আট দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই, শিশুটির এই লড়াইয়ের সঙ্গী ছিল পুরো দেশ। তার যন্ত্রণা দাগ কেটেছে গণমাধ্যমকর্মীদের হৃদয়েও। নিউজরুমে অগ্রাধিকার পেয়েছে শিশুটির স্বাস্থ্যের হালনাগাদ খবর। গুরুত্ব দিয়ে কভার করা হয়েছে শিশুটির চোখের পাতা নড়ার দৃশ্য পর্যন্ত। কোটি মানুষের দোয়া-প্রার্থনা আর চিকিৎসকদের নিরলস চেষ্টার পরও চলে যায় সে। তার সাথে যেন হেরে গেল আঠারো কোটি মানুষ। যেমন ছিল গত আটদিনের সেই বেদনাবিধুর যাত্রা.

..

৬ মার্চ: অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, ধর্ষণের অভিযোগ, আটক

৬ মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। কিছুদিন আগে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ওইদিন রাতেই শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায়। সন্ধ্যায় অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাখা হয় শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ)। অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

একইদিন ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাকে আটক করে পুলিশ।

৭ মার্চ: মৃত্যৃর গুজব, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ, বিক্ষোভ

এরইমধ্যে খবর চাউর হয়- শিশুটি মারা গেছে। তবে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানান, শিশুটি বেঁচে আছে। নিয়মিত শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে। এখনও সে অচেতন অবস্থায় আছে।

এ ঘটনায় আটক শিশুটির দুলাভাই সজিব শেখ (১৮) ও তার বাবা হিটু শেখকে (৪৭) জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। সজিবের কথায় বেশ অসংলগ্নতা পাওয়া গেছে বলে জানায়।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন মুসল্লিরা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাগুরা শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা সদর থানা ঘেরাও করে। 

৮ মার্চ: মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড

শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তিন দিন পর সদর থানায় চারজনের নামে মামলা দায়ের করে শিশুটির মা। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)।

ওইদিন শিশুটির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি ডিপার্টমেন্ট মিলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। চিকিৎকরা জানান, শিশুটির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তার গলার আঘাত খুবই মারাত্মক। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন।

৯ মার্চ: কৃত্রিম যন্ত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস, সিএমএইচে স্থানান্তর, দেখতে যান স্বরাষ্ট্র ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

তিন দিনেও জ্ঞান না ফেরায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে চালিয়ে নেওয়া হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান। খোঁজখবর নিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন উপদেষ্টা। ওইদিন দুপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে হাসপাতালে দেখতে যান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদও।

একইদিন ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন মাগুরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনতা।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে আসামিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় আদালতে হাজির করতে পারেনি তারা। এ কারণে রিমান্ড শুনানিও হয়নি। পুলিশ জানায়, আদালতের মূল ফটকে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ করে রাখায় আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

১০ মার্চ: চার দিনেও জ্ঞান ফেরেনি, শিশুটির ছবি-ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশ

১০ মার্চ পর্যন্ত চার দিনেও জ্ঞান ফেরেনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ। সিএমএইচের চিকিৎসকরা জানান, বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়ায় শিশুটির ফুসফুসের বিভিন্ন জায়গায় বাতাস জমে গেছে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তার মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়েছে।

হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম, অনলাইন পোর্টালসহ যেসব জায়গায় শিশুটির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে, তা অপসারণের নির্দেশ দেন। যেসব মাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তিন দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ১৩ মার্চের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

১১ ও ১২ মার্চ: অবস্থা আরও অবনতির দিকে

আগেরদিন চোখের পাতা খোলার সংবাদ পাওয়া গেলেও পরের দুইদিন ফের অবনতির দিকে যেতে শুরু করে শিশুটির শারীরিক অবস্থা। জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন চিকিৎকরা। সারাদেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা। দাবি জানান, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির।

১৩ মার্চ: শেষ বিদায়, জানাজা ও দাফন

দীর্ঘ আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট বছর বয়সী শিশুটি। হাসপাতালের শিশুরোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা চলছিল তার। বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ও বৃহস্পতিবার আরও দু‘বার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় শিশুটির।

পরে শিশুটির মরদেহ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। মরদেহ মাগুরা পৌঁছানোর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে প্রথম জানাজা হয়। এতে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। পরে মরদেহ গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। 

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানায়, জানাজার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই আসামিদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় লোকজন। রাত সোয়া ৮টার সময় এই প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত ওই বাড়িতে আগুন জ্বলছিল। কাউকে সেখানে আগুন নেভাতে দেখা যায়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন অবস থ য় স এমএইচ উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?

চলতি বছরের শুরুতে এক ভারতীয় ভ্রমণ ইনফ্লুয়েন্সারের দেশটির দুর্বল পাসপোর্ট নিয়ে অভিযোগ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পর্যটকদের বেশি স্বাগত জানালেও, বেশিরভাগ পশ্চিমা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা পাওয়া এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।

শনিবার (১ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের দুর্বল পাসপোর্ট শক্তির প্রতি ওই ভ্রমণ ইনফ্লুয়েন্সারের অসন্তোষ হেনলি পাসপোর্ট সূচকের সর্বশেষ র‌্যাংকিংয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের পাসপোর্টের র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে এই সূচক।

আরো পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে ১২৫ রানেই গুটিয়ে গেল ভারত

অক্টোবরে প্রকাশিত ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ১৯৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৫তম স্থানে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ নিচে। 

ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ রুয়ান্ডা, ঘানা এবং আজারবাইজান যথাক্রমে ৭৮তম, ৭৪তম এবং ৭২তম স্থানে রয়েছে।

বিবিসি যোগাযোগ করলেও ভারত সরকার এখনও এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

গত এক দশকে ভারতের স্থান ৮০তম স্থানে ছিল, ২০২১ সালে নেমে গিয়েছিল ৯০তম স্থানে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ান দেশগুলোর তুলনায় এই স্থান হতাশাজনক, কারণ তারা ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

গত বছরের মতো, এই বছরেও সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সূচকে শীর্ষে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং জাপান ১৮৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

এদিকে, ভারতীয় পাসপোর্টধারীদের ৫৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে, ঠিক আফ্রিকান দেশ মৌরিতানিয়ার নাগরিকদের মতো। দেশটি ভারতের সঙ্গেই ৮৫তম স্থানে রয়েছে।

পাসপোর্টের শক্তি একটি দেশের শক্তি এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। এটি নাগরিকদের জন্য আরো ভালো চলাচলের সুযোগ তৈরি করে, ব্যবসা এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে। দুর্বল পাসপোর্টের মানে, বেশি কাগজপত্রের ঝামেলা, ভিসার খরচ বেশি, ভ্রমণের সুযোগ কম এবং ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা।

কিন্তু র‌্যাংকে পতন সত্ত্বেও, গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ভারতীয়দের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানকারী দেশের সংখ্যা বেড়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে- যে বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় এসেছিল, ৫২টি দেশ ভারতীয়দের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছিল এবং এর পাসপোর্ট সূচকে ৭৬তম স্থানে ছিল।

এক বছর পরে, এটি ৮৫তম স্থানে নেমে আসে, তারপর ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ৮০তম স্থানে উঠে আসে, এই বছর আবার ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে। ইতিমধ্যে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা-মুক্ত গন্তব্যস্থল ২০১৫ সালে ৫২টি থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬০টি এবং ২০২৪ সালে ৬২টি হয়েছে।

২০২৫ সালের ভিসা-মুক্ত গন্তব্যস্থলের সংখ্যা (৫৭টি), ২০১৫ সালের (৫২টি) থেকে বেশি, তবুও এই দুই বছরেই ভারতের স্থান ৮৫। কেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিদেশ ভ্রমণে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, যার মানে দেশগুলো তাদের নাগরিক ও অর্থনীতির স্বার্থে আরো বেশি ভ্রমণ অংশীদারিত্বে প্রবেশ করছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ২০২৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের ভিসামুক্ত গন্তব্যের গড় সংখ্যা ২০০৬ সালের ৫৮টি থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০২৫ সালে ১০৯টিতে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, গত এক দশকে চীন তার নাগরিকদের ভ্রমণের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে ৮২টিতে বাড়িয়েছে। ফলে একই সময়ের মধ্যে সূচকে দেশটির অবস্থান ৯৪তম থেকে ৬০তম স্থানে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে, ভারত জুলাই মাসের সূচকে ৭৭তম স্থানে ছিল (হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স প্রতি তিন মাস অন্তর হালনাগাদ করা হয়, যাতে বৈশ্বিক ভিসা নীতির পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়), তখন ৫৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ উপভোগ করেছিল। কিন্তু দুটি দেশের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার হারানোর পর অক্টোবরে ভারতের অবস্থান নেমে গেছে ৮৫তম স্থানে।

আর্মেনিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা বলেন, একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তিকে প্রভাবিত করে এমন আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে দেশটির উন্মুক্ততা।

উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমানভাবে একঘরে হয়ে পড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে বাদ পড়েছে এবং এখন ১২তম স্থানে রয়েছে। যা মার্কিন ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থান। 

মালহোত্রা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশে ভিসামুক্তভাবে ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এই আন্দোলনে ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের জন্য স্বাধীন মাতৃভূমির দাবি তোলা হয়েছিল, যা দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতাগুলো ভারতের স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভাবমূর্তিকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মালহোত্রা বলেন, “অনেক দেশ অভিবাসীদের ব্যাপারে ক্রমশ সতর্ক হয়ে উঠছে। ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্য দেশে অভিবাসন করছে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবস্থান করছে, এটি দেশের সুনামকে প্রভাবিত করছে।”

তিনি আরো বলেন, একটি দেশের পাসপোর্ট কতটা নিরাপদ এবং এর অভিবাসন পদ্ধতি কতটা নিরাপদ, তাও অন্যান্য দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন রাখে।

ভারতের পাসপোর্ট নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারত জটিল অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ধীর গতির জন্যও পরিচিত।

মালহোত্রা মনে করেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, যেমন সম্প্রতি চালু হওয়া ভারতের ই-পাসপোর্ট নিরাপত্তা বাড়াতে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়তা করতে পারে। ই-পাসপোর্টে একটি ক্ষুদ্র চিপ থাকে যা বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে, ফলে এটি জাল করা অনেক কঠিন।

তবে ভারতের নাগরিকদের বিশ্ব ভ্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে দেশের পাসপোর্টের র‌্যাংক উন্নত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং আরো বেশি ভ্রমণ চুক্তি সম্পাদন করা।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
  • বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?