবার হয়। প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ভুগছেন ২০ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে ভুগছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। আবার কিডনিতে ক্যানসার আছে এমন রোগী ৪ হাজার ৭১৬ জন।
মৃত্যুর পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় আইএইচএমইর কাছ থেকে। তারা বলছে, দেশে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৭৮ জন কিডনির রোগে মারা যান। সবচেয়ে বেশি মারা যান টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত কিডনির রোগে। এই কারণে মারা যান সাড়ে চার হাজার মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে বছরে মারা যান তিন হাজারের বেশি মানুষ। কিডনির ক্যানসারে মারা যান ৮১৩ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দুনিয়া আইএইচএমইর তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে। এটা অনুমিত হলেও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান। এখান থেকে আমরা বাংলাদেশের কিডনির রোগ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য পাচ্ছি, যা আগে আমাদের হাতে ছিল না।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ভুগছেন ২০ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে ভুগছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। আবার কিডনিতে ক্যানসার আছে এমন রোগী ৪ হাজার ৭১৬ জন।বিদেশে যেতে হয়কিডনির রোগী দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিডনি বিকল হলে তার দুই ধরনের চিকিৎসা। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে অন্তত দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি এককালীন খরচও অনেক বেশি।
এসব কারণে সাধারণ মানুষের একটি অংশের মধ্যে দেশে কিডনির রোগ চিকিৎসা নিয়ে সংশয় কাজ করে। অনেকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে চান। যে কয়টি রোগের চিকিৎসায় দেশের মানুষ বেশি বাইরে যান, কিডনির রোগ তার মধ্যে অন্যতম।
গত মাসে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক জনমত জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপে দেখা যায়, মূলত ১১টি রোগের চিকিৎসায় মানুষ বিদেশে যান। এই তালিকায় আছে: ক্যানসার, হৃদ্রোগ, কিডনির রোগ, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস, সড়ক বা অগ্নিদুর্ঘটনা, হাড় ও মেরুদণ্ডের সমস্যা, চোখের সমস্যা, স্নায়ুরোগ, মানসিক রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ।
জরিপে দেখা যায়, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ বিদেশে যান হৃদ্রোগ চিকিৎসায়। এর পরের কারণটি কিডনির রোগ চিকিৎসা। কিডনির রোগ চিকিৎসায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বিদেশে যান। ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বিদেশে যান ক্যানসার চিকিৎসার জন্য।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে। বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালন করছে।
যে কয়টি রোগের চিকিৎসায় দেশের মানুষ বেশি বাইরে যান, কিডনির রোগ তার মধ্যে অন্যতম।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ব সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।