সহজে জাকাতের হিসাব বের করতে সরকারিভাবে নির্মিত একটি অনলাইন ক্যালকুলেটরের কথা অনেকেই জানেন না। যাদের সম্পদের বৈচিত্র্য অনেক, তাদের জন্য খাতা-কলম নিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে জাকাতের হিসাব করার কষ্ট করতে হবে না। একটি ফরমে আপনার সম্পদের ধরন ও পরিমাণ লিখুন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার হিসাব প্রস্তুত হয়ে যাবে।
আপনার সঞ্চিত স্বর্ণ, রুপা, নগদ টাকা ও অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করে ফরমটি পূরণ করুন। দেনা-পাওনা ও যেসব সম্পদ জাকাতের আওতার বাইরে সেগুলোকে এখানে www.
এক নজরে দেখে নিন, কী কী আছে জাকাত ক্যালকুলেটরে হিসাব করার অপশন।
১. নগদ টাকা (৫২.৫ তোলা /৬১৩ গ্রাম রুপা বা সম পরি মান বাজার মূল্য)
হাতে রক্ষিত নগদ অথবা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ
শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য
সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড
২. স্বর্ণ /রুপা (৭.৫ তোলা স্বর্ণ / ৮৮ গ্রাম বা ৫২.৫ গ্রাম রুপা বা সমপরিমাণ বাজার মূল্য)
স্বর্ণ বা স্বর্ণের অলংকার
রুপা বা রুপার অলংকার
৩. বাণিজ্যিক সম্পদ (৫২.৫ তোলা/৬১৩ গ্রাম রুপা বা সমপরিমাণ বাজার মূল্য)
বাণিজ্যিক পণ্যের বাজার মূল্য
ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ির বাজার মূল্য
৪. উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল (বৃষ্টিতে ১/১০ বা সেঁচে ১/২০ অংশ)
বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের বাজার মূল্য
সেচের পানিতে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের বাজার মূল্য
৫. পশুসম্পদ
ভেড়া বা ছাগল প্রভৃতি টাকার পরিমাণ
গরু মহিষ ও অন্যান্য পশু টাকার পরিমাণ
ব্যবসার উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ
ব্যবসার উদ্দেশ্যে হাঁস মুরগি পালন
উল্লেখ্য ক. ভেড়া বা ছাগল ১ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত জাকাত প্রযোজ্য নয়। ৪০ থেকে ১২০টি পর্যন্ত ১টি ভেড়া/ছাগল, ১২১-২০০টি পর্যন্ত ২টি ভেড়া/ছাগল, ২০১ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ৩টি ভেড়া/ছাগল, এর অতিরিক্ত প্রতি ১০০টির জাকাত ১টি করে ভেড়া/ছাগল।
খ. গরু, মহিষ ও অন্যান্য গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ১ থেকে ২৯টি পর্যন্ত জাকাত প্রযোজ্য নয়। ৩০ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত এক বছর বয়সী ১টি বাছুর, ৬০টি এবং ততোধিক হলে প্রতি ৩০টির জন্য ১ বছর বয়সী এবং প্রতি ৪০টির জন্য ২ বছর বয়সী বাছুর।
গ. ব্যবসার উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন - এর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, নির্মিত বাড়ি প্রভৃতির বাজার মূল্যের হিসাব হবে যেমন-৫২ তোলা রুপা (৬১৬.৩৬ গ্রাম) এর বাজার মূল্যের ২.৫% অর্থ।
আরও পড়ুনজাকাত কেন গুরুত্বপূর্ণ২০ এপ্রিল ২০২৩জাকাতের হিসাব মোট সম্পদ(টাকা) জাকাতের পরিমাণ(টাকা)
নগদ অর্থ (মোট অর্থের শতকরা ২.৫%)
স্বর্ণ বা রুপা (মোট অর্থের শতকরা ২.৫%)
বাণিজ্যিক সম্পদ (মোট অর্থের শতকরা ২.৫%)
উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল (বৃষ্টিতে ১/১০ অংশ বা সেচে ১/২০ অংশ)
পশুসম্পদ
সর্বমোট জাকাতের পরিমাণ
আরও পড়ুনযাদের জাকাত দেওয়া যাবে০৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপ দ ত ক ষ জ ত র পর ম ণ স বর ণ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।