রেলিং নিশ্চিহ্ন, পাটাতন পুরোটাই ভেঙে গেছে। পাটাতনের একটি অংশে কাঠের তক্তা আড়াআড়ি বিছানো, বাকি অংশে গর্ত যেন হাঁ করে আছে। তবু এটি একটি সেতু।
সেতুটির অবস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম রহমতাবাদ মসজিদ সড়কে। শিয়ালখালের ওপর এই ভাঙা সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। চলাচল করতে গিয়ে এর আগে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সেতুটি নতুন করে নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে এলাকার মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।
পশ্চিম রহমতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো.

মহিউদ্দিন জানান, প্রায় ৫০ বছর আগে শিয়ালখালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর পর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ৭-৮ বছর আগে সেতুটির ওপরের অংশ অল্প অল্প করে খসে পড়ে যায়। এখন সেতুর দুই পাশের বিম ছাড়া অবশিষ্ট কোনো অংশ নেই। সেই বিমের ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। 
জেবল হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, চলাচলের জন্য নিজের অর্থায়নে এলাকাবাসী বারবার কাঠ বসিয়ে কোনোরকমে চলাচল করছে। কিন্তু কাঠগুলোও কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় এর ওপর দিয়ে একটি সাইকেলও চলাচল করা সম্ভব হয় নয়। ফলে এলাকার মানুষকে পাঁচ মিনিটের পথ এক কিলোমিটার ঘুরে মালপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। 
স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন জানান, মসজিদ সড়ক দিয়ে মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম রহমতাবাদ, পূর্ব ইছাখালী গ্রামের কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অসুস্থ মানুষ প্রতিদিন এ সেতু বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছে।
স্থানীয় কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে আসতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। সেতুর ভাঙা অংশ দিয়ে এর আগে তিনটি গরু খালের মধ্যে পড়ে যায়। এ ছাড়া একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। সেতুটি নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে মো. মহিউদ্দিন ইউএনও বরাবরে গত জানুয়ারি মাসে একটি আবেদনও করেছেন। 
মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিউজ্জামান মিলন জানান, সেতুটি নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি চলতি বছর নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী একটি আবেদন দিয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রস্তাব তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখানে টেন্ডার হলে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। ঈদের পরেই সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ র জন য এল ক ব স র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

দরুদ কেন পড়ব

নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের উপকারিতা অনেক। সাধারণত প্রতিদান হিসাবে একবার দরুদ পাঠ করলে দশটি রহমত, দশটি পাপ মাফ এবং বেহেশতে দশ স্তরের মর্যাদার কথা জানা যায়। এ ছাড়াও দরুদ পাঠের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা সাধারণত খুব একটা আলোচনা করা হয় না।

প্রথমত, দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পালন করলে তিনি খুশি হন এবং তার নৈকট্য অর্জন হয়। দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত’ পড়েন। ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

দ্বিতীয়ত, দরুদ পড়া আমাদের ওপর নবীজির (সা.) একটি হক। দরুদ পড়লে তাঁর হক আদায় হয়। ইবনে আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে যথাযথ প্রতিদান দিতে, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যদি আমরা তাতে অপারগ হই, তবে যেন অন্তত দোয়া করি। আল্লাহ জানেন, আমরা রাসুলের (সা.) অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে অপারগ। তাই তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি দরুদ পাঠের। (ইমাম কাসতালানি, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩/৩২২)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫

তৃতীয়ত, নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তাঁর ওপর রহমত করেন। আর দোয়া একটি ইবাদত। নু’মান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি কবুল করব’ (সুরা গাফির: ৬০)।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৬৯)

সুতরাং যখন আমরা বারবার দরুদ পড়ব, তখন প্রকারান্তরে আমরা ইবাদতের মধ্যে থাকব।

চতুর্থত, দরুদ পাঠের সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। যেমন, আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত করবেন।’ এই ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কেবল পার্থিব নয়, বরং পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমতের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।

পঞ্চমত, দরুদ পাঠ করা আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্যে একটি সম্মান। সাইয়েদ কুতুব (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের দুরুদকে তার দুরুদের সঙ্গে এবং তাদের সালামকে তার সালামের সঙ্গে মিলিয়ে নেন।’ (সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ফি জিলালিল কুরআন)

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দরুদ কেন পড়ব