দুদকের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন বাঁশখালীর মুজিব চেয়ারম্যান
Published: 13th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মুজিবুল হক চৌধুরী (মুজিব চেয়ারম্যান) ১৮ বছর ছিলেন সৌদি আরবে। সাধারণ কর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া মুজিবের উপার্জন করা অর্থের বেশির ভাগ সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৯ বছর ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তর তর করে বেড়েছে তাঁর সম্পদ। ‘ভুয়া শ্রমিক’ বানিয়ে কাবিখার ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সব ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিব ফেঁসে যাচ্ছেন দুদকের মামলায়। মুজিব ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।
শুধু মুজিব নন; তাঁর স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীও হয়ে গেছেন কোটিপতি। নূরীর জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিহীন ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। পেশায় গৃহিণী নূরীর অর্থোপার্জনের কোনো দৃশ্যমান উৎসের খোঁজ মেলেনি। মুজিব অবৈধ উপার্জন বৈধ করতেই স্ত্রীকে বানান ব্যবসায়ী। কাগজপত্রে এ দম্পতির দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের হদিস মিললেও বাস্তবে আট থেকে ১০ গুণ সম্পদের মালিক তারা। সরকার পতনের পর থেকে তারা দু’জনেই পলাতক।
দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুজিব চেয়ারম্যানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। দুদকের পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, মুজিব ও নূরীর দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের তদন্তে উঠে আসে, মুজিবের ২০১৪ থেকে ’২৩ সাল পর্যন্ত পূর্বের সঞ্চয় ছিল ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যবসার আয় ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, কৃষি থেকে আয় ৯৫ হাজার, ইউপি চেয়ারম্যানের সম্মানী ৩ লাখ ৬০ হাজার, মুরগি ও মাছ চাষে ৪ লাখ, অন্যান্য আয় ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আদায় দেখিয়েছেন। তবে পূর্বের সঞ্চয়ের ৭৪ লাখ টাকা আয়ের উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেননি। তাই তাঁর প্রবাসে আয় করা ২৭ লাখ ৯৪ হাজারসহ গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে স্থাবর ও অস্থাবর ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয় করেন। এই হিসাবে তিনি অর্জন করেন ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর থেকে ব্যয় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা বাদ যাওয়ার পর ৫৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ আছে। চট্টগ্রাম শহর ও বাঁশখালীর গ্রামে ২৫টি রেজিস্ট্রিমূলে জমি কিনেছেন। নূরীর নামে ৭টি রেজিস্ট্রি দলিলে জমি কেনা হয়েছে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, চেয়ারম্যান হয়ে মুজিব বাঁশখালীর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে প্রতিবছর দুইবার বরাদ্দ হওয়া অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের চাম্বল এলাকার ২২৬ জন ভুয়া শ্রমিক কাজ করেছেন দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেন। দৈনিক ৪০০ টাকা; প্রত্যেক শ্রমিকের মোবাইল ফোনে ৪০ দিনের মজুরি বাবদ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ দেখিয়েছেন। এভাবে তিনি আট বছরে ২২৬ শ্রমিকের ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বরাদ্দের মধ্যে ৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ লোপাট করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২২৬ জন উপকারভোগীর কাজের তালিকায় প্রথম উপকারভোগী শ্রমিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের নন্না মিয়ার ছেলে আবু তাহের। তবে তাহের শ্রমিক হিসেবে কখনও কাজ করেননি, মোবাইল ফোনে মজুরি পাননি এবং তালিকায় যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটিও তাঁর নয় বলে জানিয়েছেন। একইভাবে তালিকায় থাকা ব্যবসায়ী শিমুল কান্তি শীল, মোক্তার আহমদসহ ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান।
২০২৩ সালে চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধবিরোধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’