ধরাবাঁধা ছকে কখনো আবদ্ধ থাকেননি বলিউড অভিনেতা আমির খান। রোমান্টিক-অ্যাকশন— সব রূপেই রুপালি পর্দায় হাজির হয়ে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিচিত্র চরিত্রে প্রমাণ করতে নিজেকে নানাভাবে ভেঙেছেন আমির।
১৯৬৫ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন বোম্বেতে (মুম্বাই) তাহির হোসেন-জিনাত হোসেন দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেন আমির খান। শুক্রবার (১৪ মার্চ) ষাট পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দিতে যাচ্ছেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। চলুন জেনে নিই আমির খানের চমকপ্রদ সাত তথ্য—
বাবা-মায়ের অবাধ্য আচরণ
বলিউড অভিনেতা আমির খান অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ুক, তা চাননি তার বাবা-মা। বরং বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ এই অঙ্গনের অস্থিরতার ব্যাপারটি তারা খুব ভালোভাবেই জানতেন। আমির খানের বাবা তাহির হোসেনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল। ব্যবসায়ীকভাবে লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় আমিরের পরিবারে। যার কারণে আমিরের বাবা-মা চাইতেন, ছেলে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হোক। তাদের আপত্তির পরও অভিনয়ে পা রাখেন আমির খান।
আরো পড়ুন:
গৌরির সঙ্গে প্রেম, স্বীকার করলেন আমির
২০ বছর ধরে অভিনেতা হিসেবে পারিশ্রমিক নিই না: আমির খান
খুদে তারকা
মাত্র ৭ বছর বয়সে ‘ইয়াদো কি বারাত’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন আমির খান। এটি পরিচালনা করেন তার চাচা নাসির হোসেন। কিশোর বয়সে ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি নীরব চলচ্চিত্র ‘প্যারানোয়া’-তে অভিনয় করেন আমির। সিনেমাটিতে অভিনয়ের পরই অভিনয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে বেশি আগ্রহী হন। তারপর থিয়েটারে যোগ দেন।
আমির কেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট
আমির খানকে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ বলা হয়। কারণ প্রতিটি চরিত্র নির্ভুলভাবে রূপায়নের চেষ্টা করেন; যা তার সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির বর্হিপ্রকাশ। চিত্রনাট্যের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেন। প্রতিটি বিবরণ নিখুঁতভাবে সম্পাদনা করেন। ‘দঙ্গল’ সিনেমার চরিত্রের জন্য আমির খান শারীরিকভাবে ব্যাপক রূপান্তর ঘটান। মাত্র পাঁচ মাসে ২৮ কেজি ওজন বৃদ্ধি করেন; শুটিংয়ের পর পাঁচ মাসে এই ওজন ঝরিয়ে ফেলেন তিনি। পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি ভারি দৃশ্যের জন্য ‘বডি স্যুট’ ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন আমির খান। ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমায় চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে শুটিং সেটে ভদকা পান করেছিলেন তিনি।
টেনিস চ্যাম্পিয়ন আমির
খেলাধুলার প্রতি দারুণ আগ্রহ আমির খানের। বিশেষ করে টেনিসের প্রতি আগ্রহটা অতিমাত্রায়। কারণ আমির খান স্টেট লেভেলে টেনিস চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। খেলাধুলার প্রতি তার এই আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই; যা তার শিক্ষাজীবনকে ছাপিয়ে যায়। ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার টেনিস লিগের সময়ে সুইস টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন, যা খেলাধুলার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করে।
বিদেশে কোনো সম্পদ নেই
ভারতের জনপ্রিয় অনেক তারকা বিদেশে বাড়ি কিনেছেন। এ বাবদ শত শত কোটি রুপি ব্যয় করেছেন তারা। তবে নিজ দেশ ছাড়া বিদেশে বাড়ি বা কোনো সম্পদ নেই আমির খানের। বরং মুম্বাইয়ে তার তিনটি বাড়ি রয়েছে।
গোসলে আগ্রহ নেই
পারকফেশনিস্ট হলেও এটাই সত্যি যে, আমির খান গোসল করতে চান না। করন জোহর সঞ্চালিত ‘কফি উইথ করন’ অনুষ্ঠানে আমির খানের প্রাক্তন স্ত্রী কিরণ রাও জানান, গোসল করতে পছন্দ করেন না আমির খান। বরং কয়েক দিন গোসল না করে কাটাতেই ভালোবাসেন। তবে তার খাবার খাওয়ার ব্যধি রয়েছে।
দিনে ১০০টি পান খেতেন আমির
আমির খানের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সিনেমা ‘পিকে’। সিনেমাটিতে নিজের চরিত্র সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে প্রচুর পরিমাণে পান খান আমির। প্রতিটি দৃশ্যের শুটিংয়ের আগে ১০-১৫টি পান খেতেন তিনি। এভাবে প্রতিদিন ১০০টি করে পান খেয়েছেন আমির; যার ফলে তার ঠোঁটে দাগ পড়ে গিয়েছিল।
তথ্যসূত্র: ফিল্মফেয়ার
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র খ ন আম র খ ন র ন আম র খ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
চিনি আর লবণ– দুটিই সাদা ও ঝকঝকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক হলেও তাদের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সরল অথচ গভীর সত্যটি আমাদের চারপাশের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আজ যখন মানুষ শুভাকাঙ্ক্ষীর মুখোশ পরে এগিয়ে আসে, আমরা বুঝতে পারি না– কে চিনি, কে লবণ। এই বিভ্রমের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। তার ফলে সমাজে জন্ম নিচ্ছে ভাঙন, ক্ষয় ও ব্যথার করুণ কাব্য।
শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে প্রতারণার ছায়া আজ সমাজের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও বন্ধুত্বের আবরণে, কখনও আত্মীয়তার মোড়কে, আবার কখনও নির্ভরতার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের বারবার আহত করে। রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন বা পারিবারিক জীবন– বিশ্বাসের অবক্ষয়ের নির্মম চিত্র আজ সর্বত্র বিদ্যমান। সবচেয়ে আপন বলে যার হাত ধরেছি, সেই হাত কখন যে ছুরি হয়ে ফিরে আসে– বলা দুষ্কর।
সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। বৃদ্ধ মা তাঁর তিন সন্তানকে অকুণ্ঠ বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি লিখে দেন। সন্তানরা কথা দিয়েছিল– শেষ দিন পর্যন্ত মায়ের পাশে থাকবে। কিন্তু দলিলের কালি শুকানোর আগেই মাকে উঠিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মায়ের চোখের জল তখন ছিল মূল্যহীন; সম্পদের নেশাই ছিল মূল।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ‘বিশ্বস্ত’ বন্ধু ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়েছে রাতের অন্ধকারে। এসব গল্প আজ প্রতিটি নগর-পল্লীর অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পর্কের পবিত্রতা আজ যেন লোভ ও মুনাফার কাছে নতজানু।
বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা কোনো দাগের মতো নয়, যা সময়ের সঙ্গে মুছে যায়। বরং এটি মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একজনের আঘাত শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে সমাজজুড়ে। গড়ে ওঠে এক অবিশ্বাসের দেয়াল, যেখানে একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সম্পর্কের উষ্ণতা ক্রমে ঠান্ডা হতে হতে বরফে পরিণত হয়, যা গলাতে লাগে যুগের পর যুগ।
ভোগবাদী সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে আত্মকেন্দ্রিক। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার সংকট এবং তাৎক্ষণিক লাভের মোহে সম্পর্কও আজ মুনাফার মাপে মাপা হয়। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, প্রেম– সবকিছু যেন পরিণত হয়েছে একেকটি চুক্তিতে। ‘কে কতটা কাজে লাগবে’– এই প্রশ্নই আজ সম্পর্কের মানদণ্ড। তবে সব আলো নিভে যায়নি। অন্ধকার যত গভীর হোক, এক টুকরো মোমবাতি গোটা ঘর আলোকিত করতে পারে। এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হতে হবে। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের তাড়নায় নয়, বিবেকের আলোয় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হবে। শিশুর মনে শৈশব থেকেই সততা, বিশ্বস্ততা ও মানবিকতার বীজ বপন করতে হবে। পরিবারই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল কেন্দ্র। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা পায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তবু এই অন্ধকারে কিছু আলোকবর্তিকা রয়েছেন, যারা এখনও বিশ্বাসের মানদণ্ডে অবিচল। যাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের কল্যাণে নিবেদিত। সংকটে পাশে দাঁড়ানো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বিলানো– এটাই তাদের ধর্ম। এরা প্রমাণ করে– বিশ্বাস এখনও বিলুপ্ত হয়নি পুরোপুরি। শুধু খুঁজে নিতে জানতে হবে।
পরিশেষে, চিনি ও লবণের বাহ্যিক সাদার ভ্রম নয়, আসল স্বাদ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করাই আজ সময়ের দাবি। মানুষকে তার কার্যকলাপের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে; বাহ্যিক মোহের ফাঁদে পা না দিয়ে। অন্ধবিশ্বাস নয়– সচেতন, বিবেকবান বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে তুলতে হবে সম্পর্কের ভিত।
মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়