বোধিসত্ত্ব বড়ুয়া (৪৯) একসময় ব্যবসা করতেন। সাত বছর আগে তাঁর কিডনির জটিলতা ধরা পড়ে। সাড়ে ছয় বছর ধরে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। শুরুর দিকে সপ্তাহে দুটি করে ডায়ালাইসিস করতে হতো। এখন সপ্তাহে তিনটি ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডরে ডায়ালাইসিস নিতে আসা বোধিসত্ত্ব বড়ুয়া বলেন, মাসে তাঁর খরচ হয় ৭৫ হাজার টাকা। একেকটি ইনজেকশন কিনতে হয় চার হাজার টাকা দামে। এ ছাড়া রক্ত দিতে হয়। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় তিনি এখনো বেঁচে আছেন। ওষুধের দোকানের যে ব্যবসা ছিল, তা এখন আর নেই।

চমেক হাসপাতালে গত এক বছরে ১০ হাজার ৬০০ কিডনি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। নেফ্রাইটিস (বৃক্কের প্রদাহ), উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অসচেতনতার কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কিডনি রোগীদের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়তে হয় ডায়ালাইসিস খরচ জোগাতে। সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস খরচ পড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, কিডনি ওয়ার্ডে বর্তমানে ৩০০ স্থায়ী কিডনি রোগী রয়েছেন, যাঁরা ডায়ালাইসিস করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আরও ৭০০ স্থায়ী কিডনি রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে চলেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানান। তবে সরকারি পর্যায়ে আরও ডায়ালাইসিস মেশিন এবং চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

চমেক হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগটি ৩০ থেকে ৪০ শয্যায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে। এখানে গত বছর অন্তর্বিভাগে মোট রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৫২০ জন, বহির্বিভাগে ৪ হাজার ৭৮ জন। স্থায়ী রোগীর ডায়ালাইসিস হয়েছে ২০ হাজার ৫২৮ বার। অস্থায়ী রোগীর ডায়ালাইসিস হয়েছে ৭ হাজার ১৬৬ বার।

নেফ্রোলজি বিভাগের অধীনে বর্তমানে ১৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এর বাইরে রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডরের শরণাপন্ন হতে হয়। চমেক হাসপাতালের নিচতলায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এই ডায়ালাইসিস সেবা চালু রয়েছে। এখানে শয্যা ৩১টি শয্যায় ভর্তুকি দিয়ে ডায়ালাইসিস করানো যায়। স্যানডরে এখন ভর্তুকি মূল্যে ৫৯১ টাকায় ডায়ালাইসিস করা যায়। ভর্তুকি ছাড়া দিতে হয় ৩ হাজার ২৮৫ টাকা।

নেফ্রোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, নেফ্রোলজি বিভাগে ১৩টি মেশিনে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হয়। এর বাইরে স্যানডরের শরণাপন্ন হতে হয়। যদি বেসরকারি কোনো হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাহলে ওষুধপত্র সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ পড়ে।

এই যেমন রহিমা বেগম (৭০) কিডনির জটিলতায় ভুগছেন প্রায় তিন বছর ধরে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি চমেক হাসপাতালের নিচতলায় স্যানডরে ডায়ালাইসিস করতে আসেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁর দুটি ডায়ালাইসিস দরকার হয়। এ জন্য সপ্তাহে খরচ ছয় হাজার টাকা। এর বাইরে ওষুধপত্র এবং রক্তের জন্য আলাদা টাকা দরকার হয়। রহিমার মেয়ে রিজু আকতার বলেন, প্রতি মাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয় মায়ের পেছনে। আত্মীয়স্বজনের সাহায্য এবং ধারদেনা করে এই খরচ চালাচ্ছেন।

কিডনি জটিলতায় ভোগা রোগীদের সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার ডায়ালাইসিস নিতে হয়। দিন দিন কিডনি এবং ডায়ালাইসিস দুই ঘরানার রোগী বেড়েই চলেছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। ২০২৩ সালে চমেক নেফ্রোলজি বিভাগে ১০ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এবার তা বেড়ে ১০ হাজার ৬০০ হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এখানে যেসব রোগী ভর্তি হয়, এর ৫৭ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন। ২৩ শতাংশ সাময়িক কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের উল্লেখযোগ্য কারণ হলো নেফ্রাইটিস, ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে ২৮ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য ১৭ শতাংশ কিডনি জটিলতায় ভোগেন।

নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো.

নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, কিডনির যত্ন নিতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস, রক্তচাপ—এগুলোর কারণে স্থায়ী কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। আগে থেকে সচেতন হলে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অযথা ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া খাওয়া যাবে না।

এদিকে চমেক শিশু নেফ্রোলজি ওয়ার্ডের বহির্বিভাগে গত এক বছরে ১ হাজার ২৯ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ৪৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। কিডনি বায়োপসি করা হয় ২৬ জন শিশুর।

শিশু নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মারুফ উল কাদের বলেন, শিশু কিডনির রোগীও আগের চেয়ে বেড়েই চলেছে। ডায়ালাইসিসও নিতে হচ্ছে। একটিমাত্র ডায়ালাইসিস মেশিনে শিশুদের সেবা দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ